দেশজুড়ে চলছে গণটিকাকরণ। পয়লা মে থেকে এই তালিকায় ঢুকবে ১৮-৪৫ বছরের নাগরিকরা। কিন্তু শুধু টিকা নিলে চলবে না। মাস্ক পরা এবং দূরত্ব বজায় রাখাও সমান জরুরি। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ঠেকাতে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এমনই পরামর্শ দিয়ে আসছেন চিকিৎসক-গবেষকরা।
এ বার ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর গবেষণায় আরও ভয়ঙ্কর তথ্য উঠে এসেছে। দেখা গিয়েছে, সঠিক সামাজিক দূরত্ববিধি না মানায়, একজন করোনা রোগীর থেকে এক মাসের মধ্যে ৪০৬ জন সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা। তাই করোনাকে ঠেকাতে জন্য সামাজিক দূরত্ব বিধি বজায় এবং লকডাউনের একমাত্র পন্থা। এমনটাই মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
দেশে দৈনিক সংক্রমণ এবং মৃত্যু যে হারে বাড়ছে, তাতে বারবার সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে চলার ওপর জোর দিচ্ছে কেন্দ্র। সোমবার এনিয়ে দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব লব অগরওয়াল। সেখানে তিনিই আইএমআর-এর গবেষণার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘৬ ফুট দূরত্ব থেকেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। বাড়িতে আইসোলেটেড থাকাকালীনও এমনটা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর মাস্ক না পরলে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা ৯০ শতাংশ। এক জন সুস্থ মানুষ যদি মাস্ক পরেন, আর সংক্রমিত ব্যক্তি যদি মাস্ক না পরেন, সে ক্ষেত্রে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা ৩০ শতাংশ। দু’জনেই মাস্ক পরলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা মাত্র ১.৫ শতাংশ।’
সেই বৈঠকেই নীতি আয়োগের স্বাস্থ্য বিভাগের সদস্য ভিকে পাল বলেন, ‘সামাজিক দূরত্ববিধি যদি ৫০ শতাংশও মেনে চলা হয়, করোনা রোগীর থেকে মাত্র ১৫ জন সংক্রমিত হতে পারেন। দূরত্ববিধি যদি ৭৫ শতাংশ মেনে চলা হয়, সে ক্ষেত্রে এক জন রোগীর থেকে মাত্র আড়াই জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। তাই সকলকে অনুরোধ, প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরোবেন না। বাড়িতেও মাস্ক পরুন। এই সময় কাউকে বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাবেন না। মনে রাখবেন করোনাকে হারানোর একটাই উপায় সামাজিক দূরত্ব বজায়। মাস্ক পরা এবং পরিচ্ছন্ন থাকা। তাতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে দেয়।’
এদিকে, জাতীয় বিপর্যয়ে নীরব দর্শক হয়ে থাকতে পারে না কোর্ট। মঙ্গলবার এক মামলার শুনানিতে এভাবেই কেন্দ্রকে তুলোধোনা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে অক্সিজেন, টিকা এবং ওষুধ সরবরাহে সরকারের উদ্যোগ কী? এই সংক্রান্ত একটা স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের হয়েছে শীর্ষ আদালতে। সেই মামলার শুনানিতে এদিন এভাবে কেন্দ্রকে কটাক্ষ করেছে বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের ডিভিশন বেঞ্চ।
সেই বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘কোনও হাইকোর্টের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ করতে চায় না আদালত। বরং একজন সহযোগী হিসেবে কাজ করতে চায়।‘ এই বেঞ্চের অন্য দুই বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও এবং এস রবীন্দ্র ভাট।
শীর্ষ আদালতের মন্তব্য, ‘এই বিষয়ে মধ্যস্থতা করতে হাইকোর্টগুলো সুবিধাজনক জায়গায়া আছে। কিন্তু যেহেতু করোনা সংক্রমণ একটা জাতীয় ইস্যু, তাই এই বিপর্যয়ে আমরা চুপ করে বসে থাকতে পারি না।‘
এই মামলায় সরকার-আদালতের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আইনজীবী জয়দীপ গুপ্তা ও মীনাক্ষী অরোরাকে নিয়োগ করেছে সুপ্রিম কোর্ট।