Bengal Tea Workers Strike: শিলিগুড়ি: চা বাগান শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নিয়ে বৈঠক ভেস্তে যাওয়ায় ৩ দিনে চা শিল্পে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে জয়েন্ট ফোরাম।এক্ষেত্রে পাহাড়কে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে পাহাড়ে বন্ধ না হলেও পাহাড়ি প্যাকেটজাত চা বাইরে যেতে দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন জয়েন্ট ফোরামের কর্মকর্তারা। দাবি পূরণে একদফায় উত্তরবঙ্গের মিনি সচিবালয় উত্তরকন্যায় ধরনাও দিয়েছে জয়েন্ট ফোরাম। গত দুদিনে একাধিকবার বৈঠক, উত্তরকন্যা অভিযানও হয়েছে। কিন্তু এখনও মজুরি সমস্যার সমাধান অধরাই রয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আগামী ২০ তারিখ কলকাতায় ফের বৈঠকের ডাক দিয়েছে শ্রমদপ্তর।

শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি স্থির করা নিয়ে ২০১৫ সাল থেকেই কমিটি গঠন করে বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছেন শ্রমকর্তারা। একাধিকবার বৈঠক হলেও গত তিন বছরে এই চুক্তি সই হয়নি। বিষয়টি নিয়ে গত সোমবার ফের মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষকে উত্তরকন্যায় বৈঠকে বসে শ্রমদপ্তর। শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি এইদিনের বৈঠকেই ন্যূনতম মজুরি চুক্তি সই হবে বলে স্থির হয়েছিল।
কিন্তু শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক উপস্থিত না থাকায় দপ্তরের প্রধান সচিব এস সুরেশ কুমার ও শ্রম কমিশনার জাভেদ আখতার নেতৃত্ব দেন। বৈঠকের শুরুতে ১৭২ টাকা নতুন মজুরি খসড়া প্রকাশ করেন শ্রম দপ্তরের আধিকারিকরা। সেই খসড়া দেখেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন শ্রমিক নেতারা। ১৭২ টাকার বদলে ২৩৯ টাকা ন্যূনতম মজুরির দাবি জানান তারা। কিন্তু শ্রমকর্তারা জানিয়ে দেন এখানে বসে এই দাবি মানা সম্ভব নয়। কলকাতায় বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। শ্রমকর্তারা আচমকাই বৈঠক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর উত্তরকন্যায় অবস্থান শুরু করে জয়েন্ট ফোরাম। রাত ১০ টা পর্যন্ত বিক্ষোভ চলার পর শ্রমকমিশনার এসে মঙ্গলবার ফের বৈঠকের কথা জানালে উঠে যায়। কিন্তু মঙ্গলবার বৈঠক হলেও ন্যূনতম মজুরি নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি রাজ্য সরকার। এরপরই জয়েন্ট ফোরামের তরফ থেকে চা শিল্পে ৩ দিনের ধর্মঘট ডাকা হয়।

West Bengal Tea Estate Worker Strike
যদিও মালিকপক্ষের দাবি ফোরামের ডাকা বনধে তেমন ভাবে সাড়া পড়েনি। চা মালিকদের একটি সংগঠনের দাবি ৬৫ শতাংশ বাগানে বনধের কোনও প্রভাব পড়েনি। ১০ শতাংশ বাগানে বন্ধের আংশিক সাড়া পড়েছে। অপর একটি সংগঠনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আলিপুরদুয়ার জলপাইগুড়ি জেলা মিলে মোট ৮৩টি বাগানের মধ্যে ৩২ টি বাগান সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। ৩৯টি বাগানে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। ১১ টি বাগানে আংশিক কাজকর্ম হয়েছে।
ওই সংগঠনের রিপোর্ট অনুযায়ী আলিপুরদুয়ার জেলায় একটি বাগানের মধ্যে ১১ টি বাগান পুরোপুরি ভাবে বন্ধ ছিল। ১৬টি বাগানে পুরোপুরি কাজ হয়েছে। ৩টি বাগানে আংশিক কাজ হয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলায় ৫২টি বাগানের মধ্যে ২৩ টি বাগান খোলা ছিল। ২১ টি সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। ৮টি বাগানে আংশিক কাজ হয়েছে। আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট, বীরপাড়া ব্লকের বাগানগুলির মধ্যে গোপালপুর, দলগাঁও, দলমোর, রামঝোরা বাগান কাজ হয়েছে। বন্ধ ছিল জয়শ্রী চা বাগান।

অন্যদিকে, জলপাইগুড়ি জেলার মাল ব্লকের নেপুচাপুর, বাতাবাড়ি ছাড়া সব বাগান মোটের উপর খোলা ছিল। যদিও দ্বিতীয় দিনে বনধে প্রভাব অনেকটা বেশি পড়েছিল বলে দাবি জয়েন্ট ফোরামের। তৃতীয় দিনেও একই রকম প্রভাব থাকবে বলে আশা করছেন তাঁরা।
টি অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (টাই)-এর মতে এই তিন দিনে চা শিল্পে প্রায় ৪০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য বলেন, “যখন ন্যূনতম মজুরি নিয়ে গঠিত কমিটিতে আলোচনা চলছে তখন চা শিল্পে ধর্মঘট অনেক বড় ক্ষতি করে দিল। শুধু ৪০ কোটি টাকার ক্ষতি নয়, ধর্মঘটের ফলে বাগান গুলিতে কাঁচা পাতা তোলার বাউল পিছিয়ে গেল। এই পাতা থেকে ভাল মানে চা পাওয়া সম্ভব নয়। এটা এক ধরনের ক্ষতি। আমরা রাজ্য সরকারের কাছে বিষয়টি জানিয়েছি।” ফোরামের শ্রমিক নেতা তথা আইএনটিইউসি নেতা অলীক চক্রবর্তীর মতে, “শ্রমিকদের ভালোর জন্যই এই ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।”
রাজ্যে শ্রম কমিশনার জাভেদ আখতার বলেছেন, “সব দিক খতিয়ে দেখেই মজুরি ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু শ্রমিকপক্ষ অন্য দাবি রাখে। তাঁদের জানানো হয়েছে ২০ তারিখ কলকাতায় ফের বৈঠক হবে।”