বৃহস্পতিবার ত্রিপুরার আগরতলার কাছে ছেলেধরা সন্দেহে একজনকে পিটিয়ে মারার ঘটনার জেরে রাজ্য জুড়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। গুজব ছড়ানো আটকাতে সমস্ত রকম ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে প্রশাসন। এমনকি বন্ধ রাখা হচ্ছে ইন্টারনেট পরিষেবা।
বৃহস্পতিবার যিনি মারা গেছেন তাঁর নাম জাহির খান। ৩০ বছর বয়সী জাহির উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগরের বাসিন্দা ছিলেন। এছাড়াও গণপ্রহারের ঘটনায় আহত হয়েছেন গুলজার আহমেদ খান ও খুরশিদ খান। এঁরা বিহারের বাসিন্দা। ওই ঘটনায় আহত আর এক ব্যক্তি স্বপন মিঞা আগরতলারই বাসিন্দা।
জাহির, গুলজার ও খুরশিদ ইলেক্ট্রিক্যাল জিনিসপত্রের ব্যবসা করতেন। এঁদের এই রাজ্যে যোগাযোগের মাধ্যম ছিলেন স্বপন মিঞা। আগরতলা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে, সিধাই মোহনপুর এলাকা দিয়ে ভ্যানে করে যাওয়ার সময়ে এই চারজনের উপর হামলা চালানো হয়। পশ্চিম জেলার পুলিশ সুপার অজিত প্রতাপ সিং জানিয়েছেন, ‘‘ওই এলাকায় আগে থেকেই ছেলেধরা সম্পর্কিত গুজব ছিল। সে জন্যই এলাকার মানুষের ধারণা হয়েছিল গাড়িতে করে পালাচ্ছে ছেলেধরারা। এরপরেই চারজনের উপর হামলা শুরু হয়। পুলিশ সকাল ৯টা নাগাদ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে চারজনকে উদ্ধার করে।’’
এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রায় হাজারখানেক লোক জমা হয়ে গিয়েছিল। উদ্ধারকাজ চালানোর জন্য পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস চালাতে হয়, এমনকি শূন্যে গুলিও ছুড়তে হয়। ঘটনার জেরে অন্তত তিনজ পুলিশকর্মা আহত হয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে।
আহতদের আগরতলার জিবিপি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। তাঁদের দ্রুত ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বেশ কিছুদিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেলেধরা সম্পর্কিত গুজব ছড়িয়েছে আগরতলা সহ গোটা রাজ্যে। এ সম্পর্কিত গুজব আরও তীব্র হয় মঙ্গলবার ১১ বছরের একটি ছেলের মৃতদেহ উদ্ধারের পর। গুজব ছাড়ানো হয়েছিল, মৃত ছেলেটির কিডনি চুরি করে নেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব বুধবার জানিয়েছিলেন, কিডনি চুরির ঘটনা সম্পূর্ণ অসত্য, পোস্ট মর্টেমের পর কিডনি অক্ষত অবস্থাতেই পাওয়া গিয়েছে।
ত্রিপুরা সরকারের তরফ থেকে জারি করা একটি বিবৃতিতে শুক্রবার দুপুর ২ টো থেকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য মোবাইল এসএমএস ও ইন্টারনেট পরিষেবায় বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই বিবৃতিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, এসব মাধ্যমেই ছেলেধরা সম্পর্কিত গুজব ছড়াচ্ছে বলে লক্ষ্য করেছে সরকার ও প্রশাসন।