উত্তরকাশী টানেল দুর্ঘটনায় আটক শ্রমিকদের উদ্ধারে এবার ওপর থেকে শুরু হয়েছে খননকার্য। কোনো বাধা না থাকলে শ্রমিকদের কাছে পৌঁছাতে দু দিন সময় লাগবে এমনটাই জানিয়েছেন উদ্ধারকারী দলের কর্মকর্তারা।
সিল্কিয়ারা টানেলে ১৫ দিন ধরে আটকে থাকা ৪১ জন শ্রমিককে উদ্ধারের জন্য রবিবার ওপরের দিক থেকে শুরু হয়েছে খননকার্য। কোনো বাধা না থাকলে দুই দিনের মধ্যে শ্রমিকরা পৌঁছাতে পারবেন। একই সময়ে, হায়দ্রাবাদ থেকে আনা প্লাজমা এবং লেজার কাটার দিয়ে ৮০০ মিমি পাইপে আটকে থাকা অগার মেশিনের ব্লেড কাটার কাজও চলছে।
পাইপ থেকে মেশিনের ধ্বংসাবশেষ অপসারণের পরে, শুরু হয়ে ম্যানুয়ালি ড্রিলিংয়ের কাজ। পাইপের মাধ্যমে যে পথ তৈরি করা হচ্ছে তাতে মাত্র ১০ মিটার খননকার্য বাকি আছে, তারপর শ্রমিকদের উদ্ধার সম্ভব হবে। ন্যাশনাল হাইওয়ে অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাহমুদ আহমেদ সিল্কিয়ার মিডিয়াকে বলেন, এ পর্যন্ত ২৪ মিটার খনন করা হয়েছে এবং মোট ৮৬ মিটার খনন করা বাকি আছে। টানেলের শীর্ষে এবং অন্যান্য প্রান্তে কাজ দ্রুত করার জন্য আরও দলকে ডাকা হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশের রাজমুন্দ্রি থেকে ওএনজিসির একটি দল ইতিমধ্যেই এসে পৌঁছেছে।
সেনাবাহিনী ম্যানুয়াল ড্রিলিংয়ের জন্য পৌঁছেছে: ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পসের একটি দল উদ্ধার কাজে সাহায্য করার জন্য রবিবার সিল্কিয়ারা পৌঁছেছে। দলে মোট ৩০ জন সদস্য রয়েছেন। বিমান বাহিনীও ইতিমধ্যেই উদ্ধারভিযানে অংশ নিয়েছে। প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা থেকে বিমান বাহিনী অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম পাঠিয়েছে।
চারটি রুট থেকে শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানো হচ্ছে
শীঘ্রই টানেলে আটকে পড়া ৪১ জন শ্রমিকের জন্য সুসংবাদ আসতে চলেছে। রবিবার থেকে চারটি রুটে শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানোর কাজ শুরু হয়েছে। পাইপে আটকে থাকা অগার মেশিনের ব্লেড হায়দ্রাবাদের লেজার কাটার এবং চণ্ডীগড়ের প্লাজমা কাটার দিয়ে কাটা হচ্ছে। এখন এই রুটে ম্যানুয়াল ড্রিলিং হবে। টানেলের শীর্ষে এবং অন্যান্য প্রান্তে খনন করার জন্য আরও দলকে ডাকা হয়েছে। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় কুমার ভাল্লা সোমবার শিলকায়রা পৌঁছেছেন।
টানেল ধসের তদন্ত হওয়া উচিত: ডিক্স
উদ্ধারকাজে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক সুড়ঙ্গ বিশেষজ্ঞ আর্নল্ড ডিক্স বলেন, টানেল ধসের ঘটনা একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। এই তদন্ত করা উচিত। যে এলাকাটি ধসে পড়েছে সেখানে আগে কখনও ভুমিধসের ঘটনা ঘটেনি।
আজ থেকে হাতে খনন শুরু করা যাবে
নোডাল অফিসার ড. নীরজ খয়েরওয়াল জানান, অগার মেশিনের বাকি ১৩.৯ মিটার ব্লেড কাটার সারা রাত ধরে চলেছে। সোমবার থেকে হাতে খনন কাজ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বৃষ্টি বিঘ্ন ঘটাতে পারে
সোমবার উত্তরাখণ্ডে বৃষ্টির জন্য কমলা সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। বৃষ্টি হলে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হতে পারে।
উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলায় টানেল দুর্ঘটনায় ৪১ জন শ্রমিক দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে আটকে আছেন। যেখানে শ্রমিকরা আটকে পড়েছেন সেখানে নেই কোন আলো নেই, অক্সিজেন। এখন সেনাবাহিনীকে উদ্ধার অভিযানের জন্য ডাকা হয়েছে। ম্যানুয়াল ড্রিলিংয়ের মাধ্যমে শ্রমিকদের উদ্ধার করা হবে বলেই সর্বশেষ খবর।
অন্যদিকে সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে শুরু করেছে। আমেরিকা থেকে আনা আগার মেশিন ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে এখন টানেল থেকে শ্রমিকদের সরানোর দায়িত্ব নিতে হচ্ছে সেনাবাহিনীকে।
সেনাবাহিনী কিভাবে শ্রমিকদের উদ্ধার করবে?
