হাইকোর্টের রায়ে সম্পত্তি হাতছাড়া রাজ পরিবারের

প্রায় দু'হাজার একরের জলাশয়ের মাঝখানে অবস্থিত ত্রিপুরার নীরমহল ১৯৩৯ সালে নির্মাণ করান মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর।

প্রায় দু'হাজার একরের জলাশয়ের মাঝখানে অবস্থিত ত্রিপুরার নীরমহল ১৯৩৯ সালে নির্মাণ করান মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
neermahal tripura

ঝিলের ধারে নীরমহল

ত্রিপুরার বিখ্যাত এবং ঐতিহাসিক 'নীরমহল'-এর দখল নিয়ে রাজ পরিবার বনাম রাজ্য সরকার মামলায় সোমবার সরকারের পক্ষে রায় দিল ত্রিপুরা হাইকোর্ট। রাজ্যের প্রাক্তন মাণিক্য রাজাদের এই প্রমোদভবন নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত দড়ি টানাটানি চলছিল রাজ পরিবার এবং সরকারের মধ্যে।

Advertisment

রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল অরুণকান্তি ভৌমিক জানিয়েছেন, প্রধান বিচারপতি এ কে কুরেশির নেতৃত্বাধীন একটি ডিভিশন বেঞ্চের সামনে খারিজ হয়ে যায় প্রদ্যোত কিশোর মাণিক্য দেববর্মা এবং তাঁর মা বিভু কুমারী দেবীর আবেদন, এবং স্পষ্ট করে দেওয়া হয় যে ভবনটি সরকারেরই সম্পত্তি।

প্রায় দু'হাজার একরের জলাশয়ের মাঝখানে অবস্থিত ত্রিপুরার নীরমহল ১৯৩৯ সালে নির্মাণ করান মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর। লাল-সাদা বিশালাকায় এই ভবনটিকে মাণিক্য বংশের ৫০০ বছরের শাসনকালের প্রতিভূ হিসেবেই দেখা হয়। লোকমুখে এটির নাম ত্রিপুরার 'লেক প্যালেস', যা কিনা রাজস্থানের 'জলমহল' বাদ দিলে দেশের একমাত্র রাজভবন যা জলের উপরে অবস্থিত।

নীরমহল নির্মাণের কাজ শুরু হয় ১৯৩০ সালে, যখন ব্রিটিশ সংস্থা মার্টিন বার্ন এর বরাত পায় মহারাজা বীরবিক্রমের কাছ থেকে। নির্দেশ ছিল, মহারাজার জন্য গ্রীষ্মকালীন রিসর্ট বানিয়ে দিতে হবে। ন'বছর পর অবশেষে তৈরি হয় তাঁর সেই রিসর্ট। রুদ্রসাগর দীঘির বুকে এই জমকালো প্রাসাদটি দীর্ঘদিন ধরেই পর্যটকদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়।

Advertisment

রক্ষণাবেক্ষণ এবং জনগণের স্বার্থে ১৯৭৪ সালে রাজ্য সরকারের হাতে এই প্রাসাদ তুলে দেন তৎকালীন রাজ পরিবারের কর্তা কিরীট বিক্রম কিশোর মাণিক্য দেববর্মা। কিন্তু ২০০৫ সালে তাঁর স্ত্রী বিভু কুমারী দেবী এবং পুত্র প্রদ্যোত কিশোর মাণিক্য দেববর্মা আদালতে দাবি করেন যে সরকারকে স্রেফ 'অনুমোদন সাপেক্ষ অধিকার' দেওয়া হয়েছে নীরমহলের ওপর, এবং তাঁরা ওই সম্পত্তি, তৎসহ সেই সম্পত্তি থেকে আয়, এবার ফেরত চান।

এর এক দশক পরে, ২০১৫ সালে রাজ পরিবারের পক্ষে রায় দেয় এক সিভিল জজের আদালত, এবং রাজ্য সরকারকে আদেশ দেয় রাজ পরিবারের কাছে সম্পত্তি ফিরে দেওয়ার। এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যায় সরকার। রাজ পরিবারের সেই আবেদনই খারিজ করে প্রধান বিচারপতি এ কে কুরেশি এবং বিচারপতি অরিন্দম লোধ জানিয়েছেন, নীরমহল রাজ্য সরকারের সম্পত্তি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে অ্যাডভোকেট জেনারেল অরুণকান্তি ভৌমিক বলেন, "নীরমহলের সমস্ত স্বত্ব যে রাজ পরিবার পরিত্যাগ করেছেন, আমাদের এই যুক্তির সঙ্গে সহমত হাইকোর্ট। অতএব এই সম্পত্তির মালিক এখন রাজ্য সরকার।"

অন্যদিকে একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে প্রদ্যোত কিশোর ঘোষণা করেছেন যে তিনি 'আপসের' পথে হাঁটছেন না, এবার সুপ্রিম কোর্টে যাবেন তিনি। তাঁর ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন, "নীরমহল - আমি সরকারকে চ্যালেঞ্জ করছি এমন একটিও দলিল দেখাতে, যা থেকে প্রমাণ হবে যে আমার বাবা নীরমহল 'উপহার' দিয়েছিলেন তাদের, এবং আমি খুশি যে রাজ্য সরকার অবশেষে স্বীকার করেছে যে আমার বাবা অথবা পরিবারকে নীরমহলের জন্য একটা পয়সাও দেওয়া হয়নি। আমি এই রায়কে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করব, কিন্তু একটা প্রশ্ন করতে বাধ্য হচ্ছি, যদি প্রাক্তন রাজ পরিবারও তাদের সম্পত্তি রক্ষা করতে না পারে, তবে সাধারণ মানুষের কী আশা আছে? মামলায় কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে, আমার বাবা আর আমাদের সঙ্গে নেই, আমার মায়ের বয়স ৭৫ বছর - 'জাস্টিস ডিলেড ইজ জাস্টিস ডিনাইড'। আমি আপস করব না।"

tripura