Advertisment

‘প্রচণ্ড স্রোত, চারিদিকে হাহাকার-কান্না', বেঁচে আছি এটাই বড় কথা!

নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরলেন কলকাতার মৃণাল দত্ত। এখন পর্যন্ত মৃত ১৭

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
amarnath cloudburst, amarnath floods, amarnath cloudburst breaking, amarnath cloudburst flash flood, amarnath cloudburst updates, amarnath pilgrims updates, amarnath rescue operation updates, jammu and kashmir, indian express" />

গত বছরের জুলাইয়েও ঠিক একই জায়গায় হড়পা বান আছড়ে পড়েছিল।

জম্মু ও কাশ্মীরের গান্দেরওয়াল জেলায় হড়পা বানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ১৭। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার নাগাদ হড়পা বানে ক্ষতিগ্রস্তরা অমরনাথ মন্দিরের কাছে শিবিরে ছিলেন। আকস্মিক বন্যায় শিবিরের ওই অংশটি ভেসে গিয়েছে। উদ্ধার অভিযান তদারকি করতে শনিবার ভোরে অমরনাথ পবিত্র গুহায় পৌঁছেছেন আইজিপি কাশ্মীর এবং কাশ্মীরের বিভাগীয় কমিশনার। একটি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার উদ্ধারে কাজে লাগানো হচ্ছে। খবর অনুসারে জানা গিয়েছে অন্তত ১৫ হাজার তীর্থযাত্রী, যাঁরা অমরনাথ পবিত্র গুহার কাছে আটকা পড়েছিল, তাদের অপেক্ষাকৃত নীচে পাঞ্জতারনির বেস ক্যাম্পে স্থানান্তরিত করা হয়। “কোন যাত্রীকে ট্র্যাকে রাখা হয়নি”, ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত পুলিশের (আইটিবিপি) মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা পিটিআই।

Advertisment

বর্তমান অবস্থার জেরে অমরনাথ যাত্রা সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে। আইটিবিপির মুখপাত্র বিবেক কুমার পাণ্ডে এএনআইকে জানিয়েছেন যে, প্রায় ৩০-৪০ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। সেদিনের হড়পা বানের কবলে পড়েছিলেন দিল্লির ৬৪ বছর বয়সী অমরনাথ তীর্থযাত্রী শিব রোশনি।

তিনি বলেন “তীব্র স্রোত আর চারিদিকে শুধুই তখন হাহাকার। বাঁচার আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলাম, সবটাই ভাগ্যের ওপর ছেড়ে চোখ বন্ধ করে এক জায়গায় বসে ছিলাম”। সংবাদ সংস্থার সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেন “সেদিনের ঘটনা মনে করলে এখনও হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। বেঁচে থাকব এমন কোনও আশা ছিল না। রাতেই কয়েকজন পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে। হেলিকপ্টার করে আমাদের নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেওয়া হয়”।

শনিবারই উদ্ধারকার্যের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকরা জানিয়েছেন এখনও পর্যন্ত ১৭ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে ৪৪ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। পাশাপাশি প্রায় ৩৫ জন তীর্থযাত্রী এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। জম্মু-কাশ্মীরের স্বাস্থ্য সচিব সানডে এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন “বালতালে বেস হাসপাতালে ৩৮ জন আহত অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন ছয়জনকে শ্রীনগরের পাঠানো হয়েছে। সকলেই আপাতত স্থিতিশীল রয়েছেন। উদ্ধারাভিযান চলছে”।

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে, সিআরপিএফের ডিরেক্টর কুলদীপ সিং বলেছেন “ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়া দুই তীর্থযাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে”। শিব রোশনি বলেন, , তিনি, তার ছোট ছেলে এবং দুই প্রতিবেশী ৭ জুলাই পাহলগাম থেকে তাদের যাত্রা শুরু করেছিলেন। তারা গুহা মন্দিরের কাছে পৌঁছে ক্লান্ত হয়ে একটি তাঁবুতে বিশ্রাম নিতে সবেমাত্র ঢোকেন। তখনই হড়পা বানে গোটা তাঁবুটাই ভেসে যায়”। সঙ্গে থাকা প্রতিবেশীরাও নিরাপদে রয়েছেন। জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ শনিবার এই ঘটনার উচ্চপর্যায়ের তদন্ত দাবি করেছেন।

ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়ার তালিকায় রয়েছেন কলকাতার মৃনাল দত্ত সহ আরও তিনজন। মৃণাল বাবু জানান, “আমরা প্রথমে বুঝতেই পারিনি ঠিক কী হতে চলেছে। পরক্ষণেই দেখি জলের স্রোতে একের পর এক তাঁবু ভেসে যাচ্ছে। চারিদিকে কান্না হাহাকার, আর জলের গর্জন। জল যেন আমাদের গ্রাস করতে আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে”।

শনিবার সন্ধ্যায় এক সাংবাদিকের ফোন থেকে বাড়িতে ফোন করে নিজের বেঁচে থাকার খবর জানান, মৃণাল বাবু। তিনি বলেন, বাড়ির লোক প্রচণ্ড উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিল। এই দু’দিন চিন্তার তারা দুচোখের পাতা এক করতে পারেনি”।

স্থানীয় বাসিন্দা রিয়াজ আহমেদ বলেন, “ দীর্ঘ ভ্রমণের পরে, বেশিরভাগ তীর্থযাত্রীরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। বাইরে তখন প্রবল বৃষ্টি। অনেকে তাঁবুর ভিতর ঘুমিয়েও পড়েছিলেন। হঠাৎ করে জলের স্রোত বাড়তে থাকে। আমরা চিৎকার করে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলি। কিন্তু সকলেই এতটাই ক্লান্ত ছিল পালানোর সময়টুকু পায়নি তারা”।

জম্মু-কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা উদ্ধার কার্য নিয়ে এদিনও এক  উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন যাতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিমান বাহিনী এবং বেসামরিক প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সিনহা যাত্রীদের ক্যাম্পে থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন,  “প্রশাসনের তরফে তীর্থযাত্রীদের জন্য সব রকমের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যাত্রা পুনরায় চালু করার চেষ্টা চালাচ্ছি”।

amarnath yatra Cloudbursts
Advertisment