উত্তরকাশী টানেলের খনন কাজ গত ২৪ ঘন্টা ধরে থমকে রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে ড্রিলিং করা ভারী অগার মেশিনের ব্লেড সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। শনিবার সকাল থেকে খবর আসছে, যে এখন টানেলে উল্লম্ব খনন করা হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় ড্রিলিং মেশিন সুড়ঙ্গের উপরের পাহাড়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ চলছে। এদিকে উদ্ধার অভিযানে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক টানেলিং বিশেষজ্ঞ আর্নল্ড ডিক্স সুখবর দিয়েছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'টানেল খননের অনেক পদ্ধতি আছে। এটা প্রয়োজনীয় নয় যে শুধুমাত্র অগার মেশিন দিয়ে ড্রিলিং করা উচিত। এই মুহূর্তে সবকিছুই ঠিক আছে। আমেরিকান অগার মেশিনটি মেশিনটি নষ্ট হয়ে গেছে। এখন এখানে নতুন কোনো অগার মেশিন আসবে না। আমরা অন্যভাবে কাজ করব'।
গত কয়েকদিন ধরে ড্রিলিং করা ভারী অগার মেশিনের ব্লেড সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। জানা গিয়েছে, লোহার রডসহ অনেক কিছুই আসছে অগার মেশিনের সামনে। এ কারণে সেটির ব্লেডটি নষ্ট হয়ে গেছে। এখন টানেলের ভেতরে আটকে পড়া ৪১ জন শ্রমিককে উল্লম্ব ড্রিলিংয়ের মাধ্যমে উদ্ধার করা হবে।এদিকে উদ্ধার অভিযানে বিলম্বের কারণে টানেলে আটকে পড়া তিন শ্রমিকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অন্যদিকে শ্রমিক পরিবারগুলোও চরম হতাশ।
৫৭ মিটার ধ্বংসাবশেষ ড্রিলিং করে, এখন পর্যন্ত ৪৬.৮ মিটার স্টিলের পাইপ ঢোকানো হয়েছে এবং ১০.১২ মিটার ড্রিলিং বাকি আছে। এবার ধ্বংসস্তূপে ২৫ মিলিমিটার রড ও লোহার পাইপ ড্রিলিংয়ে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অগার মেশিন সরিয়ে গ্যাস কাটার দিয়ে প্রতিবন্ধকতা দূর করার কাজ চলছে। মেশিনের সামনে বারবার লোহার জিনিস আসার কারণে খনন কাজ ব্যহত হচ্ছে।
নিউজ এজেন্সি পিটিআই জানিয়েছে, অগার মেশিনটি ধাতব বস্তুতে আঘাতের পর ধসে পড়া উত্তরকাশী টানেলে আটকে পড়া ৪১ জন শ্রমিককে উদ্ধার করতে শুক্রবার আবার খনন কাজ বন্ধ করতে হয়। এর আগে বৃহস্পতিবারও একই কারণে খনন প্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে হয়েছিল। কর্মকর্তাদের মতে, প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে উদ্ধার অভিযান স্থগিত হওয়ার একদিন পর বৃহস্পতিবার খনন প্রক্রিয়াটি বন্ধ করতে হয়েছিল। তবে সমস্যা সমাধানের পর শুক্রবার আবার উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার বন্ধ করে দিতে হয় মেশিনটি। অগারগুলিকে বের করার জন্য পাইপের ভিতরে অগার ব্লেডের ম্যানুয়াল কাটিং শুরু করা হয়েছে।
কর্মকর্তারাও নিশ্চিত করেছেন যে গতকাল রাত ৯টায় শ্রমিকদের কাছে শেষ খাবার পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০০টি রুটি, ১৫ লিটার ডাল, ২৩ লিটার জল এবং ৪০ বোতল সবজি।দীপাবলির দিন থেকে উত্তরকাশীর নির্মাণাধীন টানেলে আটকে পড়া ৪১ জন শ্রমিককে নিরাপদে বের করে আনার প্রচেষ্টায় বারে বারে বাঁধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের। টানেলে আটকে থাকা শ্রমিকদের বের করে আনার সব ধরনের চেষ্টা চলছে কিন্তু প্রতিবারই খনন মেশিন বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। আজ উদ্ধারের ১৪তম দিন। সিল্কিয়ারা টানেলে চলমান উদ্ধার অভিযানের খতিয়ে দেখতে উত্তরকাশী পৌঁছেছেন মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি।
উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা টানেলে চলমান উদ্ধার অভিযানের বিষয়ে একটি বড় আপডেট সামনে এসেছে। ভেতরে ভাঙা মেশিনের ব্লেড কেটে বের করার কাজ চলছে। তাতে আগামীকাল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এর পর টানেলে মেশিনের পরিবর্তে শুধুমাত্র ম্যানুয়াল কাজ করা হবে। যাতে আরও ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত সময় লাগতী পারেই বলেই মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ আগামী দুই থেকে তিন দিন শ্রমিকদের টানেলের ভেতরে অপেক্ষা করতে হবে।
টানেলের ভেতরে থাকা অগার মেশিনটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মেশিনের আগার ভিতরে আটকে গিয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। বর্তমানে উল্লম্ব ড্রিলের প্রস্তুতি জোরদার করা হয়েছে। অন্যদিকে ভিতরে আটকে থাকা শ্রমিকরাও হতাশ হয়ে পড়ছেন বলে জানা গেছে। তাদের মনোবল ক্রমাগত বাড়ানো হচ্ছে, কিন্তু আজ অপারেশন সিল্কিয়ার বাধার কারণে, টানেলে ১৪ দিন ধরে বন্দী শ্রমিকদের মধ্যে হতাশা বেড়েছে।
জানা গিয়েছে, ৫৭ মিটার ধসের বাধা সরাতে অধিকাংশ পথই অতিক্রম করেছে অগার মেশিন। আর মাত্র কয়েক মিটার বাকি। সেই ধস খুঁড়ে ফেলতে পারলেই পৌঁছে যাওয়া যাবে শ্রমিকদের কাছে। কিন্তু সেই কয়েক মিটার খুঁড়তে গিয়েই বারবার বাধা পাচ্ছে অত্যাধুনিক খননযন্ত্র। গতকাল রাতেও অগার মেশিনে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কাজ বন্ধ করতে হয়। যন্ত্রটি যে উঁচু জায়গার উপর রেখে খননের কাজ চালানো হচ্ছিল, সেই জায়গাটিতেও নাকি আবার ফাটল দেখা দিয়েছে। তার জন্যই থমকে যায় উদ্ধারকাজ।