ম্যান ভার্সাস ওয়াইল্ড, সঙ্গে বেয়ার গ্রিলস এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী! নরেন্দ্র মোদীর জন্যই নতুন এপিসোড শুট করা হয়েছে। সেইদিক থেকে এটি বিশেষ পর্ব। এর আগেও গ্রিলস আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে ২০১৫-য় একটি বিশেষ পর্বের শুটিং করেছিলেন। ম্যান ভার্সাস ওয়াইল্ড বিশেষ এই পর্বতে মোদীকে উত্তরাখণ্ডের একাধিক জায়গায় শ্যুট করতে দেখা গিয়েছে। এবার সেই স্থানগুলিকে চিহ্নিত করে সেগুলিই পর্যটকদের কাছে একটি প্যাকেজ হিসাবে নিয়ে আসতে চলেছে রাজ্যের পর্যটন দফতর।
পর্যটন দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন “ স্থানগুলি চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে এবং পর্যটকদের ভ্রমণ ও থাকার ব্যবস্থা ব্যবস্থারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে”। উত্তরাখণ্ডের পর্যটন মন্ত্রী সতপাল মহারাজ বলেন, “ক্রোয়েশিয়া সফরের সময় তিনি যখন গেম অফ থ্রোনস ট্যুরের কথা শুনেছিলেন তখন একটি 'মোদী সার্কিট'-এর ধারণা তাঁর মাথায় এসেছিল, যার অংশ হিসাবে পর্যটকদের সেই জায়গাগুলিতে নিয়ে যাওয়া হবে যেখানে বিখ্যাত টিভি সিরিজের শুটিং হয়েছিল। পর্যটকদের সেই সকল স্থান ঘুরিয়ে দেখার ব্যবস্থা করা হবে’।
তিনি বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে মা ভগবতী, শিব, বিষ্ণু, নব-গ্রহ, গোলজু মহারাজ, নাগদেবতা, হনুমান এবং বিবেকানন্দের জন্য বেশ কয়েকটি সার্কিট তৈরি করেছি। আমরা কাজ করছি মোদী সার্কিট নিয়ে। বেয়ার গ্রিলসের সঙ্গে জিম করবেট পার্কে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। আমরা পর্যটকদের প্রধানমন্ত্রী মোদীর সেই সকল ভ্রমণের স্থানগুলিতে নিয়ে যাব, তাদের সেই বিখ্যাত শ্যুটিং স্পটগুলিকে থাকার এবং ঘোরার ব্যবস্থা করা হবে”।
উত্তরাখণ্ডের করবেট জাতীয় অভয়ারণ্যের খরস্রোতা নদীর বুকে ভেলায় ভেসে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী। গভীর জঙ্গলের আলো-ছায়া পথে হাঁটতে হাঁটতে প্রধানমন্ত্রী বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের গুরুত্ব নিয়ে গম্ভীর আলোচনা করছেন সঞ্চালক বেয়ার গ্রিলসের সঙ্গে করবেট অভয়ারণ্যে শুটিং হওয়া এই বিশেষ পর্বটিতে পরিবেশ রক্ষা নিয়ে মানুষের সচেতন হওয়ার গুরুত্বের কথা তুলে ধরেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
যদিও প্রোমোটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পরেই শুরু হয়ে যায় বিতর্ক। বিরোধীরা অভিযোগ করেন, “ ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পুলওয়ামার জঙ্গিহানায় ৪০ জন আধাসেনা নিহত হওয়ার দিনেই ওই তথ্যচিত্রের শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন মোদী সেই সময় কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ করা হয়, “পুলওয়ামার ঘটনার সময় শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সাত দিন পর সাংবাদিক সম্মেলনেও একই অভিযোগ করা হয় কংগ্রেসের তরফে। বলা হয়, ‘‘গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল সওয়া পাঁচটায় একটি জনসভা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তাতে তিনি পুলওয়ামার ঘটনার উল্লেখ করেননি। পাকিস্তানকে দেননি কোনও হুঁশিয়ারিও”।
আরও বলা হয় ‘‘পুলওয়ামার ঘটনার দু’ঘণ্টা পরেও কিছুই জানতেন না প্রধানমন্ত্রী। ওঁরা যদি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সেটা জানতেন, তা হলে দু’ঘণ্টা পরে কেন জনসভায় তার কোনও উল্লেখ করলেন না তিনি”?
যদিও সেই বিতর্ক এখন অতীত। এবার মোদীর হাত ধরেই রাজ্যের পর্যটনকে ঢেলে সাজাতে চাইছে উত্তরাখণ্ড সরকার। রাজ্যের ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস ডিভিশনের অতিরিক্ত সিইও কর্নেল অশ্বিনী পুন্ডির কথায় “তিনি ম্যান বনাম ওয়াইল্ডের পর্বটি তিনি ইতিমধ্যেই দেখেছেন যাতে মোদীকে দেখানো হয়েছে সেই সঙ্গে দেখানো হয়েছে বেয়ার গ্রিলসকে। সেই সব শ্যুটিং স্পটগুলিকে চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে। পর্যটন দফতরের একটি দল ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পে কাজ করছে, বিশেষ করে কোথায় হবে, কীভাবে হবে সেই সব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে”।
তিনি বলেন, “আমি আমাদের সেই বিশেষ দলকে জায়গাগুলির একটি তালিকা তৈরি করতে বলেছি যেখানে গ্রিলস- মোদী শ্যুটিং করেছিলেন, আমরা কোথায় পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করব, কীভাবে সার্কিটকে জনপ্রিয় করে তোলা হবে এবং আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া পরিকল্পনা কী হতে পারে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই চিন্তাভাবনা চলছে। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রীর পর্যটনের অভিজ্ঞতা সকল পর্যটকদের কাছে থাকুক। “পরিকল্পনাটির জন্য আমরা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং জেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটির সহায়তায় এলাকার উন্নয়নে কাজ করব। একাজে আমরা প্রয়োজনে স্থানীয়দের সহায়তা নেব। ”
পাশাপাশি তিনি বলেন “পর্যটকরা নতুন কিছু চায়। উত্তরাখণ্ডের প্রতিটি স্থান সুন্দর তবে আমাদের আকর্ষণের বিন্দু এবং কয়েকটি ক্রিয়াকলাপের অংশ হিসাবে আরও কিছু যোগ করতে হবে। এই সার্কিটের হাত ধরে আমরা সেটাই অর্জন করার পরিকল্পনা করছি। নতুন এই ভাবনার ফলে পর্যটকের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী”।
বিজেপির মুখপাত্র শাদাব শামস এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে “মোদীকে রাজ্যের বৃহত্তম ব্র্যান্ড” বলে অভিহিত করে বলেন, “এই নয়া ভাবনা রাজ্যের পর্যটনকে সাধারণের মধ্যে আরও বেশি আর্কষণীয় করে তুলবে”।