গত বুধবার মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করে বলেন, ভারত নাকি যুদ্ধ বিদ্ধস্ত আফগানিস্তানে একটি "লাইব্রেরী" বানিয়েছে, যার কোনো মূল্য তিনি দেখতে পান না। ট্রাম্প এও বলেন, ভারত এবং অন্যান্য দেশ আফগানিস্তানের সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
কিন্তু এই উক্তির একদিন পরও দিল্লিতে আধিকারিকরা বোঝেন নি, ঠিক কোন লাইব্রেরীর কথা বলছেন ট্রাম্প। দিল্লির সরকারি সূত্র অনুযায়ী, একটি লাইব্রেরী আছে বটে আফগানিস্তানের সংসদ ভবনে, যে ভবন ভারতের সাহায্যে তৈরি হয়েছে। আর হয়তো এদিক ওদিক তৈরি করা কিছু স্কুলের লাইব্রেরী আছে। কিন্তু আলাদা করে লাইব্রেরী তৈরি হয়েছে, এমন কথা অনেক ভেবেও মনে করতে পারছেন না কেউ।
বুধবার বছরের প্রথম ক্যাবিনেট মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করতে গিয়ে নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীতে ট্রাম্প বলেন, "আমি উদাহরণ দিয়ে দেখাতে পারি যে আমার সঙ্গে ভারত এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর সম্পর্ক খুবই ভালো। কিন্তু উনি আমাকে সবসময় বলতে থাকেন, উনি আফগানিস্তানে একটি লাইব্রেরী বানিয়েছেন। লাইব্রেরী! আমরা পাঁচ ঘন্টায় আফগানিস্তানে যে টাকা খরচ করি, সেই টাকায় তৈরি করা যায়। উনি আমাকে লাইব্রেরীর কথা বলছেন, খুব বুদ্ধিমান উনি। আমাদের কী বলা উচিত, লাইব্রেরীর জন্য ধন্যবাদ? আমি জানি না কে আফগানিস্তানে লাইব্রেরী ব্যবহার করেন। এটা বলার জন্য বলা। কেউ আমার সুযোগ নিচ্ছে, সেটা আমার পছন্দ নয়।" তার পরে ট্রাম্প অবশ্য জুড়ে দেন, "আমি ভারতের উদ্দেশ্যে বলছি, প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক অসাধারণ। উনি অত্যন্ত ভদ্র লোক, খুব ভালো কাজ করছেন, সারা দেশকে একত্রিত করেছেন উনি।"
May be Trump should know that while he is decrying every other help in Af, India has been building not only libraries, but roads, dams, schools n even parliament building. We are building lives, for which d Afghan people thank us, no matter what others do or don’t. https://t.co/VUOIm1nuQd
— Ram Madhav (@rammadhavbjp) January 3, 2019
এদিকে দিল্লিতে আধিকারিকরা বলছেন, আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে ভারত শুধু যে অত্যন্ত সক্রিয় তাই নয়, সে দেশে আমেরিকার হাতে তালিবান শাসনের পতনের পর, অর্থাৎ ২০১১ সালের পর থেকে, ভারত প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার (আন্দাজ ২১,০০০ কোটি টাকা) অর্থসাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বস্তুত, এই অঞ্চলে এতবড় আর্থিক অনুদান আর কোনো দেশ দেয় নি।
"সুরক্ষা মানে কি শুধু সামরিক পদক্ষেপ? আর্থিক সুরক্ষা, স্বাস্থ্যের সুরক্ষা, পানীয় জলের সুরক্ষা, এইসব ক্ষেত্রের কথাও তো ভাবতে হবে। উন্নয়নের আঙ্গিকেও সুরক্ষাকে দেখা যায়," বলছেন এক সূত্র। আধিকারিকদের বক্তব্য, ভারতের দৃঢ় বিশ্বাস, যে কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক সহায়তা দেশের মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে। "ভারত বিদেশের মাটিতে সশস্ত্র বাহিনী পাঠায় না, যদি না জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে যুক্ত হতে হয়," বলেন এক আধিকারিক।
সূত্রের খবর, আফগানিস্তানেও ভারত উন্নয়নে সহযোগিতার পথেই হাঁটছে। এই সহযোগিতার মূলে রয়েছে "আফগানিস্তানের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে নির্দিষ্ট ক্ষেত্র নির্বাচন"। সূত্রের আরো খবর, "আফগানিস্তানের মানুষের জীবনে উল্লেখযোগ্য বদল আনাটাই উদ্দেশ্য। তার জন্য জরুরি প্রশাসনিক উন্নয়ন, আর্থসামাজিক পরিকাঠামোর বিকাশ, সুরক্ষিত জীবন ও জীবিকা।"
বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব টুইট করে বলেন, "ট্রাম্পের বোধহয় জানা দরকার যে উনি যখন আফগানিস্তানে সাহায্যের সমালোচনা করে চলেছেন, তখন ভারত শুধু লাইব্রেরীই বানাচ্ছে না, রাস্তা, বাঁধ, স্কুল, এমনকি সংসদ ভবনও বানাচ্ছে। আমরা জীবন গড়ছি, যার জন্য আফগানিস্তানের মানুষ আমাদের ধন্যবাদ দিচ্ছেন, আর যে যাই বলুন।"
Read the full story in English