ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইজরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে গাজার সাধারণ নাগরিকদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ এনেছিল। যুদ্ধ এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইজরায়েল তাদের সেই দাবিতেই অনড় থাকে। আত্মরক্ষার অধিকার উল্লেখ করে ইজরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় স্থল অভিযান শুরু করে এবং এরই ধারাবাহিকতায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এখন গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফায় প্রবেশ করেছে।
সেনাবাহিনী দাবি করেছে যে হামাস এই হাসপাতালটিকে মানব ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছে এবং হাসপাতালের নীচে বেশ কয়েকটি বাঙ্কার তৈরি করা হয়েছে যেখান থেকে হামাস যোদ্ধারা ইজরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। এই দাবির ভিত্তিতে ইজরায়েলি সেনাবাহিনী আল-শিফা হাসপাতালে হামলা চালিয়ে এখন হাসপাতালে ঢুকে তল্লাশি চালাচ্ছে।
আল-শিফা হাসপাতাল থেকে অস্ত্র ও গ্রেনেড পাওয়ার দাবি
বুধবার (১৬ অক্টোবর) আল-শিফা হাসপাতালে প্রবেশের পর ইজরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে যে তারা হাসপাতালের ভেতরে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র, হ্যান্ড গ্রেনেড সহ একাধিক অস্ত্র সরঞ্জাম খুঁজে পেয়েছে। সেনাবাহিনী দাবি করেছে যে তারা আল-শিফায় হামাস যোদ্ধাদের ইউনিফর্মও পেয়েছে। ইজরায়েলি সেনাবাহিনী আল-শিফার এমআরআই সেন্টারে তল্লাশি চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
এদিকে আমেরিকাও ইজরায়েলের দাবিকে সমর্থন করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, "আমাদের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে যে হামাস আল-শিফার মতো অনেক হাসপাতালে বাঙ্কার তৈরি করেছে যাতে তারা সাধারণ নাগরিকদের মানব ঢাল হিসাবে কাজে লাগিয়ে তাদের কার্যক্রম চালাতে পারে।"হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, হামাস যা করছে তা যুদ্ধ আইনের লঙ্ঘন। কোনো হাসপাতাল থেকে এই ধরণের কাজ অগ্রহণযোগ্য । কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে যুদ্ধে হাসপাতালে হামলা করা বা হাসপাতালকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন নয়?
আন্তর্জাতিক আইন কি বলে?
জেনেভা কনভেনশনের প্রথম প্রটোকল অনুযায়ী, যুদ্ধে কোনো পক্ষ সাধারণ নাগরিকদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করলে তা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলের হাসপাতালগুলো মানবিক আইনের অধীনে সুরক্ষিত থাকলেও, যদি হাসপাতাল প্রাঙ্গণ সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয় তাহলে এই মর্যাদা নষ্ট হয়ে যায়।
আইন অনুযায়ী কোনো হাসপাতালকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হলে হামলা হলে কোনো পক্ষই যুদ্ধাপরাধে দোষী হবে না, তবে হাসপাতালকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহারকারী পক্ষ হামলার জন্য দোষী হবে।
ইজরায়েলের দাবির সত্যতা কতটুকু?
ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ানের মতে, হামাস মানব ঢাল ব্যবহার করছে এমন অভিযোগের জন্য ইজরায়েল কোনো প্রমাণ দেয়নি। ইজরায়েল এখন পর্যন্ত যত প্রমাণ পেশ করেছে তা হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর পেশ করা হয়েছে। তাই তার দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। আন্তর্জাতিক সংস্থার পর্যবেক্ষকদের মাধ্যমে এ ধরনের অভিযোগ নিশ্চিত করা হয়। যাইহোক, রাষ্ট্রসংঘ ২০১৪ সালে হামাসের বিরুদ্ধে প্রমাণ দিয়েছে যে হামাস যোদ্ধারা আন্তর্জাতিক সংস্থার স্কুলটিকে ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করছে।
গাজার নাগরিকদের প্রতি হামাস কতটা সংবেদনশীল?
হামাস ২০০৭ সাল থেকে গাজায় ক্ষমতায় রয়েছে। ১৬ বছর ধরে সেখানে কোনো নির্বাচন হয়নি। ২০২২ সালে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল হামাসকে স্বৈরাচারী পবলে বর্ণনা করেছিল। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, গাজায় সাধারণ নাগরিকদের উপর দমন-পীড়নের একটি পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। ২০১৯ সালে, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির কারণে সৃষ্ট বিক্ষোভ হামাস অত্যন্ত নৃশংসভাবে মোকাবিলা করে।