Advertisment

'গোল্ডেন পাসপোর্টে' নিরাপদ আশ্রয়, ৬৬ ভারতীয়’র তালিকায় বিনোদ আদানি, পঙ্কজ ওসওয়াল

"গোল্ডেন পাসপোর্ট" স্কিমটিকে "সাইপ্রাস ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম"ও বলা হয়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
"cyprus confidential, new express investigation, icij investigation, Indians in cyprus confidential, cyprus confidential india list, indian express, ConnectedSky, Cypcodirect, DJC Accountants, Kallias & Associates, MeritKapital and MeritServus, Amy Winehouse, Red Hot Chili Peppers"

গোল্ডেন পাসপোর্টের দৌলতেই নিরাপদ আশ্রয়, ৬৬ জন ভারতীয়’র তালিকায় বিনোদ আদানি, পঙ্কজ ওসওয়াল

গোল্ডেন পাসপোর্ট পাওয়া ৬৬ জন ভারতীয়দের তালিকায় রয়েছে বিনোদ আদানি, পঙ্কজ ওসওয়াল সহ একাধিক বিত্তশালী। ২০০৭ সালে প্রবর্তিত, "গোল্ডেন পাসপোর্ট" স্কিমটিকে "সাইপ্রাস ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম"ও বলা হয়। এটি আর্থিকভাবে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাইপ্রিয়ট নাগরিকত্ব প্রদানের সুবিধা দেয়, যার ফলে দেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ আনা সম্ভব।  

Advertisment

উন্নয়নশীল দেশের তাবড় শিল্পপতি থেকে শুরু করে ধনী ব্যক্তিরা  নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে উন্নত দেশের নাগরিকত্ব বা বসবাসের অনুমোদন পাচ্ছেন, যা গোল্ডেন ভিসা নামে পরিচিত। কেবল মোটা অঙ্কের বিনিয়োগের মাধ্যমে এই ধরণের কিছু দেশে কোন আইনি জটিলতা ছাড়াই নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব।

সাইপ্রাস হল ধনী ভারতীয় এবং এনআরআইদের পছন্দের তালিকায় থাকা এক অন্যতম আস্তানা। ভূমধ্যসাগরে তীরে আরামদায়ক ও বিলাসবহুল জীবন জীবনের জন্য বা অপরাধমূলক অভিযোগ এবং অর্থ পাচারের মামলা থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার জন্য আনেকেই এই দেশের নাগরিকত্ব অর্জন করতে চায়৷

২০০৭ সালে প্রবর্তিত, "গোল্ডেন পাসপোর্ট" স্কিমটিকে "সাইপ্রাস ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম"ও বলা হয়। এটি আর্থিকভাবে প্রতিষ্টিত ব্যক্তিদের সাইপ্রিয়ট নাগরিকত্ব প্রদানের সুবিধা দেয়, যার ফলে দেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ আনা হয়।

সাইপ্রাস সরকারের ২০২২ সালের করা সমীক্ষা অনুসারে দেখা গেছে যে মোট ৭,৩২৭ জন ব্যক্তিকে সাইপ্রিয়ট পাসপোর্ট প্রদান করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ৩, ৫১৭ জন "বিনিয়োগকারী" এবং বাকিরা তাদের পরিবারের সদস্য।

তথ্য দেখায় যে ২০১৪ থেকে ২০২০ এর মধ্যে, ৬৬ জন ভারতীয় সাইপ্রাসের পাসপোর্ট পেতে সক্ষম হয়েছিল – পুরো প্রক্রিয়াটি গড়ে তিন মাস থেকে এক বছর সময় নেয়। সাইপ্রিয়ট নাগরিকত্ব মঞ্জুর করা প্রাথমিক আবেদনকারীদের মধ্যে ছিলেন গৌতম আদানির বড় ভাই বিনোদ শান্তিলাল আদানি।

