সুড়ঙ্গ জয়! ৪০০ ঘন্টার বিরামহীন অপারেশন, ডজনখানে এজেন্সি, হাজার কর্মীর প্রাণপাতের অজানা কাহিনী চমকে দেবে
উত্তরকাশীর উদ্ধারকাজে সাফল্য শেষে স্বস্তি প্রধানমন্ত্রী মোদী। ‘আপনাদের সাহস এবং ধৈর্য অনুপ্রেরণাদায়ক,’ উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধার হওয়া ৪১ শ্রমিককে মঙ্গলবার এই বার্তাই দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দীর্ঘ ১৭ দিন তিনি গোটা উদ্ধার অভিযান নিরীক্ষণ করেছেন। উদ্ধার অভিযানের খুঁটিনাটির খবর নিয়েছেন। গত ১২ নভেম্বর থেকে সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে আটকে ছিলেন এই শ্রমিকরা। মঙ্গলবার উদ্ধারকারী দল এই নির্মাণ শ্রমিকের কাছে সফলভাবে পৌঁছতে সক্ষম হয়। তাঁদের উদ্ধার করে। তারপরই প্রধানমন্ত্রী মোদী সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেচ্ছা জানিয়ে বার্তা দিলেন। গোটা উদ্ধার অভিযানকে অগ্নিপরীক্ষার সঙ্গে তুলনা করে শ্রমিকদের সাহস এবং ধৈর্যের প্রশংসা করলেন। ১৭ দিন ধরে চলা উদ্ধার অভিযানে কমপক্ষে সাড়ে ৬ শো'র বেশি জন সরকারি কর্মচারীকে মোতায়েন করা হয়েছিল।
Advertisment
অবশেষে স্বস্তি। মুক্তি পেয়ে আকাশ দেখে উচ্ছ্বসিত শ্রমিকরা। টানা ৪০০ ঘন্টা সুড়ঙ্গে আটকে থেকেও পরিবারের চিন্তায় দিন কেটেছে তাদের। শ্রমিকদের অদম্য জীবন শক্তিকে কুর্নিশ জানিয়েছেন গোটা দেশের মানুষ। উদ্ধার অভিযানে রাজ্য এবং কেন্দ্রের এক ডজন সংস্থা, বিশেষজ্ঞদের প্যানেল। সেনাবাহিনীর কাঁধে দায়িত্ব তুলে দেওয়াতেই অবশেষে আসে সাফল্য। ১৭ দিন ধরে চলা উদ্ধার অভিযানে কমপক্ষে ৬৫২ জন সরকারি কর্মচারী দিন রাত এক করে লড়াই চালয়ে গিয়েছেন। এর মধ্যে ১৮৯ জন পুলিশকর্মী। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ১০৬ জন, ইন্দো তিব্বত বর্ডার পুলিশের ৭৭ জন, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৬২ জন, রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৩৯ জন, জল সংস্থা উত্তরকাশী থেকে ৪৬ জন, বিদ্যুৎ বিভাগের ৩২ জন এবং বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন থেকে ৩৮ জন টানা ৪০০ ঘন্টা এই উদ্ধার অভিযানকে মনিটরিং করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রাক্তন উপদেষ্টা এবং উত্তরাখণ্ড পর্যটন বিভাগের স্পেশাল ডিউটি অফিসারের মতে, যারা এই অপারেশনে অবদান রেখেছিলেন তাদের সংখ্যা কমপক্ষে এক হাজার ছাড়িয়ে যাবে। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি বলেছেন যে শুধু ভারতে নয়, উদ্ধার অভিযানে সাহায্য নেওয়া হয়েছে বিদেশের বিশেষজ্ঞদেরও। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গড়করি এবং এমওএস জেনারেল (অব.) ভি কে সিং পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে এবং তা সরজোমিনে খতিয়ে দেখতে সাইট পরিদর্শন করেছিলেন ।
Advertisment
উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের মধ্যে এনডিআরএফ, এসডিআরএফ, বিআরও, ন্যাশনাল হাইওয়ে অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড, নবযুগ, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস কর্পোরেশন, তেহরি হাইড্রো ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন, সাতলুজ জল বিদ্যুৎ নিগম, রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড, ট্রেঞ্চলেস ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস, পাশাপাশি রাজ্য এবং জেলা কর্তৃপক্ষ, এবং সেনা ও বিমান বাহিনী। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আধিকারিকরাও এই অভিযানে জড়িত ছিলেন। উপসচিব মঙ্গেশ ঘিলদিয়াল থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর প্রধান সচিব ডঃ পি কে মিশ্র উদ্ধার অভিযানের প্রতিটি ক্ষেত্রে নজর রেখেছিলেন।
সূত্রের খবর, "সাইটে কাজ করা সমস্ত সংস্থার সঙ্গে একটি সমন্বয় সভা ২০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সংস্থাগুলির প্রধানদের প্রতি ঘন্টার আপডেট নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।" এই বৈঠকেই দেশ জুড়ে উত্তরকাশীতে নিয়ে যাওয়া সমস্ত সরঞ্জাম এবং যন্ত্রপাতিগুলির জন্য একটি গ্রিন করিডোর নিশ্চিত করার নির্দেশও দেওয়া হয়।
সুড়ঙ্গ থেকে একে একে আটকে পড়া শ্রমিকরা বেরিয়ে আসতেই দেশ জুড়ে খুশির আমেজ। প্রধানমন্ত্রী সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ লিখেছেন, ‘আমি সুড়ঙ্গে আটকে পড়া বন্ধুদের বলতে চাই, আপনাদের সাহস এবং ধৈর্য সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমি আপনাদের সকলের মঙ্গল ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। এটি অত্যন্ত তৃপ্তির বিষয় যে দীর্ঘ অপেক্ষার পর আমাদের এই বন্ধুরা এখন তাঁদের প্রিয়জনদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে এই সমস্ত পরিবার যে ধৈর্য এবং সাহস দেখিয়েছে, তা যথেষ্ট প্রশংসনীয়। আমি সকলের উদ্যমকেও প্রণাম জানাই। এই উদ্ধার অভিযানের সাথে জড়িত লোকেদের সাহসিকতা এবং দৃঢ়তা আমাদের শ্রমিক ভাইদের নতুন জীবন দিয়েছে। এই অভিযানের সাথে জড়িত প্রত্যেকেই মানবতা এবং দলগত কাজের বিচারে একটি আশ্চর্যজনক উদাহরণ তৈরি করেছেন।’ রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারের জন্য স্বস্তি এবং আনন্দ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, উদ্ধারকারী দল একাধিক বিপত্তির মধ্যে কাজ করেছে। উদ্ধারকারীদের এই ১৭ দিনের শ্রম, এক বিরাট ‘ধৈর্যের প্রমাণ।’