বিশ্বব্যাপী প্রকোপ বাড়াচ্ছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ, ফের লকডাউনে ফিরছে একাধিক রাষ্ট্র। তখন অতিমারীর বিশ্বে শিশুর বাসযোগ্য করে তোলার মতো খবর ফ্লোরিডায়। বিশ্বে এই প্রথম কোভিডের রক্ষাকবচ সঙ্গে নিয়েই জন্ম হল শিশুর। আমেরিকার দক্ষিণ ফ্লোরিডার এই ঘটনায় চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মৃদু, মাঝারি ও ভয়াবহ সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সব রকমের সংক্রমণই রুখে দিতে পারে এমন অ্যান্টিবডি সঙ্গে নিয়েই জন্ম নিয়েছে শিশুটি। তবে সত্যি সত্যিই শিশুটির শরীরের এই অ্যান্টবডিগুলি কোভিড প্রতিরোধে কতটা কার্যকর, সে জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন গবেষকরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্তান সম্ভবা অবস্থাতেই ওই মহিলাকে করোনাভাইরাস টিকার প্রথম ডোজটি দেওয়া হয়েছিল। প্রসবের সময় এগিয়ে আসায় দ্বিতীয় ডোজটি আর তাঁকে দেওয়া সম্ভব হয়নি। প্রসবের আগে ওই মহিলাকে দেওয়া হয়েছিল যে টিকা, তা সব সন্তান সম্ভবাকে দেওয়া হয়। সেই টিকা নিরাপদে প্রসব করানোর জন্য দেওয়া হয়ে থাকে।
তাই কী ভাবে কোভিড রোখার অ্যান্টিবডি সঙ্গে নিয়েই শিশুটির জন্ম হল, সে ব্যাপারে একটি গবেষণাপত্র লিখেছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। গবেষণাপত্রটি রয়েছে এখন ‘পিয়ার রিভিউ’ প্রক্রিয়ায়। যে দুই চিকিৎসক এই প্রসবের ঘটনায় জড়িত, সেই পল গিলবার্ট এবং চ্যাড রুডনিক বলেছেন, ‘প্রসূতি এক জন সামনের সারির স্বাস্থ্যকর্মী। ওঁকে মডার্নার কোভিড টিকার প্রথম ডোজটি দেওয়া হয়েছিল জানুয়ারিতে। ওই সময় উনি ৩৬ সপ্তাহের (৯ মাস) গর্ভবতী ছিলেন। তার ৩ সপ্তাহ পরেই মহিলা শিশুকন্যার জন্ম দেন। নবজাতক সুস্থই আছে।‘
গবেষক চিকিৎসকরা সদ্যোজাতের নাভির কর্ড থেকে রক্তের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন তাতে কোভিডের কয়েকটি অ্যান্টিবডি রয়েছে। আর তা দেখা যায় প্রসবের মুহূর্তেই। এ-ও দেখা গিয়েছে, সেই অ্যান্টিবডি শিশুটি তার মায়ের শরীর থেকে পায়নি। গিলবার্ট বলেছেন, ‘আমরা যতদূর জানি, বিশ্বে এই প্রথম কোভিডের অ্যান্টিবডি শরীরে নিয়েই কোনও শিশুর জন্ম হল।‘
যে সংক্রমণগুলির সঙ্গে মানুষ অনেক দিন ধরে পরিচিত, অনেক ক্ষেত্রে সেগুলির কোনও কোনওটির অ্যান্টিবডি সঙ্গে নিয়েই শিশুদের জন্ম হয়। তার পরেও অনেক সময় সেই অ্যান্টিবডিগুলি শিশুর শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে না, বা সেগুলি ততটা কার্যকর থাকে না বলেই জন্মের পর নির্দিষ্ট সময় অন্তর কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সংক্রামক রোগের টিকা দিয়ে যেতে হয় শিশুদের।
কিন্তু কোভিড রোগের বয়স সবে এক বছর হয়েছে। মানুষের শরীর এখনও সার্স-কোভ-২ ভাইরাসকে ভাল ভাবে চিনে, বুঝে ওঠার সময় পায়নি। তাই মানুষের শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা (‘ইমিউন সিস্টেম’) কোভিড রুখতে অ্যান্টিব়ডি কতটা কী পরিমাণে তৈরি করতে পেরেছে, তা নিয়ে এখনও দোলাচলেই রয়েছেন বিজ্ঞানী, চিকিৎসকরা। এই পরিস্থিতিতে কোভিডের অ্যান্টিবডি সঙ্গে নিয়েই শিশুর জন্মের ঘটনা একেবারেই অভিনব, মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।