আট দিন পর বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ ট্রলারের হদিশ পাওয়া গেল। উদ্ধার করা হয়েছে ট্রলারের তিন মৎস্যজীবীর মৃতদেহ। তবে এখনও নিখোঁজ সাতজন। যে মৎস্যজীবীদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে তাঁরা হলেন প্রসেনজিৎ দাস (১৯), মদন দাস (৬৪) ও ঝন্টু বিশ্বাস (২৭)। এঁদের সকলেরই বাড়ি কাকদ্বীপ এলাকায়।
গত ১৩ জুন এফ বি কন্যামাতা নামের একটি ট্রলার প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে বঙ্গোপসাগরের গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কবলে পড়ে। কেঁদো দ্বীপের কাছে মাঝি সহ ১৬ জন মৎস্যজীবী কে নিয়ে ডুবে যায় ট্রলারটি। সেই সময় মৎস্যজীবীদের উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে কাছাকাছি থাকা আরও দুটি ট্রলার। তখনই উদ্ধার হন ছ’জন মৎস্যজীবী। এই ঘটনার পর মৎস্যজীবী শ্রমিক ইউনিয়ন ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী উদ্ধার কাজে হাত লাগায়। আবহাওয়া প্রতিকূল থাকায় বারবার উদ্ধারকাজ ব্যাহত হয়।
মায়ের দেওয়া হাতের বালা দেখে চিহ্নিত করা হয়েছে প্রসেনজিতের মৃতদেহ (ফোটো- ফিরোজ আহমেদ)
আরও পড়ুন: ট্রলার উল্টে নিখোঁজ মৎস্যজীবী
স্থানীয় সূত্রের খবর, বুধবার বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া কয়েকটি ট্রলারের মৎস্যজীবীরা নিখোঁজ ট্রলারটিকে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের রায়মঙ্গল নদীতে দেখতে পান। তাঁরাই খবর দেন কাকদ্বীপের মৎস্যজীবী ইউনিয়নের নেতাদের। বৃহস্পতিবার সকালে নামখানা ঘাট থেকে মৎস্যজীবী ইউনিয়নের চারটি ট্রলার ফের উদ্ধারকাজে রওনা দেয়। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কন্যামাতা ট্রলারটিকে নামখানা ঘাটে নিয়ে আসা হয়।
ট্রলারের ভিতরের কেবিন থেকে উদ্ধার হয় তিন মৎস্যজীবীর মৃতদেহ। পচন ধরে যাওয়ার ফলে গভীর রাতে সেগুলিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। মৎস্যজীবীদের পক্ষ থেকে মৃতদেহগুলি পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। শুক্রবার কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে ময়না তদন্তের পর মৃতদের আত্মীয়রা সেগুলিকে শনাক্ত করেন। মৃত প্রসেনজিতের দাদা খোকন দাস জানান, ডুবে যাওয়া এফ বি কন্যামাতা ট্রলারে গিয়েছিলেন তাঁর দুই ভাই। ট্রলার রওনা দেওয়ার দিন তাঁর মায়ের দেওয়া হাতের বালা এবং পরনের লাল রংয়ের গেঞ্জি দেখে প্রসেনজিতের দেহ সনাক্তকরণ সম্ভব হয়েছে।
সুন্দরবন মৎস্যজীবী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, "মৎস্যজীবীরা বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ ট্রলারের সন্ধান পান। আমরা চারটি ট্রলার পাঠিয়ে ট্রলারটি উদ্ধার করে নিয়ে এসেছি। ট্রলার থেকে তিনটি দেহ উদ্ধার হয়েছে, বাকি মৎস্যজীবীদের সন্ধানে তল্লাশি চলছে।" এদিন তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, "উপকূলরক্ষী বাহিনীও ঠিকভাবে উদ্ধারকাজ করলে হয়ত মৎস্যজীবীরা প্রাণে বেঁচে ফিরে আসতেন।"