বীরাপ্পন, নাম শুনলে এখনও তামিলনাড়ুর পশ্চিম ঘাট জঙ্গলের অনেকের হাড় হিম হয়ে যায়। স্মৃতিতে ভেসে ওঠে অপহরণ, হত্যার ছবি। কিন্তু এবার এই নামই এক অন্য খাতে এগিয়ে চলবে। সদ্য বিজেপির রাজ্য শাখার যুব মোর্চার সহসভাপতি পদ পেয়েই ফোনে একথা জানালেন চন্দনদস্যু বীরাপ্পনের মেয়ে পেশায় আইনজীবী বিদ্যা রানি। ফেব্রুয়ারিতেই গেরুয়া দলে যোগ দিয়েছেন বিদ্যা।
আপাতত কৃষ্ণগিরিতে একটি স্কুল চালান বিদ্যা বীরাপ্পন। তামিলনাড়ুতে এখনও কল্কে পায়নি বিজেপি। ভান্নিয়ার জাতির ভোটের কথা মাথায় রেখেই পদ্ম শিবির দলে ঠাঁই দিয়েছে বিরাপ্পন কন্যাকে। এমনটাই মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের। তবে, এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নন বিদ্যা নিজে। তাঁর কথায়, 'আমি কোনও জাতির কথা ভেবে দলে যোগ দিনি। মানবিকতাই আমার কাছে প্রধান বিবেচ্য। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিবিধ জনকল্যাণমূলক পরিকল্পনা তাঁকে বিজেপি-তে যোগ দেওয়ায় অনুপ্রাণিত করেছে। জাত-ধর্ম নির্বিশেষে মানুষকে শিক্ষাদানের মাধ্যমে জনসেবায় অংশগ্রহণ করতে চাই।'
দলে যোগদানের মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় যুব মোর্চার মত সংগঠেন সহসভাপতির পদ মিলেছে। সেই কথা ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমেই জানতে পারেন বীরাপ্পন কন্যা বিদ্যা।
বাবা হলেও ছোট থেকে মাত্র একবারই চন্দন দস্যু বীরপ্পনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল মেয়ের। এদিনও এল প্রয়াত বাবার কথা। মেয়ে বিদ্যার কথায়, 'স্কুলে পড়ি তখন, বয়স সাত বছর হবে, সেই সময় গরমের ছুটিতে একবার ঠাকুরদার বাড়ি কর্নাটকের সীমানায় গোপীনাথমে গিয়েছিলাম। আমি খেলছিলাম। তখনই বাবা বেশ কিছুক্ষণ আমার সঙ্গে কাটিয়েছিল। আমার মনে পড়ে তিনি আমাকে বলেছিলেন, ভাল করে লেখাপড়া করে ডাক্তার হতে, মানুষের সেবা করতে।'
কিন্তু, বাবা বীরপ্পনের বেশ কিছু গল্প মেয়ে বিদ্যাকে উৎসাহিত করে বলে জানিয়েছেন তামিলনাড়ু বিজেপির রাজ্য শাখার যুব মোর্চার সহ সভাপতি। অনর্গলভাবে বিদ্যা বলে চলেন, 'পরিস্থিতি বাবাকে দস্যু হওয়ার দিকে ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু ওঁর এমন অনেক কাজ আমাকে সমাজের হয়ে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে। তিনি রাজনীতি না করলেও তাঁর পদক্ষেপ চারপাশের নানা দিকের দ্বারা প্রবাবিত হত। ভানিয়ার সম্প্রদায়ে বীরপ্পনের কাজ নিয়ে নানা কথা রয়েছে।'
বীরপ্পন কন্যা বিদ্যা বিজেপিতে নাম লেখালেও তাঁর মা মুথুলক্ষ্মী এখনও পিএমকে অনুমোদিত তামিজাঘা ভেজুরিমাই কাটচি সংগঠনের সদস্য। পিএমকে রাজ্যে বিজেপির জোটসঙ্গী।
তবে, বিদ্যা মেনে নিয়েছেন যে, সংগঠনে উচ্চ পদ পেলেও রাজনীতি তাঁর কাছে এখনও অজানা ক্ষেত্র। তবে দায়িত্ব পালনে লড়াই চালিয়ে যেতে চান বিদ্যা। ঠিক যেমনটা ২০১১ সালে নিজের মায়ের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন তিনি। মায়ের অমতেই প্রথা ভেঙে অপর জাতের ছেলেকে বিয়ে করেন তিনি। আপাতত সংসাদ, কাজ ও দল নিয়েই ব্যস্ত বিদ্যা বীরপ্পন।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন