বিপজ্জনকভাবে ভুল দিকে মোড় নিচ্ছে ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব), এমনটাই জানাল মার্কিন আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ)। ধর্মীয় মানদণ্ডে বিচার করলে এই বিল উদ্বেগজনক এবং রাজ্যসভায় এই বিল পাস হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত মার্কিন সরকারের, এমনটাই মনে করছে কমিশন। সোমবার মধ্যরাতে লোকসভায় এই বিল পাস হলেও এখন 'ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজনে'র অভিযোগে ঘরে-বাইরে সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে মোদী-শাহকে।
এই প্রেক্ষাপটে লোকসভায় ক্যাব পাসের বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করে ইউএসসিআইআরএফের তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। সেই বিবৃতিতে বলা হয়, "ক্যাবের মাধ্যমে অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু ধর্মের উপর ভিত্তি করেই আইনি যোগ্যতামান নির্দিষ্ট করার মাধ্যমে মুসলিমদের এই ব্যবস্থা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। ক্যাব আদতে ভুল পথে এগনোর জন্য এক ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ। ভারতের যে ধর্মনিরপেক্ষ, বহুত্ববাদী সুমহান অতীত রয়েছে, এই বিল তার পরিপন্থী। ধর্মীয় বিশ্বাসের উর্ধে উঠে সমানাধিকারের যে দর্শন ভারতীয় সংবিধান সুনিশ্চিত করেছে, এই বিল সেদিক থেকেও বিপরীতধর্মী।" উল্লেখ্য, গুজরাট দাঙ্গার পর নরেন্দ্র মোদীর মার্কিন মুলুকে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দিয়েছিল সে দেশের সরকার।
প্রসঙ্গত, প্রস্তাবিত আইন অনুসারে ধর্মীয় নিপীড়নের সম্মুখীন হয়ে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী যাঁরা এদেশে এসেছেন, তাঁদের অবৈধ অভিবাসী হিসেবে গণ্য করা হবে না এবং ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু বিলটিতে মুসলিমদের কোনও উল্লেখ নেই।
এদিকে, আসামের নাগরিকপঞ্জি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউএসসিআইআরএফ। নাগরিকপঞ্জির নামে ইচ্ছাকৃতভাবে মুসলিমদের আতঙ্কিত করা হচ্ছে এবং বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাঁদের দাবি, "আমাদের আশঙ্কা, নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে ধর্মীয় পরীক্ষা নিচ্ছে ভারতীয় সরকার, যা কি না কয়েক কোটি মুসলিমের নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেবে।" টুইট করে তাঁরা বলেন, "নাগরিকত্বের জন্য যে কোনও ধর্মীয় পরীক্ষা মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকারকে ক্ষুন্ন করে।"
আরও পড়ুন: ‘বিভাজনের রাজনীতি, ভয় ও নিরাপত্তাহীনতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে বিজেপি’
প্রসঙ্গত, সাত ঘন্টা ধরে চলা দীর্ঘ তরজার পর সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনে মধ্যরাতে লোকসভায় পাস হয় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়ে দেন, ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ করেছিল কংগ্রেস। এই কারণেই এখন এই বিল আনতে হয়েছে। দেশভাগের ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিভাজনকে প্রশয় দিয়েছে কংগ্রেস, এমনটাই মত পদ্ম শিবিরের। যদিও বিল পেশের পরেই কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিরোধিরা বিলের বিপক্ষে সোচ্চার হয়। লোকসভার কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ‘প্রশাসন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মুসলমানদের নিশানা করছে। সংবিধানের ভিত্তি ধ্বংস করছে এই বিল। ধর্ম যাই হোক না কেন মানবতা বজায় রাখা উচিত’’।
Read the full story in English