সন্তানকে বাঁচাতে মায়ের প্রাণপাত! ভয়ঙ্কর নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে সাত দিনের লড়াই শেষ। ভাইরাসকে হারিয়ে শেষমেশ সুস্থ ছেলে। মায়ের মুখে তৃপ্তির হাসি।
কেরলে ছড়িয়ে পড়া নিপা ভাইরাসের ভয়ঙ্কর থাবাকে পরাস্ত করে নতুন জীবন পেয়েছে ৯ বছরের এক কিশোর। নিপার কড়াল ছায়া থেকে বেরিয়ে আসা এক বিরল সাফল্যের গল্প সকলকে চমকে দিয়েছে। বেসরকারী হাসপাতালে লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে থাকা নয় বছর বয়সী ছেলেকে বাঁচাতে মরিয়া মা। ৩০ আগস্ট ভাইরাসে স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলের জীবন বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি।
'আপনি কি আমার ছেলেকে জীবিত ফিরিয়ে দেবেন না?' কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীনা জর্জের সঙ্গে একটি ভিডিও কলে কোঝিকোড়ের একটি গ্রামে কোয়ারেন্টাইনে থাকা এক মায়ের হতাশার কথা তুলে ধরেছিল।শুক্রবার, ছেলেটি ছেলেটির দেহে মেলেনি ভাইরাসের অস্তিত্ব। এক সপ্তাহ ভেন্টিলেটর সাপোর্টে থাকার পরে বেঁচে ফিরে আসার বিরল রেকর্ড গড়ে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত কিশোর। তার সুস্থ হয়ে ওঠা চিকিৎসা জগতের এক বিরল কৃতিত্ব রচনা করে।
ছেলেটির সঙ্গে তার কাকা এবং আরও ২ জন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কোঝিকোডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ভাইরাসকে হারিয়ে তারা সকলেই এখন সুস্থ। গত পাঁচ বছরে চতুর্থবারের মতো রাজ্যকে ভাইরাসের ছায়া থেকে বের করে এনেছে। চলতি বছর রাজ্যে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হন ৬ জন। যার মধ্যে মৃত্যু হয় ২ জনের।
কোঝিকোডের হাসপাতালে যেখানে ছেলেটির চিকিৎসা চলছিল শুক্রবার সকাল থেকে ছেলেকে একবার ছুঁয়ে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে হাসপাতালে অপেক্ষা করছিলেন মা।সংবাদ মাধ্যমের সামনে নিজের আবেগ চেপে রাখতে না পেরে তিনি বলেন, "আমি সবকিছু ঈশ্বরের উপর ছেড়ে দিয়েছিলাম, চিকিৎসকরা ছেলেকে বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টা করেছেন। আমার ছেলের জীবন ভিক্ষা চেয়ে ভিডিও কলে মন্ত্রীর সামনে কেঁদে ফেলেছিলাম। গত সপ্তাহে তাকে ভেন্টিলেটর থেকে সরিয়ে নেওয়ার পর হাসপাতালের চিকিৎসকরা আমাকে ভিডিও কলে ছেলের সঙ্গে কথা বলান। কথা শুনে বুঝতে পেরেছি ও ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে"।
গত দুই সপ্তাহ ধরে, যখন ছেলে কোঝিকোড হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর মাঝে লড়াই চালিয়েছে, মহিলা তার চার বছরের মেয়েকে নিয়ে তার গ্রামে কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। সেই দিনের কথা স্মরণ করে মহিলা জানিয়েছেন, “প্রতিদিন, স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী এবং পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ আমার দেখাশোনা করত যখন আমি কোয়ারেন্টাইনে ছিলাম। তারা আমার সব সময় আমার ও মেয়ের খেয়াল রাখত। চিকিৎসকরা আমাকে প্রতিদিন ফোন করেছিলেন, মানসিক ভাবে শক্তি জুগিয়েছেন"।
Aster MIMS ক্রিটিকাল কেয়ার এক্সপার্ট ডাঃ এ এস অনুপকুমার বলেছেন যে নিপায় আক্রান্ত ব্যক্তি ভেন্টিলেটরে থাকার পরে বেঁচে থাকা বিরল এক ঘটনা। “আমরা কোনো মেডিকেল জার্নালে এমন ঘটনা দেখিনি। চিকিৎসা জগতে এটা খুবই বিরল।”