করোনা কালে হটাত করে লকডাউনে আটকে পড়েছিলেন ছেলে। সেই ছেলেকে বাড়ি ফেরাতে দীর্ঘ ১৪০০ কিলোমিটার পথ স্কুটি নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন মা। রাজিয়া বেগম অন্ধ্র প্রদেশে এক বন্ধুর বাড়িতে আটকে পড়া ছেলেকে ফিরিয়ে এনে সংবাদ শিরোনামে এসেছিলেন। আবারও তিনি এসেছেন সংবাদ শিরোনামে।
কারণ যে ছেলেকে উদ্ধার করতে তিনি সবকিছুকে সরিয়ে এতটা পথ পাড়ি দিয়েছিলেন, সেই ছেলে এখন ইউক্রেনে। গিয়েছিলেন ডাক্তারি পড়তে। হটাত করে রাশিয়ার আক্রমণের মুখে পড়ে ইউক্রেন। অন্যান্য সকল ভারতীয় পড়ুয়ার সঙ্গে বছর একুশের মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন আমানও আটকে রয়েছেন। আমান সুমি স্টেট ইউনিভার্সিটির এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ছাত্র।
হোস্টেলের বেসমেন্টের মধ্যে ৮০০ পড়ুয়ার সঙ্গে আটকে রয়েছেন আমানও। নেই জল, নেই খাবার সে এক দুরহ অবস্থা। তবে রাজিয়া বেগম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, 'আমার ছেলে খুব সাহসী। ও আমাকে টিভিতে যুদ্ধ সংক্রান্ত খবর দেখাতে বারণ করেছে কারণ এতে আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়ব'। আমান মাকে জানিয়েছে, 'চিন্তা করোনা। সময় বুঝেই তোমাকে ফোন করব'। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে মাত্র একটা মিনিট ছেলের সঙ্গে একটা বার কথা বলবেন বলে অপেক্ষায় রয়েছেন মা।
রাজিয়া বলেন, 'প্রতিবার যখন ভিডিও কল হাসে, ছেলের মুখে একগাল হাসি। আর বলে ভয় কিসের, ভগবানের ওপর ভরসা রাখো'। তেলেঙ্গানার বোধনের সালম্পাদ গ্রাম থেকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া ফোনে এক সাক্ষাতকারে রাজিয়া বলেন, 'আমি আমার ফোন সবসময় চেক করতে থাকি, কখন ও অনলাইন হয়….! আমি তো আর ইউক্রেনে গিয়ে ওকে নিয়ে আসতে পারবো না'! আক্ষেপ রাজিয়ার! আপাতত রাজিয়ার ভরসা রাজ্যসরকার। ইতিমধ্যে তিনি রাজ্যসরকারের কাছে ছেলেকে ফিরিয়ে আনার আবেদনও জানিয়েছেন। সরকারের তরফে মিলেছে আশ্বাসও।
রাজিয়া বলেছেন, 'শুক্রবার গভীর রাতে এবং শনিবার সকালে কথা হয়েছে আমানের সঙ্গে। ও আমাকে বলে পরিস্থিতি খুবই খারাপ, বাইরে গোলাগুলি চলেছে। এখানে জল নেই খাবার নেই। তাও ও আমাকে চিন্তা করতে বারণ করেছে। বলেছে ভয় না পেতে'। শনিবার দুপুরে সুমি স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে এক ছাত্রকে বলতে শোনা গিয়েছে তাদের ধৈর্য্য শেষ হয়ে গেছে, প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে এবার হাঁটা শুরু করবে তারা। সেপ্রসঙ্গে রাজিয়া বলেছেন “ ছেলের কাছ থেকে এমন কোন খবর পাই নি। একজন মা হিসাবে আমি শুধু আমার সন্তানের জন্য প্রার্থনা করতে পারি”।
কেন বিদেশে ডাক্তারি পড়াতে ছেলেকে পাঠালেন? উত্তরে রাজিয়া বলেন, 'গত বছর এক আত্মীয়’র পরামর্শে ওকে ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়তে পাঠাই। কারণ ও মেডিকেল নিয়ে পড়তে চেয়েছিল। ভারতে মেডিকেল কোর্সের খরচ আমার পক্ষে বহন করা সম্ভব ছিল না। আমাদের দেশের শ’য়ে শ’য়ে পড়ুয়া ওদেশে পড়তে যায়, ভেবেছিলাম এটা ওর জন্য ভাল সুযোগ’! এখন কেবল ও’র ফিরে আসার অপেক্ষায় দিন গুনছি’। জানালেন রাজিয়া।