গত সপ্তাহে জালিয়াতি এবং প্রতারণার অভিযোগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) ভি কে সিংয়ের প্রাক্তন পলিটিক্যাল অ্যাটাচি শম্ভুপ্রসাদ সিংকে গ্রেফতার করেছে গাজিয়াবাদ পুলিশ।
মোট চারটি এফআইআর দায়ের করা হয় শম্ভুপ্রসাদের বিরুদ্ধে। এগুলির মধ্যে প্রথমটি দায়ের করা হয় মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব সুরজিত সিংয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে, যেখানে তিনি বলেছেন, শম্ভুপ্রসাদ “লোক ঠকিয়ে মাননীয় মন্ত্রীর নাম এবং ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করেছেন…নিজের পদের অপব্যবহার করেছেন… মাননীয় মন্ত্রীর স্টাফ হয়ে ছদ্ম পরিচয় দিয়েছন এবং জালিয়াতি করেছেন”, এবং “অবৈধভাবে নথিপত্রের অনধিকার দখল নিয়েছেন…যা মাননীয় মন্ত্রীর সম্পত্তি।”
গাজিয়াবাদের এসপি উপেন্দ্র আগরওয়ালের কাছে ২৬ এপ্রিল, ২০১৯ দায়ের করা ওই অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, “ছ’মাস” কাজ করার পর – যদিও শম্ভুপ্রসাদ ২০১৪ সালে নিযুক্ত হন – মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ আসতে থাকে যে শম্ভুপ্রসাদ “অবৈধভাবে টাকা উপার্জন করার” চেষ্টা করছেন। শম্ভুপ্রসাদকে এরপর হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয়, কিন্তু “কিছুদিন সংযত থাকার” পর তিনি ফের “জোর করে টাকা আদায়” করতে শুরু করেন। এমনকি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরেও তিনি তাঁর “অসাধু কীর্তিকলাপ” চালিয়ে যান।
আরও পড়ুন: সেনার গুলিতে নিহত পুলওয়ামা হামলার গাড়ির মালিক
তাঁর প্রাক্তন সহায়কের বিরুদ্ধে এই কঠোর অভিযোগ কিন্তু জেনারেল সিংয়ের পূর্বতন অবস্থানের সঙ্গে মিলছে না।
রেকর্ড ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, জালিয়াতি মামলায় গ্রেফতারির ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও শম্ভুপ্রসাদকে নিয়োগ করেন জেনারেল সিং; তাঁর প্রশংসা করে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির অধীন একটি শাখা সমিতিতে কোনও পদে নিয়োগ করার সুপারিশ করেন; এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে যেসব পুলিশ আধিকারিকরা জালিয়াতি এবং প্রতারণার মামলা এনেছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন জেনারেল সিং।
৬ জুন, ২০১৮ তৎকালীন বিদেশ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী জেনারেল সিং উত্তরপ্রদেশ বিজেপির প্রভাবশালী জেনারেল সেক্রেটারি (সংগঠন) সুনীল বনসলকে একটি চিঠি লেখেন, যাতে তিনি শম্ভুপ্রসাদের “কর্তব্যজ্ঞান, ন্যায়পরায়ণতা, আনুগত্য, এবং কর্মদক্ষতার” ভূয়সী প্রশংসা করেন। তাঁর সুপারিশ ছিল যেন শম্ভুপ্রসাদকে উত্তরপ্রদেশ বিজেপির সম্পাদক নিযুক্ত করে তাঁকে দলের ক্ষুদ্রশিল্প শাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়, রাজ্যে প্রধানমন্ত্রীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের উন্নতির স্বার্থে। এরপর শম্ভুপ্রসাদ উত্তরপ্রদেশ বিজেপির ক্ষুদ্রশিল্প শাখার সহ-আহ্বায়ক হিসেবে মনোনীত হন।
এর আগেও ২০১৭ সালের এপ্রিলে দিল্লির পুলিশ কমিশনার অমূল্য পট্টনায়ককে চিঠি লেখেন জেনারেল সিং। তাঁর লিখিত দাবি ছিল – দিল্লি পুলিশ অর্থনৈতিক অপরাধ শাখার দুজন আধিকারিকের বদলি, এবং একজন ইন্সপেক্টর ও দুই কন্সটেবলের সাসপেনশন। জেনারেল সিংয়ের বক্তব্য, ওই পাঁচজন ২০১৩ সালে প্রতারণা এবং জালিয়াতি সংক্রান্ত দুটি এফআইআর-এর মাধ্যমে “মিথ্যা” অভিযোগ আনেন শম্ভুপ্রসাদের নামে। দুটির মধ্যে একটি এফআইআর-এর ভিত্তিতে শম্ভুপ্রসাদকে ২০১৩ সালের মে মাসে গ্রেফতার করা হয়।
আরও পড়ুন: রাম বনাম বাংলা, তরজায় সরগরম লোকসভা
তাঁর চিঠিতে জেনারেল সিং আরও বলেন যে পুলিশ শম্ভুপ্রসাদকে গুয়াহাটি এবং শিলং নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে একজন ইন্সপেক্টর এবং দুজন কনস্টেবলের “আরামের” স্বার্থে “ফার্স্ট ক্লাস এসি ভাড়া দিতে বাধ্য করা হয়”। এছাড়াও মন্ত্রী দাবি করেন যে এই “হেনস্থা” সম্পর্কে দিল্লি পুলিশের দুই উচ্চপদস্থ অফিসারকে জানানো হলে তাঁরা কোনও ব্যবস্থা নেন নি, বরং ওই ইন্সপেক্টর এবং কনস্টেবলদের পুরস্কার দেওয়ার সুপারিশ করেন, যার ফলে তাঁদের “বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্সের সামগ্রী এবং পোশাকপরিচ্ছদ উপহার দেওয়া হয়”।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পট্টনায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অতিরিক্ত কমিশনার (অর্থনৈতিক অপরাধ শাখা) শুভাশিস চৌধুরি মন্ত্রীর চিঠির খবর নিশ্চিত করে জানান, “চিঠি পাওয়ার পর ঘটনার তদন্ত করা হয়, কিন্তু ওই পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করা যায় নি। আমরা মাননীয় মন্ত্রীকে আমাদের তদন্তের ফলাফল জানিয়ে দিই।”
বর্তমানে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে থাকা শম্ভুপ্রসাদকে ৫ জুন, ২০১৪ সালে পলিটিক্যাল অ্যাটাচি নিযুক্ত করেন জেনারেল সিং।
তাঁকে এ বিষয়ে একটি প্রশ্নাবলী পাঠানো হয় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তরফে। জবাবে জেনারেল সিংয়ের উকিল বিশ্বজিৎ সিং জানান, “আপনাদের জানিয়ে রাখা ভালো যে বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন এবং পুলিশি তদন্তসাপেক্ষ। কাজেই এ বিষয়ে কোনোরকম জল্পনামূলক, অসত্য, বা ইঙ্গিতপূর্ণ প্রতিবেদনের ওপর কড়া আইনি নজর রাখা হবে।”