ভারতের চেষ্টায় রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হবে, কেন দিল্লি সফরে এলেন ইউক্রেনের মন্ত্রী? চারদিনের ভারত সফরে এসেছে ইউক্রেনের ডেপুটি-বিদেশমন্ত্রী এমিন ঝাপারোভা। চার দিনের ভারত সফরে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা্র পাশাপাশি ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতি এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনকে মানবিক সাহায্যের জন্যও আবেদন জানিয়েছেন তিনি। ৯ থেকে তাঁর চারদিনের ভারত সফর শেষ হবে ১২ এপ্রিল। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এটিই প্রথম কোন ইউক্রেনের সরকারি আধিকারিকের ভারত সফর।
ইউক্রেনের ডেপুটি বিদেশমন্ত্রী এমিন ঝাপারোয়া চারদিনের সফরে ভারতে এসেছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথম ইউক্রেনের কোন নেতা ভারত সফরে এসেছেন। এর আগে তিনি এক বিবৃতিতে ভারতের ঢালাও প্রশংসা করেন।ইউক্রেন অতিরিক্ত ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ করেছে, ইউক্রেন। বুধবার বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এই তথ্য জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির যুদ্ধকবলিত ইউক্রেনের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এমিন ঝাপারোয়া কে? তার ভারত সফরের সূচি কী? ভারত সফরের এজেন্ডা কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ? রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ভারতের অবস্থান কী?
এমিন ঝাপারোয়া কে?
এমিন ঝাপারোয়া বর্তমানে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সরকারের প্রথম ডেপুটি বিদেশমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ৩৯ বছর বয়সী ঝাপারোয়া রাজনীতিতে আসার আগে পেশায় ছিলেন এক সাংবাদিক।
১০ জুন ২০২০ থেকে, তিনি ইউক্রেনের প্রথম ডেপুটি বিদেশমন্ত্রী হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে নিয়োজিত ইউক্রেনের জাতীয় কমিশনের চেয়ারম্যানও।
তার ভারত সফরের সূচি কী?
এমিন ঝাপারোয়া ৯ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত ভারতে একটি সরকারী সফরে রয়েছেন। সফরের সময়, ঝাপারোয়ার বিদেশমন্ত্রকের সচিব (পশ্চিম) সঞ্জয় ভার্মা, বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী মীণাক্ষী লেখি এবং জাতীয় নিরাপত্তার ডেপুটি উপদেষ্টা বিক্রম মিস্রির সঙ্গে এক বৈঠক করেন।
ভারত সফরের এজেন্ডা কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর এটিই ইউক্রেনের উপ-বিদেশমন্ত্রী এমিন ঝাপারোয়ার এটাই প্রথম সরকারি সফর। একটি সরকারী বিবৃতিতে বলা হয়েছে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থকে আরও এগিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যেই তাঁর এই ভারত সফর। কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ৩০ বছরে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাণিজ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে অগ্রগতি হয়েছে। পাশাপাশি তিনি বলেন জেলেনস্কি জি-২০ বৈঠকে ভাষণ দিতে পেরে খুশিই হবেন। এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জি-২০ বালি সম্মেলনে বিশ্ব নেতাদের বলেছেন যে রাশিয়ার যুদ্ধ এখনই শেষ করতে হবে।
সূচি অনুযায়ী সফরের প্রথম দিনে তিনি নয়াদিল্লিতে বিদেশ সচিব (পশ্চিম) সঞ্জয় ভার্মার সঙ্গে বৈঠক করেন। ইউক্রেনের সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সঞ্জয় ভার্মাকে বিশদে জানান তিনি। এরপর এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, কীভাবে তার দেশ রাশিয়ার অপ্রীতিকর আগ্রাসন মোকাবেলা করতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভলোদিমির জেলেনস্কি উদ্যোগ এবং ভারতের ভুমিকার কথাও তুলে ধরেন।
সফরের তৃতীয় দিনে তিনি বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী মীণাক্ষী লেখি সঙ্গে দেখা করেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন যে মন্ত্রী লেখির সঙ্গে তাঁর একটি ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। বিনা উস্কানিতে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রচেষ্টার বিষয়ে তিনি এই বৈঠকে আলোচনা করেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষ করে সংস্কৃতিতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ওপরও এদিনের এই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
ভারত নিয়ে কী বললেন ঝাপারোয়া?
ইউক্রেন-রাশিয়া বিরোধ সমাধানে ভারতের ভূমিকার প্রশ্নে, ঝাপারোয়া বলেন, " ভারত ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের জি-২০ সম্মেলনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানাবে এবং কিয়েভের সঙ্গে রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা জোরদার করবে। ভারতের জি-২০ সভাপতিত্ব বিশ্ব একতার ভাবনাকে প্রচার করার জন্য কাজ করবে হিসেবে, গ্লোবাল সাউথের নেতা হিসাবে, বৈশ্বিক সমস্যা, চ্যালেঞ্জ, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, জ্বালানি চ্যালেঞ্জগুলি সমাধানে ভারতের এক গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রয়েছে। একই সঙ্গে পারমাণবিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভারতের অবস্থান সেদেশের কাছে বিশেষ ভাবে তাৎপর্যপুর্ণ। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে ঝাপারোয়া বলেন, ইউক্রেন অন্যান্য দেশের সঙ্গে রাশিয়ার অর্থনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে নির্দেশ দেওয়ার মত কোন অবস্থানে নেই। আমরা মনে করি, শক্তির সঙ্গে সামরিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের বৈচিত্র্য আনতে ভারতের বাস্তববাদী হওয়া উচিত।
প্রধানমন্ত্রী মোদীকে স্বাগত জানাতে আগ্রহী
ঝাপারোয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ইতিমধ্যেই ইউক্রেন সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চাই। ঝাপারোয়া বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে স্বাগত জানাতে মুখিয়ে আছি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী মোদী বৈশ্বিক ফোরামে তাঁর স্পষ্ট বক্তৃতায় বলেছেন যে ‘এটি যুদ্ধের যুগ নয়’। যুদ্ধের প্রভাব সারা বিশ্বে দেখা গেছে। যুদ্ধের কারণে বিশ্ব বাণিজ্য বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ভারতের অবস্থান কী?
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদী রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা বলেছেন এবং ভারত প্রকাশ্যে বলেছে যে কূটনীতি এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই চলমান সংঘাত মেটাতে হবে। কূটনীতিই সমাধানের একমাত্র উপায়।