করোনা কাঁপুনি ধরাচ্ছে বানিজ্যনগরীতে। রোজই বেড়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা। পুনে, থানে, রায়গড় এবং পালঘর সহ মুম্বাই এবং শহরতলির ছ’টি জেলার মধ্যে সাপ্তাহিক কোভিড পজিটিভিটি হার এবং সক্রিয় রোগীর সংখ্যা রেকর্ড হারে বেড়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব এই নির্দেশে রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য সচিবকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চিঠিও দিয়েছেন। স্বভাবতই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। ফের এক দফায় করোনা পরীক্ষায় জোর দিতে নির্দেশ বৃহন্মুম্বই পুরসভার কমিশনার ইকবাল সিং চাহালের। এরই পাশাপাশি শহরে করোনার টিকাকরণ অভিযানও দ্রুত হারে পরিচালনার পরামর্শ কমিশনারের।
অতিরিক্ত মুখ্য সচিব ডঃ প্রদীপ ব্যাসকে ৩ জুন তারিখের একটি চিঠিতে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ রাজ্য জুড়ে কঠোর নজরদারি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। রাজ্যে গত এক সপ্তাহের মধ্যে রেকর্ড হারে বেড়েছে সংক্রমণ। ২৭ মে রাজ্য অ্যাকটিভ আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৪৭১জন। সেখান থেকে ৩ জুন এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪,৮৮৩-তে। সেই সঙ্গে ইতিবাচক হার বেড়ে হয়েছে ১.৫ শতাংশ ৩.১ শতাংশে । পরিসংখ্যান অনুসারে গত এক মাসে মহারাষ্ট্রে অ্যাকটিভ আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে তিনগুণ।
২৭ মে থেকে ২ জুন সপ্তাহে, মুম্বাই শহরতলিতে ২৩৩০টি, মুম্বাইতে ৯৯৪টি, থানে ৫৭৫টি, পুনেতে ৩৮২টি, রায়গড়ে ১২০টি এবং পালঘরে ৫৫টি করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের রিপোর্ট অনুসারে, শুক্রবার পর্যন্ত রাজ্যে করোনা সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৫,১২৭ জন।
কোভিডের এই বাড়বাড়ন্ত নিয়ে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলার সময় রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব ডঃ প্রদীপ ব্যাস বলেছেন, “মানুষের মধ্যে করোনা নিয়ে ভয়ভীতি অনেকটাই কমে গেছে, তারা একে অপরের সঙ্গে কোভিড বিধি না মেনেই মেলামেশা করছেন যার ফলেই সংক্রমণ বেড়েছে হুহু করে”। সেই সঙ্গে নতুন সংক্রমণের কারণ হিসাবে ওমিক্রনের নয়া প্রজাতিকেও দুষেছেন তিনি। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুসারে ৩১ মে পর্যন্ত রাজ্যে মোট ১৬,৩৬,৩২০ জন কোভিডের বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেছেন। কোভিড টাস্ক ফোর্সের অন্যতম সদস্য ডাঃ প্রদীপ আওয়াতে বলেন, ” এখনও অনেকেই বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেননি ফলে করোনা ফের রাজ্যে তার আধিপত্য জানান দিচ্ছে”।
আরও পড়ুন: KK’র বিতর্কিত মৃত্যুর পরই তড়িঘড়ি আয়োজকদের কড়া নির্দেশ কলকাতা পুলিশের
করোনার সংক্রমণ দেশে ছড়ানোর পর মহারাষ্ট্রেই তা সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক আকার নিয়েছিল। করোনায় মৃত্যু মিছিল দেখেছে মারাঠাভূমি। একটা সময়ে মাত্রাতিরিক্ত সংক্রমণে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল বাণিজ্যনগরী মুম্বই। কাতারে-কাতারে মানুষ ফি দিন করোনায় কাবু হয়েছেন মুম্বইয়ে। যদিও পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে সংক্রমণ কমতে থাকায় স্বাভাবিক হয় পরিস্থিতি।
তবে গত কয়েকদিন ধরে নতুন করে মুম্বই শহরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। উদ্বেগও চরমে উঠেছে। স্বভাবতই ঘুম উড়েছে বৃহন্মুম্বই পুরনিগমের। পুর কমিশনার ইকবাল সিং চাহাল কর্মীদের সংক্রমণ মোকাবিলায় আরও বেশি সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ”বর্ষা আসার ঠিক আগেই করোনার এই সংক্রমণ-বৃদ্ধি উদ্বেগজনক। আমাদের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য পরিকল্পনা করে এগোতে হবে।”
যুদ্ধকালীন তৎপরতার ভিত্তিতে এবার মু্ম্বই শহরে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এরই পাশাপাশি টেস্টিং ল্যাবগুলিকেও সক্রিয় থাকার পরামর্শ কমিশনারের। শহরের ১২-১৮ বছর বয়সী শিশুদের দ্রুত টিকাকরণের আওতায় আনার এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বুস্টার ডোজ প্রয়োগে সবরকম তৎপরতা নিতেও পুরনিগমের কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কোভিড কেয়ার সেন্টারগুলিকেও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।