প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২৮ মে, রবিবার দিল্লিতে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করতে চলেছেন। লোকসভার এক বিবৃতি গত সপ্তাহে বলেছে, 'নতুন সংসদ ভবনের নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছে এবং নতুন ভবনটি আত্মনির্ভর ভারতের (আত্মনির্ভর ভারত) চেতনার প্রতীক।' প্রধানমন্ত্রী মোদী ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর ভবনটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। এর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০২১ সালের জানুয়ারিতে। আহমেদাবাদের এইচসিপি ডিজাইন, প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে স্থপতি বিমল প্যাটেল নতুন সংসদ ভবনের নকশা তৈরি করেছেন। বর্তমান সংসদ ভবনের পাশেই তৈরি হয়েছে নতুন ভবনটি। বানিয়েছে টাটা প্রজেক্টস লিমিটেড।
উদ্বোধনের দিন ক্রমশ এগিয়ে আসছে, চলুন বর্তমান বিল্ডিং আর নতুনটির মধ্যে মূল পার্থক্যগুলি একবার দেখে নেওয়া যাক:
আরও বেশি সংসদ বসতে পারবেন
বর্তমান সংসদ ভবনের পাশে তৈরি হয়েছে নতুন ভবনটি। বর্তমান সংসদ ভবনের লোকসভায় ৫৪৩ জন ও রাজ্যসভায় ২৫০ জন বসতে পারেন। নতুন সংসদ ভবনে লোকসভায় ৮৮৮ জন এবং রাজ্যসভায় ৩০০ জন সংসদ সদস্য বসতে সক্ষম।
নতুন সংসদ ভবন ৬৫,০০০ বর্গমিটার
নতুন সংসদ ভবনটি প্রায় ৬৪,৫০০ বর্গমিটারজুড়ে রয়েছে। পুরনোটি একটি বৃত্তাকার ভবন। যার ব্যাস ৫৬০ ফুট (১৭০.৬৯ মিটার)। এর পরিধি এক মাইলের এক তৃতীয়াংশ বা ৫৩৬.৩৩ মিটার। আর, প্রায় ছয় একর (২৪,২৮১ বর্গমিটার) এলাকাজুড়ে পুরনো সংসদ ভবন চত্বর।
যৌথ অধিবেশনের জন্য ব্যবহার হবে লোকসভা কক্ষ
নতুন ভবনে পুরনো সংসদ ভবনের মত কোনও কেন্দ্রীয় হল নেই। তার বদলে লোকসভা চেম্বারটিই যৌথ অধিবেশনের জন্য ব্যবহার করা হবে।
নতুন ভবনে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি
সেন্ট্রাল ভিস্তার ওয়েবসাইট অনুসারে, পুরনো বিল্ডিংয়ে অগ্নি নিরাপত্তা একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয় ছিল। কারণ, এটি বর্তমান অগ্নি নিরাপত্তার নিয়ম অনুযায়ী ডিজাইন করা হয়নি। তার ওপর বেশ কয়েকটি বিদ্যুতের তার জোড়া হয়েছে।, যাতে আগুনের ঝুঁকি বেড়েছে। পাশাপাশি, অন্যান্য নানা সংযোজনের ফলে বিল্ডিংয়ের সামগ্রিক নান্দনিকতাই নষ্ট হয়ে গেছে।
নতুন ভবনে আছে
সেই কথা মাথায় রেখে, নতুন পার্লামেন্ট ভবনে জল সরবরাহ লাইন, নর্দমা লাইন, এয়ার কন্ডিশনার, অগ্নিনির্বাপক, সিসিটিভি, অডিও-ভিডিও সিস্টেম পরিষেবাগুলো সময় উপযোগী করা হয়েছে। নতুন ভবনে ইতিমধ্যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ভোটদান সহজ করার বায়োমেট্রিক্স। ডিজিটাল ভাষা ব্যাখ্যা বা অনুবাদের ব্যবস্থা এবং প্রোগ্রামেবল মাইক্রোফোন। হলগুলোয় আছে অভ্যন্তরীণ ভার্চুয়াল সাউন্ড সিস্টেম। যাতে প্রতিধ্বনির সঠিক মাত্রা সেট করা যায়।
বর্তমান এবং নতুন সংসদ ভবনের নকশা তৈরি
বর্তমান বা পুরনো সংসদ ভবন ঔপনিবেশিক যুগের ভবন। ব্রিটিশ স্থপতি স্যার এডউইন লুটিয়েন্স এবং হার্বার্ট বেকার তার ডিজাইন করেছিল। আর, নতুন ভবনটি আহমেদাবাদ-ভিত্তিক এইচসিপি ডিজাইন, প্ল্যানিং এবং ম্যানেজমেন্ট দ্বারা ডিজাইন করা হয়েছে। সেন্ট্রাল ভিস্তার ওয়েবসাইট অনুসারে, নতুন সংসদ ভবন এবং পুরনো সংসদ ভবনে যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, তা যৌথভাবে ব্যবহার করা হবে।
আরও পড়ুন- ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার ফলপ্রকাশ, কীভাবে তৈরি হয়েছিল ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন
সনাতন পরম্পরা এবং বাস্তুশাস্ত্র মেনে প্রায় ৫,০০০ শিল্পকর্ম (পেইন্টিং, আলংকারিক শিল্প, প্রাচীর প্যানেল, পাথরের ভাস্কর্য এবং ধাতব বস্তু) নতুন সংসদ ভবনজুড়ে রয়েছে। আনুমানিক ১,২০০ কোটি টাকায় তৈরি নতুন ভবনটি সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পের অংশ। যার মধ্যে একটি যৌথ কেন্দ্রীয় সচিবালয়, রাজপথের ব্যবস্থা, প্রধানমন্ত্রীর নতুন বাসভবন, প্রধানমন্ত্রীর নতুন কার্যালয়ও আছে। ভাইস প্রেসিডেন্টের ভবনও আছে। পুরানো সংসদ ভবনটি নির্মাণে ছয় বছর সময় লেগেছিল (১৯২১-১৯২৭)। খরচ হয়েছিল ৮৩ লক্ষ টাকা।