গোবলয়ের গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোয় ভোট চলছে। আগামী বছর লোকসভা। এই পরিস্থিতিতে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গ থেকে শ্রমিকরা অক্ষতভাবে বেরোতেই হাঁফ ছাড়ল প্রশাসন। ১৭ দিন এই শ্রমিকরা আটকে ছিলেন উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে। সেসবে নজর না-দিয়ে প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খেলা নিয়ে মেতে ছিলেন। ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারতের পরাজয়ের পর এই অভিযোগ আরও জোরালো হয়েছিল। আঙুল উঠেছিল মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। যা বারবার বলেছে, শুধু কৃষক নয়। শ্রমিকদের প্রতিও এই সরকারের কোনও দায়বদ্ধতা নেই। সেই অভিযোগ থেকে মঙ্গলবারের উদ্ধার যেন প্রশাসনের পাস মার্ক এনে দিল।
আরও পড়ুন- উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে আটক বাংলার ৩, অপেক্ষায় পরিবার, কী পদক্ষেপ মমতার?
শ্রমিকরা সুড়ঙ্গ থেকে বেরোতেই ছুটে গেলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভিকে সিং। কেন্দ্রের আর পাঁচটা মন্ত্রীর মত নয়। যতই তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হন না-কেন, দেশের প্রাক্তন সেনাপ্রধান- এই শব্দগুলো ভিকে সিংয়ের সঙ্গে চিরকাল আঠার মত জুড়ে থাকবে। তাঁর দিকে সাধারণ রাজনীতিবিদের মত আঙুল তোলা দুষ্কর। উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের কাছে ভিকে সিংয়ের যাওয়াও যেন তাই নিরাপদ মনে করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। উদ্ধার সফল, সেই খুশিতেই ডগমগ প্রশাসন ফুলের মালা জোগাড় করতে দেরি করেনি। উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের বরণ করে নিয়েছে বীরের মত।
বিরাট উৎকণ্ঠায় এই ক'দিন কাটিয়েছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। উত্তরাখণ্ডের চারধাম সু়ড়ঙ্গ দিয়ে জুড়ছে মোদী সরকার। কোটি কোটি টাকার প্রকল্প। ভবিষ্যতে উত্তরাখণ্ডের পর্যটন নির্ভর অর্থনীতিকে মজবুত করতে এই প্রকল্পগুলো যেন তুরুপের তাস। উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকদের কারও কিছু হয়ে গেলে গোটা প্রকল্পগুলো নিয়েই তৈরি হত প্রশ্নচিহ্ন। যেমন প্রশ্ন গত বেশ কয়েকদিন ধরে বারবার উঠেছে। তা ক্রমশই জোরালো হচ্ছিল। তাতে বুকের ধুকপুকানি কি বাড়িয়ে দিয়েছিল উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর?
প্রশ্নটা উঠছে। কারণ, গত কয়েকদিন ধরে তিনি বারবার সব কাজ ফেলে ছুটে এসেছেন এই টানেলের কাছে। তাঁর কিছুই করার নেই। তবুও উদ্ধারকাজের পরিদর্শন যেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী দৈনিক রুটিন হয়ে উঠেছিল গত কয়েকদিন। মঙ্গলবারও দুপুর থেকেই ছিলেন টানেলের কাছে। সন্ধ্যায়, উদ্ধারকাজে রাতভর সময় লাগবে শুনে কিছুক্ষণের জন্য ফিরে গেছিলেন। তারপর ফের সাফল্যের খবর পেতেই আমলাদের নিয়ে ছুটে আসেন। শ্রমিকদের উদ্ধারের পর তাঁর খুশি ছিল দেখার মত। শ্রমিকদের জড়িয়ে ধরেছেন। ফুলের মালা পরিয়ে দিয়েছেন। যেন শুধু শ্রমিকরাই নন। তিনি পাথরের কোনও দেওয়াল কেটে বেরিয়ে এলেন।
আরও পড়ুন- শেষ পর্যন্ত এল সাফল্য, উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধার বাংলার তিন-সহ ৪১ শ্রমিক
আর, শ্রমিকরা? গত কয়েকদিন ধরে যাঁদের জীবন আর মৃত্যু মাদারির খেলার মতই ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল, তাঁদের কাছে এ যেন নতুন জীবন। পাথরের ধ্বংসস্তূপের মতই কঠিন নিরাশার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আলো দেখা। সেই চেনা পৃথিবীর দিকে পা বাড়ানো, গত ১৭ দিন যা তাঁদের জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছিল ধ্বংসস্তূপের পাথর-মাটি।