Advertisment

ভয়ংকর ঘটনা! কেরলে নিপা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব, মৃত অন্তত দুই, আক্রান্ত কয়েকজন

পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে কেন্দ্র।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Nipah Virus

স্বাস্থ্য দফতর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রাণপণে চেষ্টা চালাচ্ছে।

কেরলের কোঝিকোড় জেলায় নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দু'জনের মৃত্যু হয়েছে এবং চার জন চিকিৎসাধীন। চিকিৎসাধীন চার ব্যক্তি মৃতদের একজনের নিকটাত্মীয়। এদিকে, দুটি মৃত্যুর কথা স্বীকার করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডাভিয়া মঙ্গলবার বলেছেন যে পরিস্থিতির পর্যালোচনা করতে এবং নিপা ভাইরাস প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনায় সরকারকে সাহায্য করতে বিশেষজ্ঞদের একটি কেন্দ্রীয় দল কেরলে পাঠানো হয়েছে। এর আগে, কেরল স্বাস্থ্য দফতর দুটি মৃত্যুর পরে কোঝিকোড় জেলায় সতর্কতা জারি করেছিল।

Advertisment

মৃত ব্যক্তিদের এবং নিপা ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ-সহ চিকিত্সাধীন ব্যক্তিদের নমুনাগুলোর চূড়ান্ত পরীক্ষা এবং নিশ্চিতকরণের জন্য পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি (NIV) এ পাঠানো হয়েছিল। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীনা জর্জ, যিনি পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার জন্য একটি উচ্চ-স্তরের বৈঠক করতে মঙ্গলবার সকালে কোঝিকোডে পৌঁছেছিলেন, তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন যে ল্যাবের নমুনার ফলাফল শীঘ্রই পাওয়া যাবে।

জ্বরের (এনসেফালাইটিস) কারণে মারা যাওয়া দুই মৃত ব্যক্তির পরিচিতি শনাক্ত করা হয়েছে। যাঁরা উচ্চ-ঝুঁকির বিভাগে রয়েছে তাঁদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী। নিপা নিশ্চিত হলে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেখানে থাকতেন, সেই এলাকায় সামাজিক জমায়েত এবং বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিধিনিষেধ থাকবে বলেই মন্ত্রী বলেছিলেন।

স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে রোগীদের মধ্যে একজন ৩০ আগস্ট এবং অন্য একজন ১১ সেপ্টেম্বর কোঝিকোড়ের একই হাসপাতালে মারা গিয়েছেন। চার জন, যাঁরা মৃতদের আত্মীয়, তাঁরা একই উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মন্ত্রী বীণা জর্জ বলেছেন যে ১১ সেপ্টেম্বর মারা যাওয়া রোগী ৩০ আগস্ট মারা যাওয়া ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন। তাঁরা প্রায় একঘন্টা হাসপাতালে একসঙ্গে ছিলেন।

নজরদারির অধীনে থাকা এলাকাগুলি হল কোঝিকোড জেলার পূর্বাঞ্চলের আয়ানচেরি এবং মারুথনকারা গ্রাম পঞ্চায়েত। যেখানে স্বাস্থ্য ও পঞ্চায়েত বিভাগ ইতিমধ্যে নজরদারি এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা জোরদার করেছে। দুটি গ্রামই চাঙ্গারোথ পঞ্চায়েত থেকে ১৫ কিলোমিটারেরও কম দূরে অবস্থিত। সেখানে ২০১৮ সালেই নিপার প্রাদুর্ভাবের কথা জানানো হয়েছিল। এই অঞ্চলে ঘন গাছপালা এবং কাছাকাছি বন রয়েছে। ২০২১ সালে, চাঙ্গারোথ থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে চাথামঙ্গলমে একটি সংক্রমণের রিপোর্টও হয়েছিল।

স্বাস্থ্য ও পঞ্চায়েত বিভাগ ইতিমধ্যে কোঝিকোড় জেলার দুটি গ্রাম পঞ্চায়েতে নজরদারি এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা জোরদার করেছে।কেরলে মে-জুন ২০১৮ সালে, একটি নিপা ভাইরাসের সংক্রমণের অভিযোগ উঠেছিল। পরে, কোঝিকোড জেলায় ১৮টি সংক্রমণের অভিযোগ নথিবদ্ধ হয়েছিল। সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৭ জনের মত মারা গিয়েছিলেন। যাঁদের সংক্রমণের নমুনা পরীক্ষাগারে পরীক্ষাও করা হয়নি।

২০১৯ সালে, এর্নাকুলাম জেলায় একটি সংক্রমণের অভিযোগ জমা পড়েছিল, কিন্তু কোনও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে, কোঝিকোডে আবার মারাত্মক ভাইরাসটির সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল। একটি ১২ বছরের ছেলে মারা গিয়েছিল। উভয় ক্ষেত্রেই, কোঝিকোড়ে ২০১৮ সালের প্রাদুর্ভাব থেকে শিক্ষা নেওয়ায় আরও সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব হয়েছিল।

২০২১ সালে, এনআইভি-পুনে কোঝিকোড জেলার দুটি বাদুড়ের জাত থেকে সংগৃহীত নমুনায় নিপা ভাইরাসের অ্যান্টিবডি খুঁজে পেয়েছিল। এটি ব্যাপকভাবে স্বীকৃত যে এই স্তন্যপায়ী প্রাণীরা ভাইরাসের উত্স এবং অনুসন্ধানে সহায়তা করে। যার ফলে বাদুড়ের পাশাপাশি, অন্যান্য প্রাণী যেমন শূকর, কুকুর, বিড়াল, ছাগল, ঘোড়া এবং ভেড়াও এই রোগ ছড়াতে পারে। এর মধ্যে বাদুড়রা সাধারণত, মে এবং জুন মাসে বংশবৃদ্ধি করে।

নিপা ভাইরাস সংক্রমণ শুরুতে সামান্য মনে হলেও পরে তা গুরুতর রোগের কারণ হতে পারে। মস্তিষ্কে একটি বড় ফোলা (এনসেফালাইটিস) তৈরি করে এবং মৃত্যু পর্যন্ত হয়। ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার চার দিন থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে যে কোনও সময় সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। রোগীরা সাধারণত জ্বর এবং মাথাব্যথার রিপোর্ট করে থাকেন, যা তিন দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে। যার সঙ্গে কাশি, গলাব্যথা এবং শ্বাসকষ্টের মতো শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতার লক্ষণও থাকে।

আরও পড়ুন- দেশজুড়ে ডিজেল গাড়ি সম্পর্কে বিরাট ঘোষণা মন্ত্রীর! কী হতে চলেছে পরিণতি?

যদি রোগটি এনসেফালাইটিসে পরিণত হয়, তবে রোগীর তন্দ্রা, বিভ্রান্তি এবং মানসিক বিভ্রান্তি শুরু হয়। রোগী এক বা দু'দিনের মধ্যে খুব দ্রুত কোমাতে চলে যেতে পারেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, নিপা ভাইরাসের জেরে ৪০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যু স্বাভাবিক ঘটনা। কোঝিকোড়ে ২০১৮ সালের প্রাদুর্ভাবে অবশ্য মৃত্যুর হার ছিল ৯০ শতাংশের বেশি।

nipah virus Modi Government kerala Nipah Outbreak Death
Advertisment