পুঞ্চে জঙ্গি হামলা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ককে আরও একবার প্রভাবিত করতে পারে? পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির সফরেও কী জঙ্গি হামলার ঘটনার প্রভাব ফেলতে পারে? যদিও গোয়ায় এসসিও বৈঠকের এখনও দুই সপ্তাহ বাকি, বৃহস্পতিবার জম্মু ও কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা সেই নিয়েই এক বিরাট প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে। জম্মু ও কাশ্মিরে বারবার পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক বারে বারে তলাতিতে ঠেকেছে।
পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি ভারতে আসছেন। আগামী মে মাসের ৪ ও ৫ তারিখ গোয়ায় আসবেন। বিলাওয়াল যোগ দেবেন সাংহাই কোঅপারেশন অর্গনাইজেশনের (এসসিও) বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকে। পাক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন সেদেশের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাওয়াল। বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মুমতাজ বালোচ এই ঘোষণা করেছেন।
ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে সেদেশের বিদেশমন্ত্রীর এদেশে আসার বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। হিনা রব্বানি খার ছিলেন শেষ পাক বিদেশমন্ত্রী যিনি ২০১১ সালের জুলাই মাসে ভারতে এসেছিলেন। এছাড়া ২০১৪ সালের পর এই প্রথম উচ্চপদস্থ কোনও পাকিস্তানি নেতা ভারতে পা রাখতে চলেছেন। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী পদে নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্রহণের সময় ভারতে এসেছিলেন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রভাব এর আগেও স্পষ্ট হয়েছে। ২৬/ ১১ মুম্বাই হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পরিকল্পিত শান্তি আলোচনা স্থগিত হয়ে যায়, সেই হামলায় অন্তত ১৭৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। পাকিস্তান ভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা সেই হামলার দায় নিয়েছে।
পুঞ্চ হামলার মাত্র কয়েক দিন আগে, গোয়েন্দা সূত্রে বলা হয় পাকিস্তান জম্মু ও কাশ্মীরে নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে গ্রেনেড হামলা চালাতে পারে। খুশির ঈদের আগে ও পরে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা হত্যালীলা চালাতে পারে। জি-২০ বৈঠকের আগে শ্রীনগরে হামলার পরিকল্পনা করছে একাধিক জঙ্গি সংগঠন। নিরাপত্তা বাহিনী, রাজনৈতিক কর্মী এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে থাকা জম্মু ও কাশ্মীরের বাইরের লোকেদের তারা টার্গেট করতে পারে। এমনটাই রিপোর্টে বলা হয়েছে।
গতকালের হামলার দায় স্বীকার করেছে জইশ-সমর্থিত জঙ্গি সংগঠন পিপলস অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট ফ্রন্ট (PAFF)। বৃহস্পতিবারের পুঞ্চ হামলার পর ফের ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের তিক্ততা বেড়ে যেতে পারে। এদিকে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি ৫ মে গোয়ায় ভারতের তরফে আয়োজিত SCO সম্মেলনে অংশ নেবেন এনিয়ে বিদেশ মন্ত্রকের (এমইএ) মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছেন "কোন একটি নির্দিষ্ট দেশের অংশগ্রহণের দিকে তাকানো সত্যিই উপযুক্ত হবে না।"
জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ২০১৯ সালের সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও তিক্ত হতে শুরু করে। পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের আত্মঘাতী হামলায় কমপক্ষে ৪০ জন সেনা জওয়ান নিহত হন। প্রতিশোধ হিসেবে ভারত বালাকোটে সন্ত্রাসবাদী ক্যাম্পে আন্তঃসীমান্ত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালায়।
ভারত সবসময়ই তার 'প্রতিবেশী ফার্স্ট পলিসি' মেনে পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাভাবিক প্রতিবেশী সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। ভারত স্পষ্ট করে বলেছে যে সন্ত্রাস ও হিংসা কোন ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। দু দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব পাকিস্তানেরও।
ভারত বারবার স্পষ্ট করেছে যে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোন বিষয়ে আপস করবে না দেশ এবং সতর্ক করেছে যে ভারতের নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে অক্ষুণ্ন রাখতে ভারত বদ্ধপরিকর।