প্রায় এক মাস আগে দেশের বিভিন্ন হাইকোর্টের ২৪ বিচারপতিকে বদলির জন্য সুপারিশ করেছে সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম। কিন্তু, কেন্দ্রের তরফে সেই প্রস্তাবের ভিত্তিতে এখনও বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি। স্থগিত রয়েছে বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বদলির অনুমোদন। বিচারপতি সেন কলকাতা হাইকোর্টে কর্মরত ও বিচারপতি বাগচী বর্তমানে অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টে কাজ করছেন।
কলকাতা হাইকোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে রাজ্যে ভোট পরবর্তী মামলার শুনানি চলছে। বিচারপতি সৌমেন সেন ওই বেঞ্চের অন্যতম সদস্য। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীকে কলকাতা হাইকোর্টে বদলির সুপারিশ করা হয়েছে কলেজিয়ামের তরফে।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম দেশের বিভিন্ন হাইকোর্টের জন্য ৬৮ জন বিচারপতি নিয়োগের সুপারিশ করেছে। এরপর চলতি মাসের ২ তারিৎ প্রধান বিচারপতি এনভি রামানা দাবি করেন যে, কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন যে দিন কয়েকের মধ্যেই কলেজিয়ামের বিচরপতি নিয়োগ সংক্রান্ত সুপারিশে সিলমোহর দেওয়া হবে। তিনি বলেন, 'ন্যায়বিচার প্রক্রিয়াকে আরও মসৃণ করতে এবং গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সরকারের কাছ থেকে আমি সহযোগিতা ও সমর্থনের আবেদন করছি।'
বিচার বিভাগের অনেকেই মনে করছেন দুই বিচারপতির বদলি নিয়েই সমস্যা দেখা দিয়েছে। যা ঘিরে কেন্দ্রীয় সরকার ও সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে মনকষাকষির পরিস্থিতি শুরু হতে পারে। কোন বিচারপতিকে কোন কোর্টে বদলি করা হচ্ছে তার কোনও যুক্তি কলেজিয়ামের তরফে দেওয়া হয়নি।
বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীকে অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টে ৯ মাস কাজের পর ফের কলকাতা হাইকোর্টে বদলির সুপারিশ করা হয়েছে। গত বছর ১৬ ডিসেম্বর এই বদলির সুপারিশ করেছিল কলেজিয়াম। অন্ধ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই এস জগন মোহন রেড্ডি অভিযোগ করেছিলেন যে, তাঁর সরকারের পতনের জন্য সুপ্রিম কোর্টের এক সিনিয়ার বিচারপতি অন্ধ্র হাইকোর্টের কাজে হস্তক্ষেপ করছেন। সেই সময়ই বিচারপতি বাগচীর বদলির সুপারিশ করা হয়।
বিচারপতি বাগচীকে তৎকালীন প্রধান বিচারপতির এসএ বোবদের নেতৃত্বাধীন কলেজিয়াম অন্ধ্র হাইকোর্টে বদলির সুপারিশ করেছিল। সেই সময় অন্ধ্রপ্দেশ হাইকোর্টের প্রাধন বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন জেকে মাহেশ্বরী। তাঁকে সিকিম হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি পদে বদলি করতে সুপারিশ করেছিল কলেজিয়াম। বর্তমানে বিচারপতি মাহেশ্বরী সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদে কর্মরত। চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি বিতারপতি জয়মাল্য বাগচী অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টের বিচারপতি হিসাবে কাজ করছেন।
সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সরকারকে ওড়িশা হাইকোর্টে বদলির সুপারিশ করেছিল। এছাড়াও কলকাতা হাইকোর্টের আরেক বিচারপতি অরিন্দম সিনহাকেও ওড়িশা হাইকোর্টে বদলির সুপারিশ করা হয়।
চলতি বছর মে মাসে নারদ মামলাগ্রহণে কলকাতা হাইকোর্টের পদ্ধতিগত ত্রুটি ধরা পড়েছে বলে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এছাড়াও সিবিআইয়ের আবেদন মেনে মামলা স্থানান্তরের প্রক্রিয়ার মধ্যে হাইকোর্ট নিজস্ব ক্ষমতা প্রয়োগ করে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কী ভাবে নিম্ন আদালতের রায়ে স্থগিতাদেশ জারি করল- তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অরিন্দম সিনহা। এ প্রসঙ্গে কলকাতা হাইকোর্টের অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালকেও চিঠি দিয়েছিলেন তিনি।
বিচারপতি অরিন্দম সিনহা গত ৮ অক্টোবর ওড়িশা হাইকোর্টে কাজের জন্য শপথগ্রহণ করেছেন। কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি বিন্দাল চলতি মাসের ১১ তারিখ এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন