দুরারোগ্য এন্ড স্টেজ ক্রনিক লিভার ডিজিসে আক্রান্ত এক বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক। তাঁর সুস্থতার জন্য এক হয়ে প্রার্থনা করছেন সব সম্প্রদায়ের মানুষ। চাঁদা তুলছে পড়ুয়ারা। সম্প্রীতির এই অন্যান্য ছবি ধরা পড়েছে ভাঙড়ের কাশীপুরে।
৪৩ বছরের পলাশ গঙ্গোপাধ্যায়ের লিভার সম্পূর্ণ অকেজো। অসুস্থ স্বামীকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছেন শিক্ষকের স্ত্রী। নিজের লিভারের একাংশ দিতে প্রস্তুত তিনি। কিন্তু শুধু তাঁর ইচ্ছাই যথেষ্ট নয়। সেজন্য প্রায় বিশ লক্ষ টাকা লাগবে কেবল অপারেশন বাবদেই। নিজের ভিটে বাড়ির জমি বিক্রি করে কিছুটা অর্থের উপায় হয়েছে। বাকিটার জন্য সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে সাহায্যের আবেদন করছেন স্কুল পড়ুয়ারা।
শিক্ষকের আরোগ্য কামনা করে মন্দির-মসজিদে প্রার্থনা করছেন কাশীপুরের বাসিন্দারা। শান্ত, নিরীহ, নিপাট ভদ্রলোক বলে পরিচিত পলাশ অবশ্য নিজের অসুখ নিয়ে হতাশ নন। বলছেন, ‘‘একজন মানুষ অসুস্থ হলেই বোঝা যায় তাঁকে অন্যরা কতটা ভালবাসেন। নিজের স্ত্রী, ছেলে, বৃদ্ধ বাবা ছাড়াও আমজনতা যে ভাবে আমার জন্য উদ্বিগ্ন আমার মঙ্গলকামনা করছেন তাতে আমি অভিভূত। বাকিটা ঈশ্বরের হাতে।‘’
পলাশ গঙ্গোপাধ্যায় স্থানীয় কাশীপুর কিশোর ভারতী বিদ্যালয়ের প্রাথমিক বিভাগের শিক্ষাধ্যক্ষ। গত সাত বছর ধরে লিভারের সমস্যায় জর্জরিত পলাশ। এসএসকেএম হাসপাতালে দীর্ঘদিন ভর্তি ছিলেন তিনি। সোনারপুরের লিভার ফাউন্ডেশনে ডাঃ অভিজিৎ চৌধুরীর তত্ত্বাবধানেও চিকিৎসা হয়েছে। সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে আট বার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কখনো সাময়িক সুস্থ আবার কখনো সম্পূর্ণ অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত দিল্লির ম্যাক্স সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ডাঃ সুভাষ গুপ্তার তত্ত্বাবধানে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে অপারেশনের কথা হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, দুরারোগ্য ‘এন্ড স্টেজ ক্রনিক লিভার ডিজিস (নন অ্যালকোহলিক)' রোগে আক্রান্ত তিনি। পাশাপাশি দুটি বেডে অপারেশান হবে পলাশ ও তাঁর স্ত্রী শুক্লার। শুক্লার লিভারের কিছুটা অংশ পলাশের লিভারে প্রতিস্থাপন করা হবে। পলাশের স্ত্রী শুক্লা জানালেন, ‘‘আমার সঙ্গে পলাশের সব কিছু এত ভাল ম্যাচ করেছে যে ডাক্তারবাবুরা অবাক হয়ে গেছেন। তবে এতবড় অপারেশনের পর উনি কেমন থাকবেন আর এত খরচা কী ভাবে জোগাড় করব তা ভেবে কোন কূল কিনারা পাচ্ছি না আমরা।‘’
কিশোর ভারতীর সম্পাদক অরূপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কাশীপুর কিশোর ভারতীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পলাশ বাবু। স্কুলের জন্য ওঁর অনুদান ভোলার নয়। আজ ও বড় অসহায়। তাই ছেলে মেয়ে-অভিভাবক সবাইকে বলেছি সাধ্যমত সাহায্য করার জন্য।‘’ আইনজীবী অভীক সাহা বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের প্রার্থনা আর আর্থিক সাহায্য ছাড়া পলাশকে ফিরিয়ে আনা শক্ত ব্যপার। সবাইকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানাই।‘‘
স্থানীয় ক্লাবের সম্পাদক নাজিব মোল্লা বলেন, ‘‘পলাশদার অপারেশন এর টাকা জোগাড় করতে সর্বস্তরে সাহায্যের জন্য আমরা আবেদন করছি।‘’