২ বছর পরও নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘিরে বিতর্ক থামেনি। গতকালই ছিল নোট বাতিলের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি। ২ বছর পরেও মোদি সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত কার্যত ভুল ছিল বলে ইতিমধ্যে সোচ্চার হয়েছে বিরোধীরা। কালো টাকা রুখতে ও নকল নোট এড়াতে নোট বাতিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে আজও সওয়াল করে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাঁদের আরও দাবি, নোট বাতিলের ফলে কালো টাকার কারবারিরা বিপাকে পড়েছেন। অর্থাৎ কিনা, উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। কিন্তু মোদি সরকারের সেই যুক্তি মানতে পারেনি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য এবার সামনে এল।
২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করেছিলেন। আর তার ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগেই আরবিআই-এর সেন্ট্রাল বোর্ডও এই সিদ্ধান্তের পাশে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কেন্দ্র কালো টাকা ও নকল নোট নিয়ে যে যুক্তি দিয়েছিল তা যে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক খারিজ করে দিয়েছে সে কথা এবার সামনে এল।
আরও পড়ুন, নোটবন্দিকে ‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ বললেন রাহুল
আরবিআইয়ের সেন্ট্রাল বোর্ডের ৫৬১তম বৈঠকের গুরুত্বপূর্ণ নথি বলছে, নোট বাতিলকে সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করলেও সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের ডিরেক্টর সতর্ক করেছিলেন যে, বর্তমান বছরে দেশের আর্থিক বৃদ্ধিতে এর ফলে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ বৈঠকের ৫ সপ্তাহ পর ২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর বৈঠকের সেই নথিতে সই করেছিলেন আরবিআই গভর্নর উর্জিত প্যাটেল।
২০১৬ সালের ৭ নভেম্বর কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের তরফে বিমুদ্রাকরণের প্রস্তাব মেলার পরই সরকার যে যুক্তি দেখিয়েছিল সে বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন আরবিআই ডিরেক্টর। সরকারের তরফে প্রস্তাবে বলা হয়েছিল যে, ৫০০ ও হাজার টাকার নোট বাজার থেকে তুলে নিলে কালো টাকা ও নকল নোট রোখা যাবে। কিন্তু, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কটি তাতে মোটেই সায় দেয়নি। এমন তথ্য সামনে চলে আসায় এখন সংশ্লিষ্ট মহলে তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের অনুমান, আরবিআই-এর এই অসম্মতি বিরোধীদের হাতে নয়া অস্ত্র হয়ে উঠবে।
কালো টাকা রোখা নিয়ে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত যে কতটা অমূলক সে বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বোর্ডের পর্যবেক্ষণ, অধিকাংশ কালো টাকাই নগদ রূপে নেই, সোনা বা রিয়েল এস্টেটের আকারে রাখা হয়ছে...ফলে এই পদক্ষেপ ওই সম্পদের উপর কোনও প্রভাব ফেলবে না।’’
নকল টাকা নিয়ে মন্ত্রক বোর্ডকে জানিয়েছিল যে, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নকল নোটে ছেয়ে বাজার গিয়েছে। এই পরিমাণ টাকার অঙ্কটা প্রায় ৪০০ কোটির মতো বলেও দাবি করা হয়েছিল। এ যুক্তির পাল্টা হিসেবে, আরবিআই বোর্ড জানায়, জালিয়াতির যে কোনও ঘটনাই উদ্বেগজনক ঠিকই, তবে দেশে টাকার মোট পরিমাণের শতকরা হিসেবের নিরিখে দেখলে ৪০০ কোটি অঙ্কটি তেমন তাৎপর্যপূর্ণ নয়।
অন্যদিকে, দেশের আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে ওই বৈঠকের গুরুত্বপূর্ণ নথিতে উল্লেখ করে হয়েছে, আর্থিক বৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্য হলেও প্রচলিত মুদ্রার বৃদ্ধি নামমাত্র। বাজার থেকে ওভাবে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট তুলে নেওয়ার ফলে দেশের দুটি ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যা হবে বলেও ওই নথিতে উল্লেখ করা হয়েছিল। স্বাস্থ্য ও পর্যটন ক্ষেত্রে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে সে কথাও স্পষ্টভাবে বলেছিল বোর্ড।
Read the full story in English