Advertisment

উপচে পড়া ভিড়ে তখন গলদঘর্ম অবস্থা KK'র, 'বিস্ফোরক' মন্তব্য কনসার্টের ফটোগ্রাফারের

সমস্ত ঘটনাই অস্বীকার করেছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
after Kks death administration will changing rules on college fest

নজরুলমঞ্চে জীবনের শেষ অনুষ্ঠানে কেকে।

নেই কেকে! মানতেই পারছেন না আসমুদ্র-হিমাচল। একটা মৃত্যু শেষ করল একটা যুগের। মৃত্যুর কারণ নিয়েও উঠেছে একাধিক বেনিয়মের অভিযোগ। কিন্তু সব কিছুকেও ছাড়িয়ে ‘নক্ষত্রের দেশে’ কেকে! আর তার মৃত্যুর পর ভাইরাল নজরুল মঞ্চের কনসার্টের ভিডিও। চরম অব্যবস্থার ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল। এর মাঝেই আগুনে ঘি ঢেলেছেন সেদিনের কনসার্টের দায়িত্বে থাকা ফটোগ্রাফার।

Advertisment

তার বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি সেদিনের ভিড়ে তিনি নিজেও তার ফটোগ্রাফির কাজটাও করতে পারেন নি ঠিক ঠাক ভাবে। এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেদিনের কনসার্টের দায়িত্বে থাকা ফটোগ্রাফার পলাশ হালদার জানিয়েছেন, 'বাইরে তখন প্রচণ্ড ভিড়। নজরুল মঞ্চেও তখন থিকথিকে ভিড়। কোন এক ছাত্রনেতার নির্দেশ মেনেই খুলে দেওয়া হয় মঞ্চের বন্ধ গেটগুলি। কেকে অনুষ্ঠান শুরু করতেই পিলপিল করে লোক ঢুকতে শুরু করে। তার মধ্যেই প্রচণ্ড গরম কাজ করছিল না মঞ্চের এসিও। তিনি বলেন, আয়োজক এবং কলেজের অনুষ্ঠানের দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের এই বিষয়টি নজর রাখা উচিত ছিল। পড়ে ভিড় সামলাতে না পেরে Fire Ext. স্প্রে করতে হয়'।

একই অভিযোগ করেন নজরুল মঞ্চের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা রক্ষীও। পাঁচটি গেট, কিন্তু খোলা ছিল মাত্র দুটো। প্রচুর ভিড় সেই গেটও হার মানে। দরজা ভেঙে পিল পিল করে লোক ঢুকে পড়ে। নজরুল মঞ্চে এতদিন ধরে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। কত শো, কত কনসার্ট হয়েছে। কিন্তু কোনওদিন এত মানুষের দাপাদাপি দেখেননি নিরাপত্তা কর্মী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই কর্মী বলছেন, এত ভিড়, এসি কাজ না করা, এত আবদ্ধ পরিবেশই কাল হল। এমনটা হবে তিনিও ভাবতে পারেননি।

আরও পড়ুন : কার্ডিয়াক অ্যারেস্টই চিরবিদায় কেকে’র! জানুন এই রোগের ঝুঁকি সম্পর্কে

কেকে-র মৃত্যু অনেক প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে কলকাতাকে। এই শহরের সঙ্গীতপ্রেমী মানুষদের। বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের নামে ফ্রি-তে গান শোনার হ্যাংলামিকে। যে নজরুল মঞ্চে প্রায় তিন হাজার কাছাকাছি আসন। সেখানে মঙ্গলবার কেকে-র লাইভ কনসার্টে হাজির হয়েছিল তিন গুণ বেশি দর্শক। ফুলবাগানের গুরুদাস মহাবিদ্যালয়ের ফেস্ট ঘিরে অনেক দিন আগে থেকেই উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। কলকাতায় কোনও বিখ্যাত শিল্পীকে নিয়ে এমন উন্মাদনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু মঙ্গলবার সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় অনুষ্ঠানের নামে দাপাদাপি।

এবিষয়ে বিশিষ্ট চিকিৎসক কুনাল সরকারও মুখ খুলেছেন। এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তিনি তুলে ধরেন মৃত্যুর পিছনে সম্ভাব্য সবকটি কারণও। তিনি লিখেছেন, এই মৃত্যু যতটা দুঃখ, ঠিক ততটাই লজ্জার”! ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘এক বেদনাদায়ক সন্ধ্যা’ একই সঙ্গে লিখেছেন, যতটা দুঃখ, ততটাই লজ্জার।’ পাশেই রেখেছেন কেকে-র মৃত্যুর কারণ। যার মধ্যে সবার প্রথমে উঠে এসেছে এদিন নজরুল মঞ্চে উপস্থিত দর্শকদের ভিড়।

