ইউক্রেন ইস্যুতে ভারতের অবস্থান নিয়ে বারবার সমালোচনার সুর শোনা গিয়েছে আমেরিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের থেকে। ইউক্রেনের ভারত-বিরোধিতার একের পর এক নজির, আর রাশিয়ার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বকে মাথায় রেখে নিরপেক্ষ অবস্থান বিশ্বে তুলে ধরেছে নয়াদিল্লি। এবার যেন জবাব দেওয়ার পালা ভারতের। সেই জবাব দিলেনও বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। ইউরোপকে তাঁর কটাক্ষ, 'এশিয়ার দিকেও তাকান।' নয়াদিল্লির রাইসিনায় নরওয়ের বিদেশমন্ত্রী অ্যানিকেন হুইটফিল্ডের সঙ্গে বৈঠকে এই কটাক্ষ করেন জয়শংকর।
ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর ইউরোপ এবং আমেরিকা এমন ভাব করছে, যেন পৃথিবীতে আর কোনও সমস্যা নেই। যেন, একেবারে গেল গেল রব। অথচ, ইরাকে দীর্ঘদিন ধরে হামলা চালিয়েছে আমেরিকা। অতীতে ভিয়েতনামে চালিয়েছে। আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তান- এশিয়ার বিভিন্ন দেশে আমেরিকা এবং ইউরোপের দাদাগিরিই তো দেখেছে বাকি বিশ্ব। আর, এই সব দেশগুলো সাক্ষী থেকেছে অসংখ্য প্রাণহানি, ধর্ষণ, বোমাবর্ষণ মৃত্যু, জীবন আর ও সভ্যতার ধ্বংসের। কিন্তু, ঘরে আগুন লাগতেই যেন নাওয়া-খাওয়া ভুলে গিয়েছেন ইউরোপবাসী।
মঙ্গলবার কার্যত সেকথাই যেন স্পষ্ট করে দিয়েছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী। নরওয়ের বিদেশমন্ত্রীকে ইউক্রেন ইস্যুতে তিনি বলেন, 'আপনি ইউক্রেন সম্পর্কে বলছেন। আমার মনে আছে আফগানিস্তানে কী হয়েছিল। এক বছরও হয়নি। যেখানে বিশ্ববাসী গোটা নাগরিক সমাজকে বাসের নীচে ফেলে দিয়েছিল। এশিয়ায় আমরা নিজস্ব ধরনের কিছু প্রতিকূলতার মুখোমুখি হই। যা প্রায়ই নিয়ম-ভিত্তিক শাসনের ওপর প্রভাব ফেলে।' নরওয়ের বিদেশমন্ত্রীকে একথা বলার পাশাপাশি, লুক্সেমবার্গের বিদেশমন্ত্রী জিন অ্যাসেলবর্নকে জয়শংকর বলেন, 'যদি আমি সেই প্রতিকূলতাগুলোকে নীতির প্রেক্ষিতে বিচার করি, যখন এশিয়ার একটি নিয়ম-ভিত্তিক শাসন প্রতিকূলতার মধ্যে পড়ে, আমরা ইউরোপ থেকে পরামর্শ পাই, আরও বেশি ব্যবসা করার। আমরা অন্তত আপনাদের সেই পরামর্শ দিচ্ছি না। আর আফগানিস্তানে দেখান কোথায় নিয়মতান্ত্রিক শাসন আছে? আর, বাকি বিশ্ব সেখানে কী করছে!'
সুইডেনের প্রাক্তন সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী কার্ল বিল্ডটের এক প্রশ্নের জবাবে জয়শংকর বলেন, 'এটা কেবল ইউরোপ নয়। গোটা বিশ্বে ঘটছে। এটা ইউরোপের জেগে ওঠার জন্য একটা আহ্বান বলা যেতে পারে। গত এক দশক ধরেই সমস্যাটা ছিল। এটা বিশ্বের সেই অংশ যেখানে সীমানা নেই, সন্ত্রাস চলে। প্রায়ই, রাষ্ট্রের সাহায্যে সন্ত্রাসকে মদত দেওয়া হয়। এটি বিশ্বের এমন একটি অংশ যেখানে নিয়মনিষ্ঠ শাসন এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্রমাগত চাপের মধ্যে রয়েছে। আমি মনে করি এশিয়ার বাইরে বাকি বিশ্বেরও এই সব সমস্যার দিকে নজর দেওয়া দরকার।'
Read storyf in English