সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ও প্রস্তাবিত এনআরসির প্রতিবাদে অশান্ত বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ। বিক্ষোভ ও হিংসা ঠেকাতে চলছে পুলিশি ধরপাকড়। এরই মধ্যে ১৯ জন সিএএ- প্রতিবাদীর মৃত্যু হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্নপ্রান্তে প্রায়ই রোজই বিক্ষোভ প্রদর্শন চলছে। শুক্রবার যা প্রবল রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা যোগী সরকারের পুলিশের। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই উত্তরপ্রদেশের অধিকাংশ জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিক্ষোভে মদত, হিংসা ও সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ১,১১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ।
রাজ্য পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, সিএএ বিরোধী প্রতিবাদ আন্দোলনকে হিংসাত্মক করে তোলার অভিযোগে ৩২৭টি মামলা রুজু করা হয়েছে। গ্রেফতারের সংখ্যা ১,১১৩। এছাড়া, আটক করা হয়েছে ৫,৫৫৮ জনকে। এই তালিকায় অধিকাংশই হলেন প্রদেশ কংগ্রেস কর্মী, মানবাধিকার ও সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ। এর আগে ২০১৩ সালে মুজফ্ফারাবাদ দাঙ্গার সময় রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে পড়েছিল। সেই সময়, ৫৬৭টি মামলায় ১,৪৮০ জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। আটকের সংখ্যা ছিল ৫০,০০০। প্রসঙ্গত, ওই দাঙ্গায় ৬৩জন প্রাণ হারিয়েছিলেন।
উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ডিজিপি হেডকোয়ার্টার প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, প্রতিবাদের নামে হিংসা ছড়ানো, হিংসার মদত, হত্যার চেষ্টা, দাঙ্গা, ১৪৪ ধারা লংঘন ও সরকারি সম্পত্তিতে অগ্নি সংযোগের অপরাধে ৩২৭ মামলা রুজু হয়েছে। সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের ক্ষতিপূরণ চেয়ে ৩৭২ জনের কাছে নোটিস পাঠান হয়েছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই লখনউ, ফিরোজাবাদ ও গোরক্ষপুরের বাসিন্দা। এছাড়া বলা হয়েছে, হিংসায় ফিরোজাবাদে ৬, মিরাটে ৪, কানপুরে ৩, সাম্বাল ২, বিজনৌরে ২ জনের প্রাণ গিয়েছে। লখনউ, বারাণসীতে মৃত্য হয়েছে ২ জনের।
পুলিশের দাবি, সিএএ প্রতিবাদ আন্দোলনে হিংসার জেরে ২৮৮ জন পুলিশ কর্মী জখম হয়েছেন। বিক্ষোভ কতটা ভয়াবহ ছিল তা বোঝাতে পুলিশ জানিয়েছে, রাজ্যের হিংসা বিধ্বস্ত জেলাগুলো থেকে ৬৪৭ কার্তুজের খোল এবং ৬৯ তাজা কার্তুজ উদ্ধার হয়েছে। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ৩৫ দেশি পিস্তল। এছাড়াও বলা হয়েছে, ডিসেম্বরের ২০ তারিখ সাম্বালের ক্রাইম ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টর সহ বেশ কয়েকজন পুলিশের সার্ভিস রিভালবার ছিনিয়ে নিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।
আরও পড়ুন: ‘সিএএ বিক্ষোভে নিহত সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসকারীদের বাড়িতে কেন যাব’, বিতর্কে যোগীর মন্ত্রী
সোশাল মিডিয়ায় হিংসার মদত, আপত্তিকর কথা লেখার জন্য ৯৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ১৯, ৪০৯ পোস্ট মুছে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন জেলার এএসপির নেতৃত্বে সিট গঠন করা হয়েছে। তারাই পুরো বিষয়টির উপর কড়া নজর রাখছেন।
শুক্রবার নমাজের পর যাতে হিংসা না ছড়িয়ে পড়ে তার জন্য সতর্ক উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। মিরাট, গাজিয়াবাদ, মুফ্ফরনগর, বুলন্দশহর, সামলি ও আগ্রায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর আগে পুলিশের বিরুদ্ধে পাথর ছুড়তে দেখা গিয়েছে বিক্ষোভকারীদের। বিভিন্ন বাড়ির ছাদ থেকে এই পাথর ছোড়া হয়েছিল বলে দাবি পুলিশের। নতুন করে ড্রোন উড়িয়ে তার সন্ধার করছে পুলিশ। চলছে বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের ফ্ল্যাগ মার্চ।
Read the full story in English