তুতিকোরিনের স্টারলাইট কপার প্ল্যান্ট বেদান্ত লিমিটেডের কোম্পানি। আগে এর নাম ছিল সেসা স্টারলাইট বা সেসা গোয়া লিমিটেড। প্রাকৃতিক সম্পদ কারবারে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম কোম্পানি হল বেদান্ত। স্টারলাইটের কাজকর্ম চলে তামিল নাড়ু ও দাদরা নগর হাভেলিতে। তুতুকুড়ি বা তুতিকোরিন এলাকায় বছরে ৪০০,০০০ মেট্রিক টন তামা গলানোর কারখানা ছাড়া পাওয়ার প্ল্যান্টও রয়েছে তাদের। দেশের বৃহত্তম বন্দর তুতিকোরিনে হওয়ার জন্য কোম্পানির কাজকর্ম চালাতে সুবিধা হয়।
স্টারলাইটের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ আজকের ঘটনা নয়, এর শুরু প্রায় দু দশক আগে। ইদানিংকালে প্ল্যান্টের সম্প্রসারণের সিদ্ধান্তের কথা প্রকাশ্যে আসার পরে এই আন্দোলন জোরদার হয়। কোম্পানির পরিকল্পনা ছিল ৪০০,০০০ মেট্রিক টন থেকে তামা গলানোর পরিমাণ দুগুণ বাড়ানোর। মঙ্গলবার প্রায় ১৫ হাজার মানুষ প্ল্যান্ট বন্ধ করে দেওয়ার দাবিতে কালেক্টরেট অফিসে বিক্ষোভ দেখান। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, প্ল্যান্টের কাজের ফলে দূষিত হচ্ছে ভূগর্ভস্থ জল, অসুস্থ হচ্ছেন এলাকার মানুষ।
বেদান্ত কোম্পানির বক্তব্য প্ল্যান্টের আশেপাশের বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত পানীয় জলের বন্দোবস্তও করা হয়েছে বলে তাদের দাবি।
বেদান্তর স্টারলাইট এবং আদিত্য বিড়লা গ্রূপের হিন্দালকো ইন্ড্রাস্টিজ ভারতের অন্যতম দুই তামা প্রস্তুতকারী সংস্থা। কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা হিন্দুস্থান কপার লিমিটেড প্রতি বছর ৯৯,৫০০ টন কপার উৎপাদন করে। ভারতের তামার বাজারে হিন্দুস্থান কপার ছাড়া যে কোম্পানিগুলি বড় অংশ দখল করে আছে তাদের মধ্যে স্টারলাইট ও হিন্ডালকো অন্যতম। হিন্ডালকো বছরে পাঁচ লাখ টন তামা উৎপাদন করে, স্টারলাইট উৎপাদন করে চার লাখ টন।
পরিবেশ ইস্যুতে ১৯৯৭ সাল থেকেই বিক্ষোভের মুখে পড়েছে স্টারলাইট। ২০১৩ সালের মার্চে গ্যাস লিক হয়েছিল তুতিকোরিনের প্ল্যান্টে। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা তখনই প্ল্যান্ট বন্ধের নির্দেশ দেন। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে জাতীয় পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হয় কোম্পানি, যার ফলে সরকারের সিদ্ধান্ত জাতীয় পরিবেশ আদালত নাকচ করে দেয়। পরিবেশ আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার।
এ বছরের ২৭ মার্চ আবার তুতিকোরিনের প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে যায়। কোম্পানি কারণ হিসেবে জানায়, ১৫ দিনের জন্য রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হবে। ঘটনাক্রমে ৩১ মার্চ অবধি কোম্পানির প্ল্যান্ট চালানোর ছাড়পত্র ছিল। বেদান্ত সিইও কুলদীপ কৌরা ২ ফেব্রুয়ারি জানান, তামা গলানোর জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি পত্র ২০২০ পর্যন্ত রয়েছে। তার তিনমাস পর, ৩ মে, কৌরা জানান, “তুতিকোরিনে আমাদের কাজ বন্ধ রয়েছে, আমাদের নবীকরণের আবেদন এখনও অনুমোদন পায়নি। কর্তৃপক্ষের তোলা কিছু প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা চলছে। আশা করি দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”
দ্বিতীয় প্ল্যান্ট প্রজেক্টের জন্য পরিবেশ ছাড়পত্রের মেয়াদ ১৮ মাস বাড়ানোর আবেদন করে পরিবেশ ও বনমন্ত্রকের কাছে এবছরের ২৯ জানুয়ারি ও ৮ ফেব্রুয়ারি দুটি চিঠি দেওয়া হয় স্টারলাইটের তরফ থেকে। ফেব্রুয়ারিতে দেওয়া দ্বিতীয় চিঠিতে প্ল্যান্ট ওয়ানের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পরিবেশ ছাড়পত্রও চাওয়া হয়। ২৯ জানুয়ারিতে দেওয়া চিঠিতে জানানো হয়, এর আগে ২০১৫ সালের ১৮-২০ নভেম্বরের বৈঠকে বিশেষজ্ঞ কমিটি তিন বছরের জন্য, অর্থাৎ ২০১৮ পর্যন্ত, পরিবেশজনিত ছাড়পত্র দেওয়ার ব্যাপারে সুপারিশ জানিয়েছিল।
Get all the Latest Bengali News and West Bengal News at Indian Express Bangla. You can also catch all the General News in Bangla by following us on Twitter and Facebook
Web Title: