ত্রিপুরার গোমতী জেলার বাসিন্দা, ১৭ বছরের প্রলয় দে এবার ৬৯.২০ শতাংশ নম্বর নিয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছে। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব সোমবার ঘোষণা করেছেন, তার পড়াশোনার সমস্ত খরচ সরকার বহন করবে। প্রতিবন্ধী প্রলয় পা দিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল।
মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব বলেছেন, "প্রতিবন্ধী ছাত্রদের প্রাপ্য ভাতা পাবে প্রলয়। কিন্তু আমরা ওকে উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপও দেব, এবং যে কোনও ধরনের পড়াশোনার ব্য়াপারে সাহায্য করব।"
বাবা-মা-দিদির সঙ্গে প্রলয়
প্রলয় মনে করে তার রেজাল্ট মোটামুটি হয়েছে। "আমি মোটের উপর খুশি। আশা করেছিলাম ৭৫ শতাংশের বেশি পাব। এর পর থেকে আরও খাটব।" প্রলয়ের পরিকল্পনা উচ্চ মাধ্যমিকে আর্টস পড়ার। কলেজে উঠে ইংরেজি নিয়ে পডা়শোনা করে প্রলয় চায় কলেজের অধ্যাপক হতে।
২০০২ সালে জন্মের সময় থেকেই প্রলয়ের দুহাত পিছন দিকে মোচড়ানো। চিকিৎসকরা তার মা-কে পুরো দু দিন ধরে সন্তানকে দেখতেই দেননি। বিরল এই রোগের চিকিৎসা শুরু পর ক্রমশ প্রলয়ের হাত দুটি শীর্ণ হতে শুরু করে। দুটি হাতের একটি করে আঙুল দিয়ে সে কিছু আঁকড়ে ধরতে পারলেও খাওয়ার জন্য তাকে কনুই ব্যবহার করতে হয়। প্রলয়ের মা পুতুল গুহ দে বললেন, "ও তিন বছর বয়সে পা দিয়ে ইংরেজি বাংলা অক্ষর লিখতে পারত। পা দিয়ে ও ছবিও আঁকতে পারে।"
এভাবে পায়ে লিখেই কামাল করেছে প্রলয়
প্রলয়ের বাবা সুজন কুমার দে দিন মজুরের কাজ করেন, কিন্তু অবস্থা ভাল নয়। সুজয়ের মা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী হিসেবে ৯,০০০ টাকা বেতন পান, তাতেই সংসার চলে।
সরকারি ঘোষণার পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন প্রলয়ের মা। "আমি মুখ্যমন্ত্রীর নিশ্চয়তা পাওয়ার পর খুবই খুশি ও সম্মানিত। টাকাপয়সার খুব টানাটানি আমাদের। আমার সামান্য রোজগারে দুটি বাচ্চার পড়াশোনা চালানো যায় না।" প্রলয়ের দিদি সবেমাত্র গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছেন।
ত্রিপুরা মাধ্যমিক বোর্ডের সহ-সচিব প্রদীপ সেনগুপ্ত বলেছেন "প্রলয় দারুণ ছাত্র। আমি শুনেছি ও একদিন কলেজ শিক্ষক হতে চায়। আমি ওর সাফল্য কামনা করি।"