বিনোদ আদানি, যাকে সবচেয়ে ধনী NRI হিসাবে ধরা হয়। ৯০ এর দশকের গোড়ার দিক থেকে দুবাইতে ছিলেন কিন্তু সাইপ্রাসের পাসপোর্ট বহন করেন। OCCRP ডেটা তাকে রেকর্ডে একজন "বিনিয়োগকারী" হিসাবে দেখানো হয়েছে। যিনি ৩রা  আগস্ট, ২০১৬  "গোল্ডেন পাসপোর্ট" স্কিমের জন্য আবেদন করেছিলেন। মাত্র তিন মাসের মধ্যে,২৫  নভেম্বর, ২০১৬-এ, তার আবেদন মঞ্জুর করা হয় এবং তাকে সাইপ্রিয়ট নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছিল। হিন্ডেনবার্গে  রিপোর্টের পরে, বিনোদ আদানির ভূমিকা, নিয়ে প্রশ্ন তোলে ।

ব্লুমবার্গের একটি রিপোর্টে সম্প্রতি দাবি করা হয়েছে, গৌতম আদানির দাদা বিনোদ আদানি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনটি কোম্পানির ডিরেক্টর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। আমেরিকান শর্ট শেলিং কোম্পানি হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ 24 জানুয়ারি যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল, তাতে বিনোদ আদানির নাম সবচেয়ে বেশিবার উঠে এসেছিল। হিন্ডেনবার্গের ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়, বিনোদ আদানি আদানি গ্রুপ সম্পর্কিত জালিয়াতি করার জন্য অফশোর কোম্পানিগুলির একটি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেছিলেন।

আর একজন বিশিষ্ট ভারতীয় যিনি সাইপ্রিয়ট নাগরিকত্ব অর্জন করেছিলেন তিনি ছিলেন শিল্পপতি পঙ্কজ ওসওয়াল এবং তার স্ত্রী রাধিকা ওসওয়াল। শিল্পপতি পঙ্কজ ওসওয়াল তরল অ্যামোনিয়াম প্রস্তুতকারক Burrup Holdings Limited-এর প্রতিষ্ঠাতা। তথ্য অনুসারে, ২৮ এপ্রিল, ২০১৭-এ, অসওয়ালরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিল এবং এটি মঞ্জুর হতে প্রায় এক বছর সময় লেগেছিল। ঘটনাক্রমে, একবার পঙ্কজ ওসওয়াল তার সাইপ্রিয়ট নাগরিকত্ব পেয়ে গেলে, তিনি সাইপ্রোল লিমিটেড বন্ধ করে দেন।

১৩  অক্টোবর, ২০২০ সাইপ্রাসের মন্ত্রী পরিষদ তার "দীর্ঘস্থায়ী দুর্বলতা এবং আইনের  অপব্যবহার" উল্লেখ করে "গোল্ডেন পাসপোর্ট" প্রকল্পটি পর্যায়ক্রমে বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। OCCRP এবং অন্যান্য মিডিয়া গ্রুপের করা সাইপ্রাসের গোপনীয় তদন্তের পাঠানো প্রশ্নের জবাবে, সাইপ্রাসের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক স্পষ্ট করেছে যে তারা ২৩৩ জনের নাগরিকত্ব বঞ্চিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তাদের মধ্যে ৬৮ জন বিনিয়োগকারী এবং ১৬৫ জন তাদের পরিবারের সদস্য।

সাইপ্রিয়ট পাসপোর্ট প্রত্যাহার করার প্রস্তাবিত তালিকায় শুধুমাত্র একজন ভারতীয় রয়েছেন — অনুভব আগরওয়াল, যার ‘গোল্ডেন পাসপোর্ট’২শে নভেম্বর, ২০১৬-সালে মাত্র চার মাসের মধ্যে অনুমোদিত হয়েছিল। নিকোলাটোস কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে অনুভব আগরওয়াল ন্যাশনাল স্পট এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (এনএসইএল) কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিলেন।  আগরওয়াল এনএসইএল কেলেঙ্কারির একজন "মূল অভিযুক্ত" যেখানে বিনিয়োগকারীদের ৩৬০০ কোটি টাকারও বেশি প্রতারিত করা হয়েছিল। আগস্ট ২০২০  সালে, তাকে আবুধাবিতে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং ২০২০ সালের জুনে, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে।

