হনুমান জয়ন্তীর ধর্মীয় মিছিল ঘিরে রণক্ষেত্রে চেহারা নিল দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরী। দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়েছে ব়্যাফ। দিল্লির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দিল্লি পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছেন। দিল্লি নিরাপত্তা সংক্রান্ত যাবতীয় দায়িত্ব কেন্দ্রের হাতে রয়েছে। এদিনের সংঘর্ষের পর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে দুষ্কৃতীরা ভাঙচুরও চালায়। রাত পর্যন্ত বেশ কিছু জায়গা উত্তপ্ত ছিল। বেশ কিছু এলাকায় কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে সংঘর্ষের কিছু সময় এলাকা ঘুরে দেখা যায়, তখনও সেখানে হিংসার রেশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। জাহাঙ্গীরপুরীর একটি মসজিদের সামনে রাস্তা ছিল একেবারেই শুনশান। রাস্তার আলো বন্ধ ছিল। দোকান পাট সব ছিল পুরোপুরি বন্ধ। এলাকার স্থানীয় কিছু মানুষ মসজিদের সামনে পাহারার দায়িত্বে রয়েছেন।
এই ঘটনার কয়েক ঘন্টা পর এলাকার স্থানীয় ইলেকট্রনিক ব্যবসায়ী সাজিদ সাইফি বলেন, “হামলার পরেও এই এলাকায় হিন্দু মুসলিম একসঙ্গে বসবাস করছি। আমাদের নিজেরদের মধ্যে কোন সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ নেই”।
আরও পড়ুন: তীব্র গরমে হাঁসফাঁস দশা থেকে মুক্তি, দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির পূর্বাভাস
স্থানীয় এক আইনজীবী বলেন, “আমরা এখানে হিন্দু মুসলিম সবাই বন্ধু। আমাদের বাবা, দাদারা একসঙ্গে শান্তিতে বসবাস করে এসেছেন। আমরাও এখানে শান্তিতে বাস করছি। মিছিলের মধ্যে থেকে কয়েকজন মসজিদের ওপরে ওঠার চেষ্টা করছিল এটা দেখে আমার খারাপ লাগছিল, কিছু বহিরাগত আমাদের এই অঞ্চলের শান্তি সম্প্রতি নষ্টের চেষ্টা করছে আমরা এটা হতে দেব না”।
পাপ্পু কুমার শনিবার রাতে তার বন্ধু আনিজ এবং নাসিফের সঙ্গে একসঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। পাপ্পুর কথায়, “এটা ভেবে খারাপ লাগছে আমরা একসঙ্গে হোলি খেলি, এরকম কিছু ঘটেছে ভেবে অবাক লাগছে”। এদিকে তার এক বন্ধু নাসিফের কথায়, কালী পুজোর সময়ে আমরা হিন্দু বন্ধুদের সঙ্গে উৎসবে সামিল হই। আমরা এক হিন্দু বন্ধু আছে যাকে দেখলেই আমি পন্ডিত বলে ডাকি। আমাদের একে অপরের মধ্যে কোন বিদ্বেষ অশান্তি নেই”।
তবে হিংসার জেরে এলাকায় আতঙ্ক বজায় রয়েছে। স্থানীয় এক মাছ ব্যবসায়ী কালু বলেন, “মাছ বিক্রি করে সংসার চালাই। কিন্তু পরিস্থিতি এখন এমন যে বাইরে বেরোতে ভয় পাচ্ছি বাড়ির বাইরে পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে”।
এদিকে এই ঘটনা প্রসঙ্গে পুলিশের তরফে জানান হয়েছে ‘শোভা যাত্রায়’পুলিশের অনুমতি ছিল। স্পেশাল সিপি দেবেন্দ্র পাঠক শনিবার গভীর রাতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা প্রতিটি বাড়িতে যাচ্ছি এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করছি। যে কোন গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ করছি। উভয় সম্প্রদায়ের শান্তি রক্ষা কমিটির সঙ্গে আমরা সব সময় যোগাযোগ রেখে চলেছি। একই সঙ্গে তিনি বলেন সংঘর্ষের ঘটনায় কয়েকজন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন এবং একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এলাকায় পুলিশ পিকেটিং বসানো হয়েছে”।
এদিকে দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরীর সংঘর্ষের ঘটনায় ইতিমধ্যেই ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের এক সিনিয়ার আধিকারিক এপ্রসঙ্গে জানিয়েছেন, 'হিংসার ঘটনায় আটজন পুলিশ কর্মী সহ ন'জন স্থানীয় বাসিন্দা আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ইতিমধ্যেই ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে'।