মণিপুর হিংসায় এবার পাশে থাকার বিরাট বার্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। আমেরিকার সাহায্য হাত বাড়িয়ে দেওয়া প্রশ্নে মোদী সরকারকে ধুয়ে দিল কংগ্রেস।
গত কয়েক মাস ধরে জাতিগত হিংসার আগুনে পুড়ছে মণিপুর। রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এটি হিংসা এখনও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। এবার হিংসা বন্ধে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল এ প্রসঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি বলেন, ‘মণিপুর হিংসা মোকাবেলায় ভারতকে সাহায্য করতে প্রস্তুত আমেরিকা’।
ভারতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি বৃহস্পতিবার বলেছেন যে মণিপুরের হিংসা মোকাবেলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে সব ধরণের সাহায্য করতে প্রস্তুত। গারসেটি বলেন, ‘শান্তি থাকলে রাজ্যে আরও বিনিয়োগের সম্ভাবনা বাড়তে পারে’।
প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস
এরিক গারসেটির বিবৃতিতে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে, কংগ্রেস সাংসদ মনীশ তিওয়ারি বলেন, ‘একজন আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের পক্ষে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এমন বিবৃতি দেওয়া খুব বিরল। মণীশ তিওয়ারি পাঞ্জাব, জম্মু-কাশ্মীর, উত্তর-পূর্বে আগের চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত তখনও সেই বিষয়ে সতর্ক ছিলেন। তিনি টুইট করেছেন যে 'আমরা কয়েক দশক ধরে পাঞ্জাব, জম্মু-কাশ্মীর, উত্তর পূর্বে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি এবং চতুরতার সঙ্গে তা জয় করেছি'। কংগ্রেস নেতা আরও বলেন, যে 'নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি মার্কিন-ভারত সম্পর্কের জটিল ইতিহাস এবং আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমাদের সংবেদনশীলতার জ্ঞান আছে কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে'।
একই সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এই বিবৃতি একেবারেই পছন্দ নয় কেন্দ্রের। তা খোলসা করে দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক-কূটনৈতিক নীতি নির্ধারণ সম্পর্কে কিছু সুনির্দিষ্ট বাধ্যবাধকতা আছে। কোনও দেশের রাষ্ট্রদূত, অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মতামত পোষণ বা হস্তক্ষেপ করতে পারেন না, যদি তা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তাঁর নিজের দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক স্তরে যুক্ত বিষয় হয়। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এই জাতীয় কোনও প্রস্তাবকে আমরা আমল দিচ্ছি না।' একই সঙ্গে বাগচি আরও বলেন, " মণিপুরে শান্তি ফিরিয়ে আনতে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার সব রকমের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। দেশের সেনাবাহিনী, নিরাপত্তা সংস্থাগুলিও পরিস্থিতির ওপর সদা নজর রেখে চলেছে"।
মহিলা গুলিবিদ্ধ
রাজ্যে স্কুল পুনরায় খোলার একদিন পরে, বৃহস্পতিবার মণিপুরের ইম্ফল পশ্চিম জেলায় এক মহিলাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মণিপুরে হিংসা শুরু হয় যখন মেইতি সম্প্রদায়ের তফসিলি উপজাতির মর্যাদার দাবির বিরোধিতা করতে একটি 'উপজাতি সংহতি মার্চ' সংগঠিত হয়। তারপর থেকে, মেইতি এবং কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত হিংসায় ১২০জনেরও বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছেন।
এক সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি বলেন, আমরা প্রার্থনা করি শান্তি ফিরে আসুক মণিপুরে। আমরা যখন দেখি হিংসায় শিশু এবং সাধারণ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন, তখন উদ্বিগ্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। এর জন্য ভারতীয় হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। আমরা জানি শান্তি অন্য অনেক ভাল কিছুর নজির’।
মার্কিন সাহায্যের প্রস্তাব দিয়ে, গারসেটি বলেছিলেন যে যদি বলা হয়, আমরা যে কোনও উপায়ে সাহায্য করতে প্রস্তুত। আমরা জানি এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং তাও আমরা শান্তির জন্য প্রার্থনা করছি। কারণ শান্তি থাকলেই আমরা আরও সহযোগিতা, প্রকল্প এবং বিনিয়োগ আনতে পারব’।
কলকাতায় তার প্রথম সফরে, তিনি রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং অমিত মিত্রের সাথে দেখা করেন অর্থনৈতিক সুযোগ, সাংস্কৃতিক বন্ধন এবং মহিলা ক্ষমতায়ন সম্পর্কিত একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।