বাদ 'ফেয়ার', বর্ণবৈষ্যমের প্রতিবাদে 'লাভলি' ঘোষণা হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের

প্রায় পাঁচ দশক ধরে চলে আসা 'ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি' ব্র্যান্ডের নাম থেকে এবার 'ফেয়ার' শব্দটি বাদ দিতে চায় সংস্থা।

প্রায় পাঁচ দশক ধরে চলে আসা 'ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি' ব্র্যান্ডের নাম থেকে এবার 'ফেয়ার' শব্দটি বাদ দিতে চায় সংস্থা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
fair and lovely

বদল হতে হতে ব্র্যান্ডের নামও

প্রায় পাঁচ দশক সময় লাগল। সৌন্দর্য্যের ধারণায় 'ফেয়ারনেস’ যে অপরিহার্য নয় বরং পরিহার্য তাতে স্বীকৃতি মিলল। বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য করা ইউনিলিভার সংস্থার ভারতীয় শাখা হিন্দুস্থান ইউনিলিভার বৃহস্পতিবার একটি বিবৃতিতে জানায়, "সৌন্দর্য্যকে আরও গভীরভাবে দেখার ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডের নাম থেকে ফেয়ার শব্দটি বাদ দেওয়া হচ্ছে। এমনকী হোয়াইট/হোয়াটনিং, লাইট/লাইটনিং-এর মতো শব্দও বাদ দেওয়া হবে সংস্থার সমস্ত বিপণন প্রয়াস থেকে।"

Advertisment

ইউনিলিভার বিউটি অ্যান্ড পার্সোনাল কেয়ার-এর প্রেসিডেন্ট সানি জৈন বলেন, "আমরা সবরকমের স্কিন টোন এবং ত্বকের সমস্ত সুরক্ষার বিষয়ে বিশ্বের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এখন সেই সময় যখন সৌন্দর্য্য এবং তার বৈচিত্রকে আরও বৃহত্তরভাবে উদযাপন করা উচিত। আমরা দেখলাম ফেয়ার, হোয়াইট, লাইট- এই শব্দগুলি একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গিকে বারবার নির্দেশ করছে। আমাদের এটা ঠিক মনে হয়নি। আর সেটাই আমরা জানাতে চাইছি।"

এশিয়ায় পণ্যের বিজ্ঞাপণ এবং প্যাকেজিং বদলের পাশপাশি ব্র্যান্ডের নাম বদলানোর কথাও জানিয়েছেন সানি জৈন। সংবাদসংস্থা পিটিআই-এর রিপোর্ট অনুসারে জুনের ১৭ তারিখ পেটেন্ট ডিজাইন এবং ট্রেডমার্ক কন্ট্রোলার জেনারেলের কাছে নাম বদলানোর সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। 'ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি'-র বদলে 'গ্লো অ্যান্ড লাভলি' নামের প্রস্তাব জানিয়েছে ইউনিলিভার।

উল্লেখ্য, শুধুমাত্র ভারত থেকে এই একটি ব্র্যান্ড ব্যবসা করত ৫০ কোটি মার্কিন ডলার। এছাড়াও বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং এশিয়ার অন্যান্য দেশেও জনপ্রিয় ছিল  ইউনিলিভারের এই অতিপরিচিত ব্র্যান্ডটি। হিন্দুস্থান ইউনিলিভারও এর দ্বারা প্রভাবিত। মার্কিন মুলুকে জর্জ ফ্লয়েডের উপর চরম অমানবিক আক্রমণ ও করুণ পরিণতির পর সম্প্রতি 'ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটার্স' প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে দুনিয়া জুড়ে। অনলাইনে পিটিশন দায়ের করা হতে থাকে ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি’ ব্র্যান্ডের নামের বিষয়ে জবাবদিহি চাওয়া হয়। যদিও ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি-র পাশপাশি লরিয়ল প্যারিস, শিশেইডো, পি অ্যান্ড জি মূলত ফেয়ারনেশ ক্রিমের ব্যবসাতেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেই সব সংস্থার বিজ্ঞাপনের মুখ হিসেবে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, ক্যাটরিনা কাইফ, দীপিকা পাডুকোন, সোনম কাপুর, ইয়ামি গৌতম ও শাহরুখ খান-সহ বলিউডের একাধিক বিশিষ্ট অভিনেতাদের দেখা গিয়েছে।

Advertisment

ইউনিলিভারের এই সিদ্ধান্তকে 'ফেয়ার' মনে করছেন বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে সরব হওয়া 'ডার্ক ইজ বিউটিফুল'-এর প্রচারক কবিতা ইম্যানুয়েল। তিনি বলেন, "ভারতে বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ের একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে। তবে দুঃখের বিষয় একটাই, প্রায় ১০ বছর সময় লাগবে বিষয়টি বাস্তবায়িত হতে। এর আগে আমরা অনেক সংস্থাকে চিঠি দিয়েছি প্রতিবাদ জানিয়ে। কিন্তু সবসময় আমাদের উপেক্ষা করে আসা হয়েছে।"

তবে এর আগে অপর এক বহুজাতিক সংস্থা জনসন অ্যান্ড জনসন ভারত-সহ এশিয়ার দেশগুলিতে তথাকথিত ফর্সা হওয়ার ক্রিম বিক্রি করা বন্ধ করে দিয়েছিল। সম্প্রতি শাদি ডট কমের মতো ম্যাটরিমোনিয়াল সাইটেও 'স্কিন টোন' ফিল্টার অপশনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

Read the full story in English

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

national news