'খলনায়ক থেকে নায়কের ভূমিকায় আইপিএস ভি পি সজ্জানার।' পুলিশ কেন হায়দরাবাদকাণ্ডের ধর্ষকদের ধরতে দেরি করছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিল দেশের একটা বড় অংশ। অতঃপর শুক্রবার ভোররাতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে (এনকাউন্টার) চার অভিযুক্তের মৃত্যুর পর অবশ্য যাবতীয় প্রশ্ন এখন অতীত। সাইবারাবাদ পুলিশের 'সাহসী' পদক্ষেপের জন্য এখন দেশজুড়ে একাংশ প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বাহবা পাচ্ছেন নেপথ্যের নায়ক তথা সাইবারাবাদের পুলিশ কমিশনার সজ্জানারও।
এর আগে পপুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে তেলেঙ্গানায় মাওবাদীদের মৃত্যর খবর শোনা গিয়েছে। কিন্তু, এর বাইরে গত দশবছরে তিনবার এমন ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে দুটির সঙ্গেই প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে আইপিএস ভি পি সজ্জানার। ইতিমধ্যে নানা মহল থেকে 'এনকাউন্টার বিশেষজ্ঞে'র তকমাও পেয়েছেন এই পুলিশ কর্তা।
২০০৮ অ্যাসিড হামলাকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ -
১২ই ডিসেম্বর ২০০৮। ওরাঙ্গল পুলিশের সঙ্গে মহিলার উপর অ্যাসিড হামলায় তিন অভিযুক্তের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তাতেই প্রাণ যায় ওই তিন জনের। অভিযুক্তরা পুলিশকে আক্রমণ করে পালানোর চেষ্টা করেছিল বলে দাবি করে ওরাঙ্গল পুলিশ। মুভুনুরের কাছে দুষ্কৃতীরা মটোর সাইকেল লুকিয়ে রেখেছিল। কাছাকাছি আসতেই তারা ওই মটোর সাইকেল রাখা পিস্তল ও ছোড়া বার করে পুলিশকে আক্রমণের চেষ্টা করে। এরপরই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে তিন অভিযুক্তদেরই মৃত্য হয়।
উল্লেখ্য, সেই সময় ওরাঙ্গলের পুলিশ সুপার ছিলেন ভি পি সজ্জানার।
আরও পড়ুন: এনকাউন্টারে খতম হায়দরাবাদ ধর্ষণকাণ্ডের চার অভিযুক্ত, পুলিশের প্রশংসায় ধর্ষিতার বাবা
২০১৫, এনকাউন্টারে সিমি সদস্যের মৃত্যু -
অ্যাসিড হামকারীদের এনকাউন্টারে মৃত্যুর আট বছরর পর ফের ফের এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এবার খতম হয় পাঁচ সিমি ও চরমপন্থী সংগঠনের সদস্য। হায়দরাবাদ থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে নালগোন্ডা-ওরাঙ্গল জেলার সীমানায় পেমবুরদিতে এই সংঘর্ষ হয়। পুলিশ জানায়, সিমির এক সদস্য প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ভ্যান থামাতে বলে। পরে, গাড়িতে ওঠার সময় পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ফলে আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালায়। তাতেই পাঁচ জন নিহত হয়।
এই ঘটনার ঠিক আগেই, নালগোন্ডা জেলায় সিমি-র আক্রমণে চার পুলিশ কর্মীর প্রাণ গিয়েছিল। এই এনকাউন্টারের সমালোচনায় মুখর হয় মানবাধিকার কর্মীরা। তাঁদের দাবি ছিল, নালগোন্ডার বদলা নিতেই পরিকল্পিতভাবে সিমি সদস্যদের মেরেছে পুলিশ।
২০১৯, এনকাউন্টারে হত হায়দরাবাদ ধর্ষণকাণ্ডে ৪ অভিযুক্ত
শুক্রবার ভোররাতে হায়দরাবাদ ধর্ষণকাণ্ডের অভিযুক্তদের নিয়ে ঘটনারই পুনর্নির্মাণ করছিল পুলিশ। সেই সময়ই ওই চার অভিযুক্ত পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেই সংঘর্ষেই মৃত্যু হয় হায়দরাবাদে পশু চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের।
আরও পড়ুন: হায়দরাবাদ এনকাউন্টার: পুলিশের থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেয় অভিযুক্তরা, দাবি কমিশনারের
তবে কেন হঠাৎ ভোররাতে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছিল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সাইবারাবাদের কমিশনার ভি পি সজ্জানার জানিয়েছেন, 'সকালে পুনর্নির্মাণ করলে জনতার অসন্তোষে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারত। তা এড়াতেই ভোররাতে পুনর্নির্মাণের সিদ্ধান্ত।'
২৭ নভেম্বর ঘটনার পর থেকে ধর্ষকদের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে অসন্তোষ দানা বেঁধেছিল। মৃত্যুদণ্ড, খোজা করে দেওয়ার মত শাস্তির দাবি ওঠে খোদ সংসদেই। সমাজবাদী পার্টির সাংসদ জয়া বচ্চন তো এককদম এগিয়ে অভিযুক্তদের গণপিটুনির দাবি জানান।
এনকাউন্টার ঘিরে প্রশ্নের অবকাশ রয়েছে বলে মত মানবাধিকার কর্মীদের। কিন্তু, সাধারণ দেশবাসীর একাংশের কাছে অভিযুক্তদের মৃত্যু যেন, ক্ষতে মলম বলেই বলেই মনে হচ্ছে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায়। কেউই এখনও পর্যন্ত জোর গলায় এ ঘটনার সমালোচনা করেননি। এক কথায় সবাই মানছেন, এই ঘটনা পুলিশের সাহসী পদক্ষেপ।
Read the full story in English