NHRC at Bengal: রবীন্দ্রনাথের মাটিতে হাজার হাজার মানুষের উপর নৃশংস অত্যাচার, খুন এবং ধর্ষণের ঘটনা! ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্তে এসে এ ভাষাতেই সরকারের সমালোচনা করেছে জাতীয় মানবাধিকার। মঙ্গলবার কমিশন মুখবন্ধ খামে ৫০০ পাতার একটা রিপোর্ট হাইকোর্ট দাখিল করেছে। নবান্নের অনুরোধে সেই রিপোর্ট বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে আনা হয়। সেই খাম খুলতেই জমা পড়া নথির ছত্রে ছত্রে হিংসা নিয়ে রাজ্য সরকারের ভূমিকার সমালোচনা।
সেই রিপোর্টে ‘চিত্ত যেথা ভয় শূন্য’ উদ্ধৃত করে খুন, ধর্ষণ, অত্যাচার-সহ প্রতিটি ঘটনায় সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করে মামলা বাইরের রাজ্যে পাঠাতে সওয়াল করা হয়েছে। পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চের কাছে জমা পড়ে এই রিপোর্টে উল্লেখ, ‘শাসক দলের কর্মী-সমর্থকরা রাজ্যে যেভাবে হিংসার বাতাবরণ তৈরি করেছে, তাতে জনজীবন বিপর্যস্ত। হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকায় তার প্রভাব পড়েছে। শাসক দলের দুষ্কৃতীদের আতঙ্কে বহু মানুষ এখনও ঘর ছাড়া। যৌন অপরাধের শিকার হয়েছে বহু মানুষ, কিন্তু তাঁরা মুখ খুলতে পারছেন না ভয়ে।হিংসার ঘটনায় পুলিশ সরাসরি ভাবে যুক্ত না থাকলেও তাদের গাফিলতিতে অনেক ঘটনা ঘটেছে।’
এমনকি, এই ঘটনার জন্য শাসক দলের একাধিক বিধায়ককে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে ‘কুখ্যাত দুষ্কৃতীর তালিকায় জ্যোতিপ্রিয়, উদয়ন, শেখ সুফিয়ান।‘কুখ্যাত দুষ্কৃতী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে পার্থ ভৌমিক, শওকত মোল্লা, জীবন সাহা, খোকন দাসকেও।
কমিশনের উল্লেখ, ‘হিংসার ঘটনা নিয়ে রাজ্যের কোনও প্রশাসনিক কর্তা বা রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের মুখ খুলতে দেখা যায়নি। দিনের পর দিন সাধারণ মানুষের জীবনের অধিকার, বাক্স্বাধীনতার মতো মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলেও রাজ্য প্রশাসনকে এই বিষয়ে নিরুত্তাপ। বাংলায় যে হিংসার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার পিছনে রাজনীতি, আমলাতন্ত্র এবং অপরাধ জগতের আঁতাঁত রয়েছে। রাজ্যে আইনের শাসন নয়, শাসকের শাসন চলছে।’
ভোট পরবর্তী হিংসার প্রভাবে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা, নির্বাচনী বহুত্ববাদ এবং স্বছ নির্বাচনের মতো একাধিক গণতান্ত্রিক কাঠামো নড়ে গিয়েছে। এমনটাই রিপোর্টে উল্লেখ করেছে কমিশন। সেই রিপোর্টে সুপারিশ, ‘মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ফাস্টট্র্যাক আদালত গঠনের প্রয়োজন। স্বচ্ছ তদন্তের স্বার্থে সিট গঠন এবং মামলার সাক্ষীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি।‘ পাশাপাশি হিংসার ঘটনায় স্বর্বস্বান্তদের ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন এবং মহিলা সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আর্জি জানিয়েছে কমিশন।
কমিশনের ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’-র রিপোর্ট প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘রাজ্য প্রশাসনের বক্তব্য না শুনেই এই রিপোর্ট তৈরি করেছে কমিশন। আমাদের বিশ্বাস, রাজ্যকেও হলফনামা পেশ করার সুযোগ দেবে আদালত। আর রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতির দায়িত্বে তখন নির্বাচন কমিশন ছিল। আমি আর কিছু বলতে চাই না।‘
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন