Advertisment

প্রায় ৪০ হাজার ছোটবড় আগুনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে অ্যামাজনের জঙ্গল

গত বছরের তুলনায় ৭৭ শতাংশ বেশি পুড়ছে বিশ্বের বৃহত্তম 'রেনফরেস্ট'। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে জ্বলতে থাকা ছোটবড় আগুনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯,১৯৪।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
amazon fire

ছবি: টুইটার থেকে

সাম্প্রতিক সময়ের দ্রুততম দাবানলের কবলে রেকর্ড হারে পুড়ছে অ্যামাজনের জঙ্গল, জানিয়েছে ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ। স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার করে আগুনের বিস্তার মেপে ওই সংস্থা জানিয়েছে, ২০১৮ সালের তুলনায় ৭৭ শতাংশ বেশি পুড়ছে বিশ্বের বৃহত্তম 'রেনফরেস্ট', যাকে বাংলায় ঘনবর্ষণ বনাঞ্চল বলা যেতে পারে। গত প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে জ্বলতে থাকা ছোটবড় আগুনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯,১৯৪।

Advertisment

গোড়ায় গবাদি পশু চরাতে এবং চাষবাসের জন্য জঙ্গল সাফ করতে আগুন লাগিয়েছিলেন ব্রাজিলের কৃষকরাই, যা অভূতপূর্ব কোনও ঘটনা নয়। কিন্তু সেই আগুন এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়ে জঙ্গলের জনবসতিহীন এলাকায় যেমন বেলাগাম ছড়িয়ে পড়ছে, তেমনি হাত বাড়াচ্ছে উত্তর ব্রাজিলের জনবহুল এলাকাগুলির দিকেও। বিশেষভাবে বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে দেশের দুটি রাজ্য, রোনদোনিয়া এবং আক্রে। ইতিমধ্যে মানুষের প্রাণহানির কোনও খবর না পাওয়া গেলেও পুড়ে ছাই হয় গিয়েছে বেশ কয়েক হাজার হেক্টর জঙ্গল, মৃত্যু হয়েছে অসংখ্য পশুপাখির।

এতটাই বিস্তার লাভ করেছে এই দাবানল, যে হাজার হাজার মাইল দূরে অতলান্তিক মহাসাগরের উপকূলে ব্রাজিলের সবচেয়ে জনবহুল শহর সাও পাওলো পর্যন্ত পৌঁছে গেছে ধোঁয়া, জানাচ্ছে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা ওয়ার্ল্ড মিটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন।

সোশ্যাল মিডিয়াতে অসংখ্যবার শেয়ার হওয়া কিছু ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ধোঁয়ার দাপটে দিনের বেলাতেই অন্ধকার নেমে এসেছে সাও পাওলোয়, যদিও গবেষকরা জানিয়েছেন, এই অন্ধকারের সঙ্গে যে আগুনের সম্পর্ক আছেই, এমনটা এখনও নিশ্চিত করা যায় নি।

বুধবার দেশের উগ্র দক্ষিণপন্থী রাষ্ট্রপতি হায়ের বোলসোনারো অভিযোগ করেন, আগুন লাগিয়েছে কিছু বেসরকারি সংস্থা। তাঁর দাবি, সরকার ওই সংস্থাগুলির তহবিলে অর্থ দেওয়া বন্ধ করে দেওয়াতেই তাদের এই কাজ, যদিও এ বিষয়ে কোনও প্রমাণ পেশ করেন নি তিনি। "হতেই পারে, হতেই পারে। আমি বলছি না হবেই, কিন্তু এই কাজ কিছু বেসরকারি সংস্থা করেছে, আমার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে, ব্রাজিলিয়ান সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে," বলেন বোলসোনারো। "এই লড়াইটাই এখন লড়তে হবে।" তিনি আরও বলেন, দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার।

ইতিমধ্যে অ্যামাজনের জঙ্গল ধ্বংশ হওয়া নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন দেশের গবেষক, পরিবেশবিদ এবং প্রাক্তন সরকারি আধিকারিকরা। আতঙ্কিত ব্রাজিলের পড়শি দেশরাও, যেসব দেশে রয়েছে অ্যামাজন রেনফরেস্টের উপস্থিতি। বিশ্বের অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদ বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই রেনফরেস্ট, যা কিনা বাড়তে থাকা বিশ্ব উষ্ণায়ণের যুগে বাতাস থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড শুষে নেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়াও পৃথিবীর বাতাসের প্রায় ২০ শতাংশ অক্সিজেন আসে অ্যামাজনের জঙ্গল থেকে।

গত বছরের অক্টোবরে রাষ্ট্রপতির পদে আসীন হন বোলসোনারো, এবং তার পর থেকেই দ্রুতগতিতে বেড়েছে অ্যামাজন অরণ্য উচ্ছেদ বা ডিফরেস্টেশন। এর প্রধান কারণ, অবৈধভাবে জঙ্গল সাফ করা রোখার কাজে ঢিলে দিয়েছে বোলসোনারো সরকার। সমালচকরা বলছেন, বোলসোনারোর নীতির ফলে সাহস বেড়েছে কাঠের কারবারি, কৃষক, এবং খনিজীবীদের, যাঁরা অবৈধভাবে জঙ্গল সাফ করার পক্ষে।

amazon fire
Advertisment