পুলিশের গুলিতে জখম হয়েছিলেন আজ থেকে ঠিক ২১ দিন আগে। এখনও মেলেনি চিকিৎসা বাবদ রাজ্য সরকারের প্রতিশ্রুত ৯৬,০০০ টাকা। গত ৮ জানুয়ারি নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলাকালীন পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার মাধববাড়িতে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। গুলিতে আহত তিনজনের মধ্যে একজন হলেন ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বায়ত্বশাসিত জেলা পরিষদ (টিটিএডিসি) পলিটেকনিক কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সুমিত দেববর্মা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ডট কমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সুমিত জানান, ৮ জানুয়ারি টিটিএডিসি অঞ্চলে ডাকা বনধের জেরে তাঁর কলেজ বন্ধ ছিল। ফলে বাড়িতেই ছিলেন তিনি, যখন সংঘর্ষ বাঁধে ত্রিপুরা পুলিশ ও ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস (টিএসআর)-এর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের। গুলির শব্দ শুনে কী হচ্ছে দেখতে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন সুমিত। এক টিএসআর জওয়ানের রাইফেলের গুলি ততক্ষণে তাঁর বুকে বিঁধে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: আদিবাসী সংগঠনের ডাকা ১২ ঘণ্টার বন্ধে ত্রিপুরার স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত
"বাড়িতেই ছিলাম। তখন বাজে প্রায় ১১.৩০, যেসময় আমি সাধারণত কলেজে থাকি, কিন্তু সেদিন স্ট্রাইকের জন্যে কলেজ বন্ধ ছিল। বাড়ির কাছেই প্রচণ্ড চিৎকার চেঁচামেচি এবং গুলির আওয়াজ শুনে আমি বেরিয়ে দেখতে গেছিলাম কী হচ্ছে। আমাদের বাড়ি থেকে জায়গাটা একটু দূরে, দেখলাম অনেকে পালিয়ে যাচ্ছেন সেখান থেকে। আমিও দৌড়তে শুরু করামাত্রই গায়ে গুলি লাগে," বলেন সুমিত। তিনি এও দাবী করেছেন যে, তাঁকে এবং আহত আরেকজন ব্যক্তিকে যে অ্যাম্বুল্যান্সে করে আগরতলার গোবিন্দ বল্লভ পন্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেই অ্যাম্বুল্যান্সের পথ আটকে সেটিতে তল্লাশি চালায় পুলিশ ও টিএসআর, ভেতরে দুজন জখম ব্যক্তির তোয়াক্কা না করেই। তাঁর কথায়, "ওরা টিএসআর-এর জওয়ান ছিল। অ্যাম্বুল্যান্সের রাস্তা আটকে আমাদের আক্রমণ করে। প্রায় বেহুঁশ অবস্থাতেও আমি বুঝতে পারি, পুলিশ এবং টিএসআর-এর লোক আমাদের মারছে।"
প্রসঙ্গত, ৮ জানুয়ারি উত্তর-পূর্বাঞ্চল ধর্মঘটের জেরে পশ্চিম ত্রিপুরার মাধববাড়িতে অবরোধ করে উত্তর পূর্ব ছাত্র সংগঠনের (নেসো) সহযোগী সংগঠন টিপরা ছাত্র ফেডারেশন। অবরোধ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই কিছু দোকানে আগুন লাগিয়ে দেন কয়েকজন উত্তেজিত আন্দোলনকারী। জনতাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাস এবং রবারের গুলি ছোড়ে পুলিশ, যার ফলে আহত হন ১৫ জন, যাঁদের মধ্যে তিনজনের গায়ে গুলি লাগে।
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন, এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে গিয়ে জানিয়েছেন যে, তাঁর সরকার আহতদের সবরকম চিকিৎসার খরচ বহন করবে। তিনি আরও জানান, গুলিবিদ্ধদের এক লক্ষ টাকা এবং যাঁদের দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁদের ৫০,০০০ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। সুমিতের বাবা কিশোর দেববর্মা জানান, তিনি ক্ষতিপূরণের অর্থ পেয়ে গিয়েছেন বটে, কিন্তু ছেলের চিকিৎসা বাবদ কলকাতার রবীন্দ্রনাথ ট্যাগোর হাসপাতালে খরচ হওয়া ৯৬,০০০ টাকার দেখা নেই।
অন্যদিকে, ত্রিপুরার বর্তমান মহারাজা প্রদ্যোত কিশোর মাণিক্য সুমিতের পরিবারকে ২০,০০০ টাকা সাহায্য করেছেন। কিশোরবাবু বলেন, "আমরা সরকারের কাছ থেকে কলকাতা আসা যাওয়ার প্লেন ভাড়া পেয়েছি, এক লক্ষ টাকা নগদ ক্ষতিপূরণও পেয়েছি। কিন্তু চিকিৎসার খরচ নিয়ে কোনও খবর নেই। পুরো টাকাটাই পকেট থেকে দিয়েছি।" উল্লেখ্য, কিশোরবাবু রাজ্যের কৃষি দপ্তরে জুনিয়র ওয়ার্কশপ টেকনিশিয়ানের কাজ করেন। তাঁর দাবী, জেনেশুনে এলাকার উপজাতিদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালায় টিএসআর। তাঁর কথায়, "টিএসআর-এর কাজ মানুষের প্রাণ বাঁচানো। তাদের গুলি চালানোর হুকুম ছিল না। কী করে গুলি চালালো তারা? আমার ছেলের বিচার চাই।"