বাস দুর্ঘটনা রুখতে বাস মালিক সংগঠনগুলির কাছে নতুন প্রস্তাব দিলেন পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার পরিবহণ দপ্তরে এক বৈঠকে শুভেন্দুবাবু বাস মালিকদের কমিশন প্রথা তুলে দিয়ে বেতন প্রথা চালু করার প্রস্তাব দেন। এর ফলে পথ দুর্ঘটনা কমে যাবে বলে মনে করছে রাজ্য সরকার। পরিবহণ দফতরে এই মর্মে রিপোার্টও জমা দিয়েছে পুলিশ।
তবে মন্ত্রীর দেওয়া এই প্রস্তাবে বাস মালিকদের সংগঠন দ্বিধাবিভক্ত। এক পক্ষ মেনে নিলেও অন্য একটি সংগঠন বাসের কর্মীদের কমিশন প্রথা তুলে দেওয়ার তীব্র বিরোধিতা করছে।
কলকাতায় বাসের রেষারেষিতে দুর্ঘটনা হামেশাই ঘটে। পুলিশ মনে করছে, কমিশনের লোভে বাস চালকরা যাত্রী তোলা নিয়ে রেষারেষি করেন, যা দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ। পরিবহণ দফতরকে বিষয়টি জানানো হয়। পরিবহণ দফতর পুলিশের সঙ্গে সহমত পোষণ করে। এরপরই বৃহস্পতিবার বাস, মিনিবাস মালিকদের সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠক করেন পরিবহণমন্ত্রী।
১৯৯০ সালে বাম আমলেও একবার কমিশন তুলে দেওয়ার কথা উঠেছিল। কিন্তু অনেক আলোচনার পর পিছু হটতে হয়েছিল সরকারকে। কলকাতা, উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলী, এই পাঁচ জেলায় কমিশন প্রথা চালু রয়েছে। এদিন শুভেন্দুবাবু বলেন, কমিশন তুলে দিলে বাসের রেষারেষি বন্ধ হয়ে যাবে। তাহলেই দুর্ঘটনা কমে যাবে।
অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতি সরকারেরর প্রস্তাবকে সাধুবাদ জানিয়েছে। অন্যদিকে জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটস এই প্রস্তাব সম্পূর্ণ ভ্রান্ত বলে ঘোষণা করেছে।
সমিতির সাধারন সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, "পথ দুর্ঘটনা রোখার এটা একমাত্র পদক্ষেপ হলে কেন মানব না? আমরা সরকারের পাশে আছি।" তবে তাঁর মতে, দুর্ঘটনার আরও অনেক কারণ রয়েছে। যেমন, শহরের বহু জায়গায় ফুটপাথ বন্ধ থাকায় মানুষকে রাস্তায় নেমে হাঁটতে হয়, ফলে যান চলাচলের জায়গা কমে যাচ্ছে। আবার শহরতলি বা জেলায় যাত্রী সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে মানুষ অনেক সময়েই বাসের ছাদে উঠে বিপজ্জনকভাবে সফর করতে বাধ্য হন।
বাস সিন্ডিকেটের সাধারন সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও সরকারের এই চিন্তাভাবনার সঙ্গে ভিন্ন মত পোষণ করেন। তাঁর দাবি, দুর্ঘটনা দূর করতে প্রয়োজন সচেতনতা। তাঁর প্রশ্ন, "যেখানে কমিশন প্রথা নেই সেখানে কি দুর্ঘটনা ঘটে না? কমিশন প্রথা তো শুধু এখানে পাঁচ জেলায় চালু রয়েছে। দুর্ঘটনার দায় পুলিশ আর সরকার বাইপাস করে বেরিয়ে যাচ্ছে। কীভাবে কমিশন প্রথা তুলে বেতন প্রথা চালু করব সরকার তার গাইড লাইন দিক। আমরা গাইডলাইন চেয়েছি। ভাড়া ঠিক করে সরকার। ইউনিয়ন শ্রমিক দেয়। এই শ্রমিকরা মানবে কী না? কত সময় ধরে গাড়ি চলবে? এসব ঠিক করার ব্যাপার আছে।"
ক্ষুব্ধ তপনবাবু আরও বলেন, "সরকরি বাসে ১২০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়। আমাদের লোকসান হলে ৪২,০০০ গাড়ির ভর্তুকি কে দেবে? ব্যবসা লাটে উঠে যাবে। সরকার আবেগ নিয়ে চলছে। কোনও সচেতনতা বাড়াব না, পরিকাঠামো থাকবে না, তা হতে পারে না।"