প্রায় দু’বছর ধরে করোনা পরিস্থিতি ভারতের অর্থনীতিকে ক্রমশ দুর্বল করেছে। গত ডিসেম্বরেই চড়া হয়েছে বেকারত্বের হার। মাঝে কিছুদিন হলেও নিউ নর্মালে ফিরেছিল জীবন এবং জীবিকা। দেশে ক্রমবর্ধমান ওমিক্রন পরিস্থিতি আবারও কি নতুন করে অর্থনীতিকে ঠেলে নিয়ে যাবে মৃত্যুর মুখে প্রশ্নটা অনেকের মনেই উঠতে শুরু করেছে। যদিও ইতিমধ্যেই দেশের বেহাল অর্থনীতি নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে বিরোধী শিবির। তবে রাষ্ট্রসংঘের একটি রিপোর্ট ঘিরে ফের তোলপাড় শুরু হয়েছে। কি জানানো হয়েছে সেই রিপোর্টে?
নয়া এই রিপোর্ট অনুসারে, করোনা দ্বিতীয় ঢেউকালে যেভাবে মার খেয়েছিল ভারতের অর্থনীতি,ওমিক্রনের প্রভাবে আরও একবারের জন্য মুখ থুবড়ে পড়তে পারে দেশের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো। ফ্ল্যাগশিপ ইউনাইটেড নেশনস ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক সিচুয়েশন অ্যান্ড প্রসপেক্টস (ডব্লিউইএসপি) ২০২২ রিপোর্টেও উঠে এসেছে একই সাবধানবানী। রিপোর্টে বলা হয়েছে করোনার এই নয়া ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে আরও একবার ছারখার হয়ে যেতে পারে দেশের অর্থনীতি। ডেল্টা ভ্যরিয়েন্ট যেভাবে ভারতকে ছারখার করেছে সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে এবারও। রিপোর্ট অনুসারে গত বছর এপ্রিল থেকে জুন এই সময়কালের মধ্যেই ভারতে প্রায় ২ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষ করোনার বলি হয়েছেন। ওমিক্রন যেভাবে তার ব্যপ্তি বিস্তার করছে তাতে দ্বিতীয় ঢেউয়ের সেই একই ছবি আবারও আমাদের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠতে পারে সাবধানবানী রাস্ট্রসংঘের।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউকালে একই সঙ্গে ভেঙ্গে পড়েছিল দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। রাষ্ট্রসংঘের অর্থনীতি এবং সামাজিক বিষয়ক গবেষক, লিউ জেনমিন বলেছেন, 'করোনার বিরুদ্ধে প্রয়োজন এক ঐক্যবদ্ধ লড়াই। তার জন্য বিশ্বের সকল দেশকে একযোগে এগিয়ে এসে লড়াই করতে হবে, ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রয়োজন একটা সার্বিক প্রয়াস'। ভারতের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, এখনও পর্যন্ত ১৫৪ কোটি ৬১ লক্ষেরও বেশি টিকাদান সম্পূর্ণ হয়েছে। করোনার দ্বিতীয় মহামারি সময়ে দেশে ক্রমশ আক্রান্ত এবং মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণ রূপে প্রায় ভেঙ্গে পড়েছিল।
ডেল্টার থেকেও ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। দেশে সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা ফের একবার রেকর্ড ছুঁতে চলেছে। ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা শীঘ্রই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের রেকর্ড ছাপিয়ে যাবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আপেক্ষিকভাবে ধীর গতিতে টিকাদান কর্মসূচী, একটা দেশকে যে কোন মহামারীর সঙ্গে লড়াইয়ে অনেকটা ব্যকফুটে ঠেলে দেয়। এবং বারবার মহামারি সেই দেশ তথা বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বারবার আঘাত হানতে সক্ষম হয়। জনবহুল দেশের পক্ষে এই ধরনের প্যানডেমিক পরিস্থিতি সামনে ওঠা রীতিমত চ্যালেঞ্জের। এপ্রসঙ্গে ২০২১ সালে ডিসেম্বরের প্রথম দিকে, যেখানে বাংলাদেশ, নেপাল এবং পাকিস্তানে মোট জনসংখ্যার ২৬ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনতে পেরেছিল, সেখানে ভুটান, মালদ্বীপ এবং শ্রীলঙ্কায় একই সময়ে সংখ্যাটা প্রায় ৬৪ শতাংশের কাছাকাছি ছিল।