বৃহস্পতিবার উত্তরাখণ্ডের হালদওয়ানিতে হিংসার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এবং আরও কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচ জনের মৃত্যুর বিষয়টিও নিশ্চিত করেছে। এই হিংসার ঘটনায় তদন্তের জন্য রাজ্য সরকারও ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, হিংসার ঘটনায় পুলিশ পাঁচ হাজার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে এবং বেশ কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হলদওয়ানির এসএসপি সংবাদ সংস্থা এএনআইকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
অবৈধভাবে নির্মিত একটি মাদ্রাসা ভেঙে ফেলাকে কেন্দ্র করে উত্তরাখণ্ডের হলদওয়ানিতে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। স্থানীয়রা পৌরসভার কর্মী ও পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ও পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করলে শতাধিক পুলিশকর্মী আহত হয়। বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্তব্য করে, এডিজি আইন ও শৃঙ্খলা, এপি অংশুমান বলেছেন, “দাখিল করা তিনটি এফআইআর-এ ১৬ জনের নাম উল্লেখ ছিল। যার মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বনভুলপুরা এবং আশেপাশের জায়গাগুলি ছাড়া অন্য এলাকাগুলিতে কারফিউ তুলে নেওয়া হয়েছে”।
জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুসারে, মৃতদের নাম ফাহিম কুরেশি (৩০), জাহিদ (৪৫), তাঁর ছেলে মহম্মদ আনাস (১৬), মহম্মদ শাবান (২২) এবং বিহারের বাসিন্দা প্রকাশ কুমার সিং (২৪)।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আনাসের ভাই মহম্মদ আমান সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, হিংসাত্মক ঘটনা শুরু হওয়ার আগে তিনি এবং তার বাবা জাহিদ হুসেন উভয়েই একটি নির্মাণস্থলে কাজ করছিলেন। আমান বাড়ি ফেরার সময় তার বাবা কিছু কাজের জন্য সেখানে থেকে যান।
আমান বলেন, “যখন আমি হিংসার ঘটনার বিষয়ে জানতে পারি, আনাসকে বাড়িতে ফিরে আসার জন্য ফোন করি কারণ সেও সে সময় বাইরে ছিল। আমি জানতে পারলাম যে আমার এক বন্ধু বাজারে গিয়ে আটকে পড়েছে। আমি তাকে খুঁজতে সেদিকে চলে যাই। আমার বাবা বাড়িতে ফিরে এলেও ভাই ফিরে আসেনি। ফের বাবা তাকে খুঁজতে বেরোন"।
ঘটনার কথা স্মরণ করে আমান বলেন, “আমার বাবা একটি দোকানে কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেই সময়ই বাবার গুলি লাগে। একজন প্রতিবেশী এই খবর দিলে আমি ছুটে যাই। বাবাকে রাস্তায় আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। আমি অন্য দুজনের সাহায্যে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাই। আমি যখন পৌঁছলাম, সেখানে গিয়ে দেখি ভাই আনাস কোমরের নীচে বুলেটের আঘাতে ইতিমধ্যেই সেখানে ভর্তি রয়েছে” ।
আরও পড়ুন : < Pakistan Election 2024 Result : ভোটে ‘কারচুপি’ দাবি, বিক্ষোভের মধ্যে পাকিস্তানে একাধিক বুথে পুনর্নির্বাচন >
চোখের জল মুছে আমান একটানা বলে যান, "কিছুসময়ের মধ্যেই দুজনের মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার রাতে জেলা প্রশাসনের উপস্থিতিতে তাঁদের শেষকৃত্য সম্পন্ন করি। আমাদের পরিবারের মাত্র পাঁচ জনকে শেষকৃত্যে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল”।
ফাহিম কুরেশির ভাই জাভেদ দাবি করেছেন যে তাকে তার প্রতিবেশীরা গুলি করে হত্যা করেছে। “তিনি বাড়িতে ছিলেন, যখন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তিনি লক্ষ্য করেন যে কেউ তার গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। সে সময় তিনি তা দেখতে গিয়েই তার বুকে গুলি লাগে। ফাহিমকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়"।
বনভুলপুরা এলাকায় ফেরিওয়ালা হিসাবে কাজ করেন গওহর। তিনি দাবি করেছেন যে তার ছেলে আরিস (১৮)ও হিংসার ঘটনায় নিহত হন। কিন্তু তার নাম প্রশাসনের তালিকায় ছিল না কারণ পরিবার তাকে বেরেলির একটি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন : < Shiv sena leader shot dead: ধর্ষণের অভিযোগের বদলা নিতেই ফেসবুক লাইভে খুন? তদন্তে নেমে নিখুঁত প্ল্যানিং চমকে দিল দুঁদে গোয়েন্দাদের >
ছেলের মৃত্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমার ছেলে আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে একটি জামাকাপড়ের দোকানে কাজ করত। বৃহস্পতিবার হিংসা শুরু হলে বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটের তাকে ফোন করে ফিরে আসতে বলি। কিন্তু সে আসেনি। সন্ধ্যা সাড়ে ছ'টায় আবার ফোন করলাম কিন্তু কোন সাড়া পেলাম না। আমি তাকে খুঁজতে গিয়ে দেখি রাস্তার উপর মুথ থুবড়ে ও পড়ে রয়েছে। অন্য দু'জনের সাহায্যে আমি তাকে বাড়িতে নিয়ে আসি। আমরা তাকে বেরেলি নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কিন্তু পথেই তার মৃত্যু হয়। ও ছিল আমার পুরো পৃথিবী,”।