অনুভব আগরওয়াল ছাড়াও এই তালিকায় রয়েছে নেসামানিমারন মুথু।  তামিলনাড়ুর এক  ব্যবসায়ী এবং তামিলনাড়ু মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান যিনি ২০১৬সালে সাইপ্রিয়ট নাগরিকত্ব অর্জন করেছিলেন।  ২০১৭ সালে তার দুই সন্তানও নাগরিকত্ব পায়। ইডি একটি অফিসিয়াল রিলিজে এমজিএম মারানের সাইপ্রিয়ট নাগরিকত্বের কথাও উল্লেখ করেছে। “ভারতীয় আইনের নাগাল এড়াতে, এমজিএম মারান তার ভারতীয় নাগরিকত্ব ছেড়ে সাইপ্রাসে আস্তানা গড়ে তোলেন।

"গোল্ডেন পাসপোর্ট" প্রাপকদের তালিকায় রয়েছেন  উত্তর প্রদেশের একজন ব্যবসায়ী বীরকরণ অবস্থি এবং তার স্ত্রী রিতিকা অবস্থি । তারাও ২০১৬ সালে সাইপ্রাসের নাগরিকত্ব অর্জন করেছিল।  কিন্তু কয়েক বছর পরে, প্রথমে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ, তারপর দিল্লি পুলিশ এবং তারপরে, ইডি তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে তদন্ত শুরু করে। ২০২০ সালের নভেম্বরে, ইডি এই মামলায় একটি চার্জশিট দাখিল করে, ৭৫০ কোটি টাকার অর্থনৈতিক জালিয়াতির অভিযোগ করে এবং অবশেষে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে, যুক্তরাজ্যের আদালত তাদের প্রত্যর্পণের অনুমতি দেয়। তালিকায় অন্যান্য বিশিষ্ট ভারতীয়দের মধ্যে রয়েছে মুম্বাই-ভিত্তিক রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার সুরেন্দ্র হিরানন্দানি এবং তার পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য।

সাইপ্রাস কনফিডেন্সিয়াল কি?

সাইপ্রাস কনফিডেন্সিয়াল হল ইংরেজি এবং গ্রিক ভাষায় ৩৬ লক্ষ নথির একটি বৈশ্বিক অফশোর কোম্পানি তদন্ত, যা বিশ্বের ধনী এবং ক্ষমতাবানদের দ্বারা সাইপ্রাসের ট্যাক্স হেভেনে অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলির একটি কাগজের ট্রেইল প্রকাশ করে।

তদন্ত, ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (ICIJ) এর সাথে অংশীদারিত্বে পরিচালিত, ৫৫টি দেশ ও অঞ্চলের ৬০টিরও বেশি মিডিয়া হাউসের ২৭০ জনেরও বেশি সাংবাদিককে যুক্ত করেছে।

ডেটা ট্রভ সাইপ্রাসের ছয়টি অফশোর পরিষেবা প্রদানকারীর নথি নিয়ে গঠিত। ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের তথ্য ছাড়াও যারা দেশের গোল্ডেন পাসপোর্ট স্কিমের অধীনে সাইপ্রিয়ট নাগরিক হয়েছেন, এতে পূর্ব ভূমধ্যসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রে উদার কর ব্যবস্থার সুবিধা নেওয়ার জন্য নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সত্তা সম্পর্কিত নথি রয়েছে।

ভারতের তদন্ত কী উঠে এল?

তদন্ত সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির জন্য গোপনীয়তার পর্দা উঠানোর চেষ্টা করে৷ নথিগুলি প্রকাশ করে যে কীভাবে অফশোর রেসিডেন্সি সহ সংস্থাগুলি ভারত থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল এবং এই সংস্থাগুলিতে আর্থিক লেনদেনের জন্য নির্দেশাবলী ভারতের ব্যক্তিদের দ্বারা দেওয়া হয়৷

ED Money Laundering
Advertisment