জম্মু কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (পিডিপি) প্রধান মেহবুবা মুফতি শনিবার বলেন, কাশ্মীরের পুলওয়ামাতে সিআরপিএফ জওয়ানদের ওপর আত্মঘাতী সন্ত্রাসবাদী হামলার অজুহাতে যেন ওই রাজ্যের বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে "পাল্টা হামলা" চালানোর সুযোগ না পায় কিছু "দুরভিসন্ধি দ্বারা চালিত ব্যক্তি", বা ওই জওয়ানদের মর্মান্তিক মৃত্যু যেন কোনো "অশুভ কার্যকলাপকে ইন্ধন না যোগায়"।
অন্যদিকে, শনিবার দেশের সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের উদ্দেশ্যে জারি করা এক নির্দেশিকায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানায়, সংশ্লিষ্ট এলাকায় বসবাসকারী জম্মু কাশ্মীরের যে কোনো বাসিন্দার নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত করা হয়। এই নির্দেশিকা জারি হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই একটি সর্বদলীয় বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিং আশ্বাস দেন যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বসবাসকারী কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রী এবং অন্যান্য বাসিন্দাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। রাজনাথ সিংকে এই পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানান জম্মু কাশ্মীরের আরেক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাও।
Union home ministry issues advisory to States & UTs in wake of reports that students and other residents of Jammu and Kashmir in other parts experiencing threats and intimidation in wake of terrorist attack in #Pulwama. MHA asks States to ensure their security. @IndianExpress
— rahul tripathi (@rahultripathi) February 16, 2019
টুইটারে একটি পোস্টে মেহবুবা লেখেন, "আমি মানুষের দুঃখ এবং যন্ত্রণাটা বুঝতে পারছি। কিন্তু জম্মু কাশ্মীরের মানুষকে এই সুযোগে নিগ্রহ বা উত্যক্ত করতে দেওয়া আমাদের অনুচিত। অন্য কারোর কর্মের ফল তাঁরা কেন ভোগ করবেন? আমাদের ভয় বা আশঙ্কার সুবিধে যেন কেউ না নেয়, আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা উচিত।"
আরো পড়ুন: ওই ১৫ কিমি এলাকাতেই কেন হামলা? পুলওয়ামার ঘটনায় তদন্তে এনআইএ
পিডিপি সভাপতির বক্তব্যের নেপথ্যে রয়েছে জম্মুতে সন্ত্রাসবাদী ওই আক্রমণের প্রতিবাদে দুদিন ধরে চলতে থাকা ব্যাপক হিংসা, এবং দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে কাশ্মীরি ছাত্রদের বিরুদ্ধে হামলার খবর। অপর একটি টুইটে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, "এই দুঃখ এবং রাগের সময় আমাদের ভাগ করার চেষ্টা করা হবে। জাতি ধর্মের ভিত্তিতে একে অপরের প্রতি বিরুদ্ধভাব তৈরি করা হবে। হিন্দু বনাম মুসলমান। জম্মু বনাম কাশ্মীর। আমাদের যন্ত্রণা যেন এই ধরনের অশুভ কার্যকলাপকে ইন্ধন না যোগায়। তার কারণ, শেষমেশ কুড়ুল ভুলে গেলেও গাছ কোনোদিন ভোলে না।"
কাশ্মীর উপত্যকায় আজ পর্যন্ত দেখা সম্ভবত সবচেয়ে মারাত্মক একক জঙ্গী হানায় বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রাণ হারান কমপক্ষে ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ান। দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার এই ঘটনায় বিস্ফোরক বোঝাই একটি টাটা স্কর্পিও চালিয়ে সিআরপিএফ-এর বাসে ধাক্কা মারে এক সুইসাইড বম্বার। ঘটনার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গী সংগঠন জইশ-এ-মহম্মদ, এবং জানিয়েছে যে আত্মঘাতী ২০ বছর বয়সী ওই জঙ্গী পুলওয়ামা জেলারই বাসিন্দা, নাম আদিল আহমেদ দার।
আরো পড়ুন: জঙ্গী হানা নিয়ে টুইটের জেরে সাসপেন্ড কাশ্মীরি ছাত্র
এদিকে জম্মু শহরে শুক্রবারের পর শনিবারও কারফিউ জারি করা হয়, টহল দিতে থাকে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী।
শুক্রবার জম্মু চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ডাকা বনধ চলাকালীন শহর জুড়ে হিংসা ছড়িয়ে পড়ায় কারফিউ জারি করা হয়। প্রায় ৬০ টি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, এবং দুই যুযুধান গোষ্ঠীর ছোড়া পাথরের আঘাতে আহত হন ৪০ জনের বেশি। শহরের একাধিক বাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়, এবং হিংসার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গুজ্জর নগর ও মহারাজা হরি সিং পার্ক এলাকা। পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠি চার্জ করে পুলিশ, এবং পরে কাঁদানে গ্যাসও ছোড়ে। গুজ্জর নগরে ফ্ল্যাগ মার্চ করে সেনাবাহিনী।