তারপরেই বলেছেন, AC বেহাল- ভীষণ গরম। কারণ এদিন ক্যামেরায় ধরা পড়েছে AC না চলায় দরদরিয়ে ঘামছিলেন গায়ক। তুলে ধরেছেন মুখের উপর Fire Ext. স্প্রে করার ঘটনা। এছাড়াও চিকিত্‍সক কুনাল সরকার কেকের মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন নজরুল মঞ্চের চরম অব্যবস্থাকে। আর এসবের জন্য শিল্পীর কাছে ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন তিনি। যদিও সমস্ত ঘটনাই অস্বীকার করেছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য।

আরও পড়ুন: শূন্য নজরুল মঞ্চ! স্টেজে পড়ে কেকে-র গানের লিস্ট, আর এক টুকরো ফুলের তোড়া

সেদিনের ঘটনা প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, লোকের ভিড় এর সঙ্গে ওনার মৃত্যুর আদৌ কোনও সম্পর্ক নেই। আর যে বা যারা এই কথা বলছেন যে সেখানে ৭ থেকে ৮ হাজার লোক ছিল, এই তথ্যও ভুল। তাঁর কারণ মার্জিন লেভেলের বাইরে গিয়ে কোনও অনুষ্ঠানেই মানুষ যোগ দিতে পারেন না। অনেকেই বিনা পাশে উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ভেতরে ঢুকতে পেরেছিলেন আবার কেউ কেউ না। অনেকেই ফেরত চলে আসেন। আর এমন Ac’র সমস্যা এর আগে অনেক শিল্পীর শোয়েই হয়েছে। তবে তাদের মৃত্যু হয়নি।

প্রসঙ্গে উদাহরণ দিলেন, রক সঙ্গীত শিল্পী রূপম ইসলামের শোয়েরও। ছাত্রনেতার বক্তব্য, রূপমের শোয়ে এর থেকে অনেক বেশি ভিড় হয়, উত্তেজনা থাকে। যদিও বা তাঁর তরফে এমন কোনও অভিযোগ শোনা যায়নি। তবে আজ সকালেই রূপম নিজের ফেসবুক মাধ্যমে জানান যে নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠান করার কী অভিজ্ঞতা আমি জানি। এসি বন্ধ হয়ে যায়, স্টেজে সারি বেঁধে দর্শক দাঁড়িয়ে থাকে। শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা থাকে না। হয়তো কেউ বুঝবেন না কতটা কষ্ট করে প্রোগ্রাম করতে হয়। শো সংক্রান্ত সমস্ত তথ্যই হাওয়ায় উড়িয়ে দিলেন তৃণাঙ্কুর। তিনি বললেন, আমি গোটা অনুষ্ঠান জুড়ে উপস্থিত ছিলাম, আমার চোখে কোনওরকম কিছু ফল্ট পড়েনি। এমনকি ১০ মিনিটের বিরতি নেওয়ার প্রসঙ্গেও ইতি টেনেছেন ছাত্রনেতা। বললেন, শুধু সম্বর্ধনা দেওয়ার সময়ই উনি বিরতি পেয়েছিলেন। বাকি সময় শুধুই শো করতে ব্যাস্ত ছিলেন।

কেকে'র মৃত্যুতে আক্ষরিক অর্থেই ভেঙে পড়েছেন অন্তরঙ্গ বন্ধু শান। টুইটারে শান লিখেছেন, ‘জীবন একটু একটু করে ভেঙে দেয় আমাদের, আর মাঝেমধ্যে একেবারে বিধ্বস্ত করে দেয়, কেকে চিরতরুণ হয়েই থেকে যাবে, বয়স বাড়লেও যার বড় হয়ে উঠতে আপত্তি ছিল বরাবর। দুর্নীতি কিংবা ভেজাল যাকে এতটুকু স্পর্শ করতে পারেনি। সহজ,সরল, মন থেকে বাঁচা জীবনই কাটিয়ে গেল এত বছর।’ সঙ্গে দু’জনের একসঙ্গে করা এক অনুষ্ঠানের ভিডিও!

Singer KK death
Advertisment