হরিদেবপুরের মুচিপাড়ায় ৭২ কাঠা ঘেরা জায়গায় বেশ কিছু প্যাকেটে মিলেছে মেডিক্যাল বর্জ্য পদার্থ। এই দাবি কলকাতা পুলিশের। যদিও পুলিশ এবং মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় প্রথমে বলেছিলেন প্যাকেটগুলিতে ১৪ টি ভ্রূণ রয়েছে। পরে বয়ান বদল করে পুলিশই। সূত্রের খবর, প্যাকেটে ছিল প্রাপ্তয়স্কদের ব্যবহৃত ডায়াপার। তাও যদি হয়, তাই বা কী করে এল? তাহলে কি মেডিক্যাল বর্জ্য নষ্ট করার নিয়ম মানা হচ্ছে না শহরে? কী বলছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী, অথবা দূষণ নিয়ন্ত্রন পর্ষদ বা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা?
মেডিক্যাল ওয়েস্ট থেকে সংক্রামক রোগ ছড়াতে পারে দ্রুত। ফলে সাধারণত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই নষ্ট করে দিতে হয় এই ধরনের বর্জ্য। যে নিয়ম অনেক ক্ষেত্রেই মানা হয় না বলে অভিযোগ। পরিবেশবিদ নব দত্তর অভিযোগ, "এটা নতুন কোনও ঘটনা নয়। শহরে যত্রতত্র মেডিক্যাল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। আমরা অনেক দিন থেকে বলছি। মুখ্যমন্ত্রী, দূষণ নিয়ন্ত্রন পর্ষদের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন হেল্থ সেক্রেটারির কাছে একাধিকবার অভিযোগ করেছি। বাইপাসের ওপরে মুকুন্দপুরে রাতের অন্ধকারে মেডিক্যাল বর্জ্য ফেলে দেওয়া হয়। মল্লিকবাজারে নোনাপুকুর ট্রাম ডিপোর পাশের গলিতে ফেলে দিয়ে যায়।" তাঁর আরও দাবি, "শয়ে-শয়ে, নার্সিং হোম, বেসরকারি ছোটখাটো তথাকথিত হাসপাতাল, ল্যাবরেটরি আছে। সেই মেডিক্যাল বর্জ্য যাচ্ছে কোথায়? আসল কথা হলো, সেটা নিয়মিত সাফ হচ্ছে না। এটা জানে সবাই।"
আরও পড়ুন: হরিদেবপুরে পাওয়া গেছে ভ্রূণ নয়, বর্জ্য পদার্থ, নাটকের ইতি
মেডিক্যাল বর্জ্য যে নিয়ম মেনে নষ্ট করা হয়নি, এমন অভিযোগ করলেন পরিবেশ বিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী। তাঁর অভিযোগ, "যে পদ্ধতিতে এই ধরনের বর্জ্য নষ্ট হওয়ার কথা তা হচ্ছে না। ঠিকভাবে মনিটরিং করা হয় না। নার্সিংহোম বা হাসপাতালের লাইসেন্স পাওয়ার সময়ই এই বিষয়টা ঠিক করতে হয়। অসংগঠিত ভাবে কাজ হচ্ছে। এভাবে যেখানে সেখানে এই ধরনের বর্জ্য সাঙ্ঘাতিক ক্ষতি করে। বিশেষ করে সংক্রামক ব্যাধির ক্ষেত্রে।"
কাজেই হরিদেবপুরে ভ্রূণের বদলে বর্জ্য বললেও বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না। স্বাতী দেবীর আরও অভিযোগ, "সরকারি হাসপাতালের সঠিক চিত্রটা খুবই ভয়ঙ্কর। নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে বর্জ্য ফেলার জন্য। কিন্তু ঠিকভাবে কেউ কাজ করছে না। এমনকী নথিভুক্ত সংস্থাকে পুরো দায়িত্ব দেওয়া হয় না। নিয়মিত ওই ওয়েস্ট নেওয়ার বদলে হয়ত সপ্তাহে একদিন নিয়ে যায়।"
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে। মন্ত্রী বলেন, "পুলিশ দেখছে তো। আমি এটা নিয়ে কোনও কথা বলব না।" তবে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র জানিয়ে দিলেন, "এভাবে মেডিক্যাল বর্জ্য বাইরে ফেলা ঠিক নয়। এতে ভাইরাস সৃষ্টি হয়। এসব ফেলবার নির্দিষ্ট ব্যবস্থা আছে। এমনভাবে ফেলা একেবারে ঠিক নয়।"
আরও পড়ুন: নীলরতনের চিকিৎসকদের নিঃস্বার্থ চেষ্টায় বাঁচল বৃদ্ধার প্রাণ
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, "কোনওভাবেই ৪৮ ঘণ্টার বেশি এই ধরনের বর্জ্য রাখা যায় না। টেম্পোরারি স্টোরেজ এলাকা থাকে। সেখানে রাখা থাকে। যে কোনও নার্সিং হোম বা হাসপাতালের ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি। এই বর্জ্য রাখার জন্য কালার কোডেড ব্যাগ আছে। লাল, নীল, হলুদ। আরও নানা ব্যবস্থা রয়েছে। মৃতদেহের ক্ষেত্রে বিশেষ প্যাকেটে যাবে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এটা মনিটর করে।" হরিদেবপুরের ঘটনা প্রসঙ্গে ওই কর্তা বলেন, "কোনমতেই বাইরে আসার কথা নয়। বাইরে পড়লেই তো সেখান থেকে ইনফেকশন ছড়াবে। যার জন্যই বায়ো-মেডিক্যাল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট করা। তাহলে সেটার দরকার কী ছিল?"
হরিদেবপুরে প্যাকেটে কী ছিল, তা নিয়ে এখনও বিভ্রান্তি, বিতর্ক রয়ে গিয়েছে। যে কোনো মেডিক্যাল বর্জ্য যত্রতত্র ফেলাও কিন্তু একটা অপরাধ। পুলিশ প্রশাসন তা জেনেও চুপ করে থাকবে কি?