ভারতীয় সেনাবাহিনী ম্যানুয়াল ড্রিলিংয়ের মাধ্যমে পথ তৈরির কাজ করবে, তবে ম্যানুয়াল ড্রিলিংয়ের আগে, অগার মেশিনের আটকে থাকা শ্যাফ্ট এবং ব্লেডগুলি সরিয়ে ফেলতে হবে। উত্তরাখণ্ড সরকারের সেক্রেটারি এবং নোডাল অফিসার নীরজ খাইরওয়াল বলেছেন যে পাইপের ভিতরে মাত্র ১৩.৯ মিটার অগার মেশিনের ব্লেড কাটার কাজ বাকি রয়েছে। সোমবার সকালের মধ্যে অগারের আটকে থাকা অংশ কেটে পাইপ থেকে বের করে নেওয়া হবে। অর্থাৎ শ্রমিকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য যে অগার মেশিনটি ডাকা হয়েছিল। এখন এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দুটি পরিকল্পনায় কাজ চলছে
টানেলে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারে দুটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। একদিকে সেনাবাহিনী ম্যানুয়াল ড্রিলিং করছে। অন্যদিকে প্ল্যান বি-এর আওতায় ভার্টিক্যাল ড্রিলিং করে শ্রমিকদের উদ্ধারের প্রস্তুতি চলছে।
উদ্বিগ্ন শ্রমিক পরিবার
টানেল থেকে শ্রমিকপরিবারের ধৈর্যের বাঁধও বাড়তে শুরু করেছে। টানেলে আটকে পড়া শ্রমিক রাজেন্দ্রের বাবা শ্রাবণ বেদিয়া বলেন, আমরা আমাদের ছেলের উদ্ধারের অপক্ষায় প্রহর গুনছি। তিনি বলেন, আমি প্রতিবন্ধী এবং ছেলের ওপর নির্ভরশীল। অন্য শ্রমিকদের পরিবারেরও একই অবস্থা।
১২ নভেম্বর থেকে শ্রমিকরা আটকা পড়েছে
১২ নভেম্বর, ভোর ৫.৩০ মিনিটে সিল্কিয়ারা টানেল ধসে পড়ে এবং ৪১ জন শ্রমিক টানেলে চাপা পড়েন। এরপর থেকে অনেক উদ্ধারকারী দল অভিযানে নিয়োজিত রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত শ্রমিকদের উদ্ধার সম্ভব হয়নি। স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসন, এনডিআরএফ, এসডিআরএফ, আইটিবিপি, রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড, ওএনজিসি, ভারতীয় বিমান বাহিনী, ভারতীয় সেনাবাহিনী, বিআরও, এনএইচএআই, তেহরি হাইড্রোপাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন এবং টানেল নির্মাণের অনেক বিশেষজ্ঞ এই মিশনে নিযুক্ত আছেন।
এই আটটি প্রশ্ন উঠছে
প্রথম প্রশ্ন- কেন ওপরের দিক থেকে ড্রিলিং আগে শুরু হয়নি?
দ্বিতীয় প্রশ্ন- কেন ড্রিলিং মেশিনের যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হলো?
তৃতীয় প্রশ্ন- কেন উদ্ধার অভিযান সঠিকভাবে পরিকল্পনা করা হয়নি?
চতুর্থ প্রশ্ন: কৌশলে বারবার পরিবর্তন কেন করা হয়েছিল?
পঞ্চম প্রশ্ন- উদ্ধার কাজের জন্য কেন আমাদের এখনও বিদেশী বিশেষজ্ঞ ও মেশিনের উপর নির্ভর করতে হবে?
ষষ্ঠ প্রশ্ন- কেন বিভিন্ন আধিকারিক উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন সময়সীমা দিচ্ছেন?
সপ্তম প্রশ্ন- সঠিক পরীক্ষা না করে কেন টানেল নির্মাণ শুরু করা হলো?
অষ্টম প্রশ্ন- শ্রমিকদের পরিবারকে পরিস্থিতি সম্পর্কে সঠিকভাবে জানানো হচ্ছে না কেন?