বিগত কয়েক দিনে সংশোধিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন-এনআরসির বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু হয়েছে। আর এর মধ্যেই উত্তর প্রদেশে যোগী সরকারের বিরুদ্ধে বিধানসভায় বিক্ষোভ দেখালেন খোদ বিজেপি বিধায়করাই। সেই বিক্ষোভে আবার শামিল হলেন বিরোধী দলের বিধায়করাও। দেশের সর্ববৃহৎ রাজ্যের দলীয় বিধায়কদের এহেন আচরণে অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির। তবে সিএএ বা এনআরসি নয়, বিজেপি বিধায়কদের ইস্যু পৃথক। আপাতত বিষয়টিকে এড়িয়ে ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টায় মরিয়া পদ্ম শিবির।
নন্দকিশোর গুর্জর নামে এক বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে রুজু হওয়া ফৌজদারি মামলাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভের সূত্রপাত। পরবর্তী সময়ে এই বিক্ষোভ ধর্নার রূপ নেয়। বিক্ষুব্ধ বিজেপি বিধায়কদের দাবি, বিধায়ক হলেও বিধানসভায় তাঁদের মুখই খোলার অধিকার নেই। স্পিকার ও দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের অসন্তোষ প্রশমণের চেষ্টা করলেও তাতে লাভ হয়নি।
রাজ্যের এক ফুড ইনস্পেক্টরের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে নন্দকিশোর গুর্জরের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়। কিন্তু অভিযুক্ত বিধায়ক দাবি করেন, তিনি নির্দোষ। সোমবার বিধানসভায় এই প্রসঙ্গে কথা উঠলে গুর্জর সেখানেই নিজের সপক্ষে বক্তব্য রাখতে শুরু করেন। গাজিয়াবাদের জেলা প্রশাসন এবং পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগও আনেন তিনি। কিন্তু অভিযোগ, স্পিকার হৃদয়নারায়ণ দীক্ষিত দলের ওই বিজেপি বিধায়ককে থামিয়ে দেন। তাঁকে বলা হয়, এই বিষয় নিয়ে বিধানসভায় তিনি যেন কোনও কথা না বলেন। গুর্জর অবশ্য নিজের দাবিতেই অনড় ছিলেন।
আরও পড়ুন: কী করে মোহান্ত থেকে মুখ্যমন্ত্রী, যোগী আদিত্যনাথের সাফল্যের রহস্যভেদ
ইস্যুটিকে নিয়ে বিজেপির অভ্যন্তরে বিবাদের আঁচ বুঝতে পেরেই বিধানসভায় বিধায়ক গুর্জরের দাবির পক্ষে সোচ্চার হন বিরোধী এসপি, বিএসপি ও কংগ্রেস বিধায়করা। গুর্জরকে তাঁর কথা বলতে দেওয়া হোক বলে দাবি করেন বিরোধীরা। কিন্তু পরিষদীয় মন্ত্রী সুরেশ খান্না বারংবার তাঁর দলের বিধায়ককে বসে পড়তে বলেন। এতেই ক্ষুব্ধ বিধায়ক আরও সুর চড়ান। বিজেপি বিধায়কের চেঁচামিচিতে বেশ কয়েকবার মুলতুবিও হয়ে যায় উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা।
এক সময় অধিবেশন কক্ষেই ধর্নায় বসে পড়েন বিজেপি বিধায়ক গুর্জর। দলের অন্যান্য বিধায়করাও একে একে তাঁকে সমর্থন করেন। বিধানসভার মধ্যে স্লোগান ওঠে 'বিধায়ক একতা জিন্দাবাদ'। এরপরই ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিরোধী দলের বিধায়করাও। শেষ পর্যন্ত মন্ত্রীর ও স্পিকারের আশ্বাসে ধরনা প্রত্যাহার করা হয়। পরে স্পিকার বলেন, 'এটা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বিধানসভার বাইরেই ব্যাপারটা মিটিয়ে নেওয়া হবে।'
শাসক পক্ষের এহেন অবস্থা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করলেও বিরোধী দলনেতা রাম গোবিন্দ চৌধুরী বলেন, 'সব সময় নিয়ম মেনে কাজ হয় না। বিধায়কের দাবি আগে শুনতে হবে। তাঁর ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে এই সভায়।' সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ সিং যাদব টুইটে লেখেন, 'আশ্চর্য ঘটনা। বিজেপি শাসনে তাদের দলের বিধায়করাই ধর্নায় বসছে বিধানসভায়। মুখ্যমন্ত্রী যোগীর আমলে তাঁর দলের বিধায়করাই অসন্তুষ্ট।' কংগ্রেসের পরিষদীয় নেত্রী আরাধনা মিশ্র জানিয়েছেন, 'শাসক দলের বিধায়কদের চেঁচামিচিতে সভা মুলতুবির এই ঘটনা সম্ভবত প্রথমবার ঘটল।' তাঁর দাবি, নন্দকিশোর গুর্জরকে সমর্থন করে প্রায় ১০০ বিজেপি বিধায়ক বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন। তাঁদের দাবিকে সমর্থন করেছে ৬০ বিরোধী বিধায়ক।
Read the full story in English