একশো তো দূর অস্ত, হাজার, লাখও নয়, সোজা কোটি, আবার কোটিতে টাকার অঙ্কটা ১৭০! নগদ ১৭০ কোটি টাকা একসঙ্গে চোখে দেখেছেন কেউ কখনো? এতেই শেষ নয়, কোটি কোটি টাকার সঙ্গে ১০৫ কেজিরও বেশি সোনা! চক্ষু চড়কগাছ হওয়ারই কথা বটে। ঘটনাস্থল তামিল নাড়ু, ১৭০ কোটি টাকা এবং বিপুল সোনার মালিক সে রাজ্যের এক হাইপ্রোফাইল সড়ক নির্মাণকারী। ধনকুবেরের নাম নাগরাজন সেইয়াদুরাই, যিনি এসপিকে অ্যান্ড কোং নামের একটি সংস্থার প্রোমোটার। তামিল নাড়ুর রাস্তা, হাইওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের কাজ করে ওই সংস্থা।
না, এত সম্পত্তি তিনি শেষ পর্যন্ত সবার চোখের আড়াল করে রাখতে পারেননি। বিশেষত আয়কর কর্তাদের চোখকে ফাঁকি দিতে পারেননি। সোমবার ওই নির্মাণকারীর বিভিন্ন সম্পত্তিতে হানা দিয়ে টাকা এবং সোনা বাজেয়াপ্ত করেছেন আয়কর কর্তারা। সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, চলতি সপ্তাহের সোমবার থেকে শুরু হয়েছিল তল্লাশি অভিযান, যা মঙ্গলবার সারাদিন চলে। গতকাল কমপক্ষে ২০টি জায়গায় তল্লাশি চালায় আয়কর দফতর।
আয়কর দফতরের তরফে এদিন বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, যে বেশ কিছু নথি এবং হার্ড ডিস্কও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। নাগরাজন তাঁর বাড়িতে ২৪ লক্ষ টাকা রেখেছিলেন। বাকি টাকা ও সোনা তাঁর কর্মী ও সহযোগীদের সাহায্যে আরও ১০টি জায়গায় রেখেছিলেন বলে আয়কর দফতরের তরফে জানানো হয়েছে। নাগরাজনের সম্পত্তির মধ্যে দুটি বিএমডব্লিউ গাড়িও রয়েছে বলে জানানো হয়েছে দফতরের পক্ষ থেকে।
এ প্রসঙ্গে এক আয়কর কর্তা জানান, রাজ্যের সচিবালয়ে নাগরাজনের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। এমনকি রাজনৈতিক মহলে ওই নির্মাণকারীর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। আয়কর দফতরের ওই আধিকারিক বলেন, "কমপক্ষে তিনজন মন্ত্রীর সঙ্গে নাগরাজন নিয়মিত দেখা করতেন। রাজ্যের এক প্রথম সারির রাজনীতিকের ছেলের খুব ঘনিষ্ঠ তিনি। নির্মাণকাজে ওই রাজনীতিকের ছেলের উৎসাহ রয়েছে।" এই ঘটনায় ওই ব্যক্তিদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে আয়কর দফতর সূত্রে জানা গিয়েছেয। তল্লাশি অভিযানে বাজেয়াপ্ত হওয়া পেন ড্রাইভ এবং হার্ড ডিস্কও অবশ্যই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন, ভাঙড়ের রাস্তায় কোটি টাকা! নোট কুড়োতে হুড়োহুড়ি
হাইওয়ে পোর্টফোলিওর তত্ত্বাবধানে রয়েছেন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে. পলানিস্বামী। রাজ্যের এক মন্ত্রী ডি. জয়কুমার বলেন, কর ফাঁকি দেওয়ার দরুণই ওই কন্ট্রাক্টরের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। জয়ললিতার রাজত্বকাল ও ডিএমকের আমলেও রাজ্যে প্রকল্পের কাজ নাগরাজন নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন ওই মন্ত্রী। এছাড়া সরকারের সঙ্গে ওই কন্ট্রাক্টরের কোনও যোগ নেই বলে দাবি করেছেন ওই মন্ত্রী। তিনি বলেন, "এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গে এ ঘটনার যোগসূত্র স্থাপন করার চেষ্টা হচ্ছে।"