কাশী বিশ্বনাথ-জ্ঞানবাপী বিতর্ক তুঙ্গে। আজই আদালত নিযুক্ত কমিশন তাদের সার্ভে রিপোর্ট জমা করেছে। তারপরই এ দিন জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে শুনানি স্থগিত রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। বারাণসী আদালততে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ যে, বাদী পক্ষ সময় চাওয়ায় আজ যেন কোনও নির্দেশ না দেওয়া হয়। এসবের মধ্যেই জ্ঞানবাপী মসজিদের মধ্যে 'শিবলিঙ্গ'-রসন্ধান নিয়ে মুখ খুললেন আরএসএসের সর্বভারতীয় প্রচার কমিটির প্রধান সুনীল আম্বেকর। তাঁর দাবি, "ঐতিহাসিক তথ্য সমাজের সামনে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গিতে তুলে ধরা প্রয়োজন।'
সুনীল আম্বেকর বলেছেন যে, 'এই মুহূর্তে জ্ঞানবাপীর ইস্যু বিদ্যমান। এমন কিছু সত্য যা প্রকাশ্যে আসছে। আমি বিশ্বাস করি আমাদের সত্য প্রকাশ্যে আসা উচিত। যাই হোক না কেন, সত্য সর্বদা বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে পায়। কতদিন লুকিয়ে রাখতে পারবেন? আমি বিশ্বাস করি যে সময় এসেছে ঐতিহাসিক তথ্যগুলিকে সমাজের সামনে সঠিক দৃষ্টিকোণে তুলে ধরার।'
ভারতের সমন্বিত সংস্কৃতি সম্পর্কে সুনীল আম্বেকর বলেছেন যে, 'এটা সত্য যে ভারত একীভূত। মানুষ গঙ্গা-যমুনার সংস্কৃতির কথা বলে। কিন্তু পরে এটি এক হয়ে যাওয়া উচিত। গঙ্গা হয়ে উঠতে হবে। তবেই আমরা একসঙ্গে চলতে পারব। আমি বিশ্বাস করি জনসচেতনতা সৃষ্টির দায়িত্ব রয়েছে।'
অনুষ্ঠানে উপস্থিত উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী সঞ্জীব বালিয়ান জানান যে, তিনি যখন মসজিদ প্রাঙ্গনে একটি শিবলিঙ্গের সন্ধানের বিষয়ে জানতে পারেন তখন তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। বলেন, 'গত সপ্তাহে আমি বারাণসীতে ছিলাম যখন জ্ঞানবাপীর এই সমস্যাটি চলছিল। আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লাম। কিন্তু আমি আরও অভিভূত হয়ে গেলাম যখন একজন সাংবাদিক আমাকে বললেন যে নন্দী বহু শতাব্দী ধরে ভগবান শিবের জন্য অপেক্ষা করছেন। আমার চোখ ছলছল করে উঠল।'
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর, যখন সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যায় রাম মন্দিরের পক্ষে রায় দেয়, তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন যে, 'আজ তিক্ততা ভুলে যাওয়ার দিন'। এবার কী আরএসএস বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ এবং মথুরার শাহী ইদগাহ ইস্যুটি নিয়ে সোচ্চার হবে? জবাবে, আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত বলেছিলেন যে, 'ঐতিহাসিক পটভূমির কারণে, সংঘ এর সাথে যুক্ত হয়েছিল। অযোধ্যার বিষয়টি সংগঠন হিসেবে আন্দোলন। এটি ব্যতিক্রম। এখন আমরা আবার মানব উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত হব এবং এই আন্দোলন আমাদের উদ্বেগের বিষয় থাকবে না।'
বিজেপি এবং আরএসএস নেতৃত্ব অযোধ্যা রায়ের উপর বিতর্ক এড়াতে দেশজুড়ে তাদের কর্মী, সমর্থকদের শান্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু। জ্ঞানবাপী মসজিদ ও মথুরার শাহী ইদগাহের প্রেক্ষাপটে এই দুই সংগঠন এখন তাদের আগের অবস্থান থেকে সরছে বলে অনুমান।
তবে, আরএসএসের এক প্রচারকের কথায়, “ভাগবতজি যা বলেছেন, আরএসএস এখনও তাতে অটল রয়েছে। আমাদের কাজ হল সমাজ তৈরি করা এবং ব্যক্তিত্ব তৈরি করা। কিন্তু আপনাকে বুঝতে হবে যে হিন্দু সমাজ একবার জাগ্রত হলে, তার দাবিগুলি জোরাল হবে ও সমস্যাগুলি তাদের নিজস্ব গতিপথ নেবে।'
সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে এই দুটি স্থানের জন্য অযোধ্যার আদলে কোনও জন আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে না সংঘ। সংঘের অন্য এক প্রচারকের কথায়, 'যখন বিচার চাওয়ার অন্য সব পথ শেষ হয়ে যায় তখন আমরা আন্দোলনে যুক্ত হই। আমরা অযোধ্যা আন্দোলনের অংশীদার হয়েছিলাম কারণ দেশে যে ধর্মনিরপেক্ষ পরিবেশ তৈরি হয়েছিল তা বাবরি ইস্যুকে আলোচনার অনুমতি দেয় না। কিন্তু দেশে এখন আর সেই অবস্থা নেই। সমাজ থেকেই দাবি-দাওয়া উঠছে এবং আদালতে মামলাগুলি ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে।'
Read in English