'জয় শ্রীরাম' বলতে জোর করা হয় তাদের, এবং তা করতে অস্বীকার করলে মারধর করা হয়। এমনটাই অভিযোগ করেছে উত্তরপ্রদেশের উন্নাও জেলার এক মাদ্রাসার চার ছাত্র। দারুল উলুম ফইজ-এ-আম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নিসার আহমেদ মিসওয়াহি তাঁর লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার 'জয় শ্রীরাম' বলতে অস্বীকার করায় ওই চার ছাত্রকে মারধর করে চারজন ব্যক্তি। প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয় তাদের।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে মিসওয়াহি জানান, "মাদ্রাসার ছাত্ররা প্রতি বৃহস্পতিবার জিআইসি মাঠে যায় খেলতে, কারণ সেদিন আমাদের হাফ-ছুটি থাকে। ছয়-সাতজন ছাত্র খেলতে গিয়েছিল সেদিন। সেখানে কয়েকজন যুবক এসে পড়ায় কিছু ছাত্র পালিয়ে যায়। এই যুবকরা শুধু যে ছেলেদের মারধর করে তাই নয়, আপত্তিজনক ভাষাও ব্যবহার করে..."
সেদিন সন্ধ্যায় আইজি (আইন-শৃঙ্খলা) প্রবীণ কুমার এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে দু'দল কিশোরের মধ্যে বচসার জেরেই ঘটে মারধরের ঘটনা। পরে তাতে জড়িত হয়ে পড়ে আরও একটি দলের কিছু সদস্য। "আমাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানে আমরা জানতে পেরেছি যে 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি তোলা হয় নি, এবং এফআইআর-এ উল্লিখিত কয়েকজন ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। তদন্ত চলছে।" প্রসঙ্গত, এফআইআর দায়ের হয়েছে যে চারজনের বিরুদ্ধে, তাঁরা হলেন ক্রান্তি সিং এবং তাঁর দুই সহযোগী আদিত্য শুক্লা ও কমল। চতুর্থ ব্যক্তির নাম জানা যায় নি। শুক্লা এবং কমলকে আটক করেছে পুলিশ, যদিও সিং এখনও অধরা।
আরও পড়ুন: কবিতা লেখার দায়ে আসামে ১০ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর
কোতোয়ালি থানার স্টেশন হাউজ অফিসার দীনেশ চন্দ্র মিশ্র জানিয়েছেন, "অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩২৩ (স্বেচ্ছায় আঘাত করা), ৩৫২ (প্ররোচনা ছাড়াই আক্রমণ অথবা অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ), ৫০৪ (শান্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত অপমান) এবং ৫০৬ (অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন) ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে।"
সম্প্রতি বিজেপির যুব শাখা ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার জেলা সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন ক্রান্তি সিং। সংগঠনের জেলা প্রধান ভানু মিশ্র বলেন, "এটা একটা চক্রান্ত। এখানে ধর্মের কোনও ভূমিকা নেই। যাঁদের নাম এফআইআর-এ রয়েছে, তাঁরা সেসময় ঘটনাস্থলেই ছিলেন না।"
শুক্রবার একটি টুইট করে উন্নাও-এর পুলিশ সুপার এম পি ভার্মা জানান, "গতকাল (বৃহস্পতিবার), দারুল উলুম মাদ্রাসা থেকে ১০-১২টি ছেলে জিআইসি গ্রাউন্ডে ক্রিকেট খেলতে যায়। সেখানে ক্রিকেট নিয়ে বচসা বাঁধে। ওই ছাত্ররা চার ব্যক্তির দ্বারা আক্রান্ত হয়ে আহত হয়। আমাদের কাছে অভিযোগ এলে আমরা কেস নথিভুক্ত করি। দুজন অভিযুক্তকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এখন পর্যন্ত তদন্তে 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি সম্পর্কিত অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ হয় নি।"
দুই অভিযুক্তকে আটক করার জেরে কোতোয়ালি থানায় বিক্ষোভ দেখায় কিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। শুক্রবার সকালে ভারতীয় জনতা যুব মোর্চা, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বজরং দলের কর্মীরা থানা ঘেরাও করে দাবি জানান যেন ওই দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়, এবং ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হয়। পুলিশ সুপারের কাছে পরে স্মারকলিপি জমা দিয়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বলে, "কোনও নিরপরাধের শাস্তি হওয়া অনুচিত"।