ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক যুদ্ধের মধ্যেই আজ ইজরায়েল সফর করবেন। দেখা করবেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গেও। বুধবার ইজরায়েলে এসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন যে, গাজার হাসপাতালে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য জঙ্গিরা দায়ী। ওই বিস্ফোরণে বিপুল সংখ্যক প্যালেস্তিনীয় নিহত হয়েছেন। বাইডেন তাঁর সামনে বসা ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে বলেন, ‘আমি তথ্যপ্রমাণ যা দেখছি, তার উপর ভিত্তি করে বলতে পারি যে, মনে হচ্ছে এটি অন্য দল করেছে, আপনি নয়।’ ওই হাসপাতালে হামলা ইস্যুতে প্যালেস্তাইনের আধিকারিকরা ইজরায়েলি বিমান হামলাকে দায়ী করেছেন। হামলায় আল-আহলি আল-আরাবি হাসপাতাল পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। আর, তাতে ৫০০ জনের মত প্রাণ হারিয়েছেন।
ইজরায়েল সফরের আগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, 'প্রতিটি নাগরিকের মৃত্যু দুঃখজনক। হামাসের সন্ত্রাসবাদী হামলায় প্রাণহানি্র ঘটনা সত্যিই ভয়াবহ’। ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধের মধ্যে বৃহস্পতিবার ইজরায়েলে পৌঁছাবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। ঋষি সুনাক ইসরায়েলে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগের সঙ্গে দেখা করবেন। উল্লেখ্য, এর আগে গতকাল ইজরায়েল সফরে আসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যুদ্ধে ইজরায়েলের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছিলেন তিনি ।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, গাজা ও ইজরায়েলে হামাসের হামলায় নিহতদের প্রতি সমর্থন ও সমবেদনা জানাতে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করবেন ঋষি সুনাক। ইসরায়েল সফরের আগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, 'প্রতিটি নাগরিকের মৃত্যু একটি দুঃখজনক ঘটনা। হামাসের সন্ত্রাসবাদী হামলায় বহু প্রাণহানি ভয়াবহ। গত মঙ্গলবার গাজার একটি হাসপাতালে হামলায় ৫০০ প্যালেস্তাইন নাগরিক নিহত হয়। এ প্রসঙ্গে ঋষি সুনক বলেন, 'এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় যেখানে বিশ্বের নেতাদের একত্রিত হতে হবে এবং এই সংঘাত যাতে আরও বাড়ে না তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করতে হবে।'
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় নিহতদের মধ্যে সাতজন ব্রিটিশ নাগরিকও রয়েছেন। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন নয়জন ব্রিটিশ নাগরিক। ধারণা করা হচ্ছে নিখোঁজ সকলেই হামাসের হাতে বন্দি রয়েছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের ইসরাইল সফরের আগে গত সপ্তাহে ব্রিটিশ বিদেশ সচিব জেমস ক্লিভারলিও ইজরাইল সফর করেন। ইজরায়েল ছাড়াও ক্লিভারলি মিশর, তুরস্ক ও কাতার সফর করেন। এ সময় ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধান নিয়ে আলোচনা হয়। ব্রিটিশ সরকার বলেছে, এই বিরোধ মেটাতে এই তিনটি দেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া গাজার মানবিক সংকট নিরসনে এবং অপহৃতদের উদ্ধারে সব ধরণের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে ব্রিটেন।
ইজরায়েলের দাবি, গাজার হাসপাতালে হামলার পিছনে রয়েছে ইসলামিক জিহাদ নামে একটি সংগঠন। সেই সংগঠনের জঙ্গিদের বক্তব্যে আড়ি পেতে তা রেকর্ড করেছে ইজরায়েল। আর, সেই রেকর্ড সামনে এনেছে। পাশাপাশি, ইজরায়েলের রাডারেও ধরা পড়েছে, ইসলামিক জঙ্গিদের রকেট হামলা চালিয়ে হাসপাতাল ধ্বংসের ঘটনা। তা-ও প্রকাশ্যে এনেছে ইজরায়েল কর্তৃপক্ষ। এই পরিস্থিতিতে জর্ডান বাইডেনের সফরসূচিতে অংশগ্রহণের আহ্বানে সাড়া দিতে রাজি হয়নি। আম্মানে এক শীর্ষ বৈঠকে জর্ডান, মিশর এবং প্যালেস্তাইন কর্তৃপক্ষের নেতাদের সঙ্গে গাজাকে সাহায্য করা এবং বৃহত্তর যুদ্ধ এড়ানো নিয়ে বাইডেনের বৈঠকের কথা ছিল।
গাজার ওই হাসপাতালে বিস্ফোরণের ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলে গভীর আলোড়ন ফেলেছে। হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি জানিয়েছেন যে চলতি মাসের শুরুতে ইজরায়েলে হামাসের হামলা, ‘মানুষের সম্মিলিত শাস্তিকে ন্যায়সঙ্গত করতে পারে না। গাজার হাসপাতালে হামলায় শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ায় আমি আতঙ্কিত।’ ওই হাসপাতালটি এমন জায়গায়, যেখানে ইজরায়েল এর আগে সাধারণ নাগরিকর আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। অধিকৃত পশ্চিম তীর, ইস্তানবুল এবং আম্মানে হাসপাতালে হামলার পরই বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। বর্তমান হিংসায় গাজাতে যে পরিমাণ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, তা গাজায় ইজরায়েলের হামলায় একক সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা বলে দাবি করছেন পরিসংখ্যানবিদরা।
এই পরিস্থিতিতে গাজার হাসপাতালে হামলায় প্রাণহানির ব্যাপারে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বুধবার বলেছেন যে বর্তমান সংঘর্ষে সাধারণ নাগরিকদের হতাহতের ঘটনা একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। আর, এই ঘটনায় জড়িতদের দায়ী করা উচিত। সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ মোদী বলেন, ‘গাজার আল আহলি হাসপাতালে মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত। নিহতদের পরিবারের প্রতি আমাদের আন্তরিক সমবেদনা জানাই। আহতদের দ্রুত আরোগ্যের জন্য প্রার্থনা করছি। বর্তমান সংঘাতে সাধারণ নাগরিকদের হতাহতের ঘটনা একটি গুরুতর বিষয়। যা, এখনও অব্যাহত রয়েছে। এই ঘটনায় জড়িতদের অবশ্যই দায়ী করা উচিত।’